এবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু করেছে সরকার

গ্যাসের পর এবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু করেছে সরকার। রমজানের পরই এ বিষয়ে গণশুনানির আয়োজন করতে পারে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। বিদ্যুতের দাম বাড়ানো ছাড়া আপাতত কোনো বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী। তবে এই যুক্তি মানতে নারাজ জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। বিইআরসির গণশুনানি নিয়েও প্রশ্ন আছে তাঁদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে দেশে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় উৎপাদন মূল্য ৫ টাকা ৫৯ পয়সা। এর সঙ্গে যোগ হয় সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যয়। সব মিলিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়ে গড়ে ৬ টাকা ৭৩ পয়সা।

এই দাম আবার বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। পাইকারি পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ গড়ে ১৫ শতাংশ অর্থাৎ ৭২ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ৮ থেকে ১২ শতাংশ অর্থাৎ গড়ে প্রায় এক টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব জমা দেওয়া হয়েছে বিইআরসিতে।

এর আগে ২০১০ সালের পয়লা মার্চ থেকে ২০১৫ সালের পয়লা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় বছরে পাইকারি পর্যায়ে ছয়বার এবং খুচরা পর্যায়ে সাতবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দেওয়া প্রস্তাব অনুযায়ী এবার দাম বাড়ানো হলে খুচরা পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় দাম হবে প্রায় ৭ টাকা ৭১ পয়সা।

বিদ্যুতের অন্যতম প্রধান জ্বালানি গ্যাস। মার্চে গ্যাসের দাম বাড়ায় বিদ্যুতেরও দাম বাড়ানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। তিনি এনটিভিকে বলেন, ‘জ্বালানি যেটা র ম্যাটারিয়াল (কাঁচামাল) বিদ্যুতের ক্ষেত্রে এবং সে গ্যাস, তার ওপর থেকে সাপ্লিমেন্টারি ডিউটিটাকে (সম্পূরক কর) সরাতে হবে। ৪১ শতাংশ এই ডিউটি সাপ্লিমেন্টারি এইটা আমি মনে করি সরানো উচিত। আমরা ভ্যাট দিচ্ছি, ট্যাক্স দিচ্ছি আবার সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি দিচ্ছি, যার জন্য জ্বালানি খাতে মূল্যটা সব সময় উচ্চর দিকে থাকতেছে। এটা কমফোর্ট প্রাইসে (সহনশীল দাম) থাকত, যদি আমরা সাপ্লিমেন্টারিটা সরাতে পারতাম।’

‘সাপ্লিমেন্টারি সেটাই হয়, যেটার ব্যাপারে আমরা নিরুৎসাহিত করি। তো, গ্যাসের…সেটা আমরা নিরুৎসাহিত করতে চাই না। বিষয়টা বিবেচনা করার জন্য আমরা সরকারের কাছে, ফাইন্যান্সে (অর্থ বিভাগ) লেখেছি।’

এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চিঠি দিয়েছি বিষয়টা নিয়ে জানানোর জন্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে আমি আলাপ করেছি।’

ফেব্রুয়ারিতে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সময় বিইআরসির মূল্যায়নেই বলা হয়েছিল, দুই ধাপে গ্যাসের মূল্য বাড়লে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় বাড়বে ৩৪ পয়সা। কিন্তু তেলের দাম কমায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয়ও কমেছে ৩৪ পয়সা। তাই গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুৎ উৎপাদনে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, দেশের বাজারে তেলের দাম আরো কমানোর সুযোগ সরকারের হাতে রয়েছে।

এ বিষয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘যে অসংগতিগুলো থাকার কারণে, অসংগতি বজায় রেখে বিদ্যুতের দামবৃদ্ধির প্রস্তাব তৈরি করা হইছে এবং ঘাটতি দেখানো হচ্ছে, সেগুলো আমরা যৌক্তিক মনে করছি না।’

‘বিদ্যুতের দামবৃদ্ধির প্রস্তাব যখনই সরকার আনে, বিইআরসি হেয়ারিংয়ে (গণশুনানি) যায়। আমরা কমানোর কোনো প্রস্তাব নিয়ে গেলে বা আমরা আপত্তির কোনো প্রস্তাব নিয়ে গেলে, সেটা গণশুনানিতে আসে না। বৈষম্যটা বজায় রেখে, অসমতা সৃষ্টি করে আপনি কোনো বিচার করতে পারবেন না। …অসমতা সৃষ্টি করে বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করাটাকে তো আমরা বিচারিক প্রক্রিয়া হিসেবে মানতে পারি না।’

বিইআরসিতে গণশুনানির পর আগস্ট মাস থেকে বিদ্যুতের নতুন দাম কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা আছে। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে ৫ শতাংশ অর্থাৎ গড়ে ৩৪ পয়সা করে।