এশিয়া কাপ: বাংলাদেশের দল নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন

এশিয়া কাপের বাঁচা মরার ম্যাচে আফগানিস্তানকে ৩ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ।

শুরুতে ব্যাট করে বাংলাদেশ ২৪৯ রান তোলে। তবে এদিনও টপ অর্ডার সফলতা পায়নি।

লিটন দাস ৪৩ বলে ৪১ রান করলেও, নাজমুল হোসেন শান্ত অফ স্টাম্পের বাইরের বল তুলে মারতে গিয়ে আউট হন।

মোহাম্মদ মিথুন ও সাকিব আল হাসান ব্যাটিং এ তেমন ভূমিকা রাখতে পারেননি।

এরপর ইমরুল কায়েস ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ জুটি গড়ে দলকে বিপর্যয় থেকে টেনে একটা সম্মানজনক সংগ্রহের কাছাকাছি নিয়ে যায়।

ইমরুল কায়েস একজন ওপেনিং ব্যাটসম্যান হলেও, এদিন তিনি ছয় নম্বরে ব্যাট করতে নামেন।

বর্তমান নির্বাচক হাবিবুল বাশার কী বলছেন?

বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান নির্বাচক হাবিবুল বাশার বলছেন, “ইমরুল কায়েস ওপেনিং ব্যাটসম্যান। তবে দলের প্রয়োজনে সে ছয় নম্বরে নেমেছে এবং সেটা কাজে লেগেছে।”

লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক, এই তিনজন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান এবারে তামিম ইকবাল না থাকায় সুযোগ পেয়েছেন। তবে ঠিক জ্বলে উঠতে পারেন নি কেউ।

তবে এখনই তামিম-সাকিব না থাকলে কী হবে সেটা নিয়ে আলোচনা করা পছন্দ নয় বলেছেন হাবিবুল বাশার।

তিনি বলেন, “আমার বিশ্বাস ওরা আরো পাঁচ-ছয় বছর খেলবে এবং এর মাঝেই শুধু সৌম্য সরকার বা লিটন কেনো? আরো অনেক ক্রিকেটার উঠে আসবে।”

নাজমুল হোসেন শান্ত টানা তিন ম্যাচে ব্যর্থ হয়েছেন। এখানে প্রশ্ন উঠেছে যে শান্ত’র অভিষেক কী সঠিক সময়ে হয়েছে?

মি. বাশার বলছেন, “আন্তর্জাতিক ম্যাচে চাপ থাকবেই, বয়সভিত্তিক ও ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ খেলেই শান্ত জাতীয় দলে জায়গা পেয়েছে। হাথুরুসিংহে, স্টুয়ার্ট ল শান্তকে খুব পছন্দ করতেন। ব্যাপারটা এমন নয় যে তিন ম্যাচ খারাপ খেলা মানেই ওকে দিয়ে আর হবে না।”

সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ কী বলছেন?

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ মনে করেন, দল ভালো করলেও নির্বাচন প্রক্রিয়া ঠিক থাকা জরুরী।

তিনি বলেন, “হ্যা ম্যাচ জিতেছে, ছয় নম্বরে নেমে ইমরুল ভালো খেলেছে। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে ইমরুলকে আগে কেনো নেয়া হয়নি।”

মি. আহমেদ যোগ করেন, “তামিম যখন আহত হলেন তখনই প্রয়োজন ছিল বিকল্প ভাবা, সেটা না করে দেরিতে করলাম। তার মানে এটা দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নয়, এটা কোনো দলের জন্যই ভাল কিছু বয়ে আনবে না।”

মুমিনুল হক ছিলেন, মোসাদ্দেক সৈকতকেও সুযোগ দেয়া হয়েছে। তবে সেখানে ওয়ানডেতে একজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার প্রয়োজন ছিল যেটা ইমরুল করে দেখিয়েছেন।

তরুণ ক্রিকেটারকে সুযোগ দেয়ার প্রক্রিয়াটা কী সঠিক?

ফারুক আহমেদের মতে, যেকোনো তরুণ ক্রিকেটারকে অনুকূল পরিবেশে অভিষেক করানোটা উচিৎ। শান্তকে টেস্ট অভিষেক হয়েছে নিউজিল্যান্ডে, এটা যেকোনো ব্যাটসম্যানের জন্য কঠিন। অভিষেক বাংলাদেশের মাটিতে একটু সহজ প্রতিপক্ষের বিপক্ষে হলে খুবই ভালো হয়।”

“নিউজিল্যান্ডে চারটা ছেলের ডেব্যু হলো, আবার বাদ পড়েছে আবার দলে নেয়া হয়েছে”

নির্বাচকদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়াটা জরুরী বলে মনে করেন ফারুক আহমেদ। দুজন ক্রিকেটার যেভাবে দলে জায়গা পেয়েছে এই প্রক্রিয়াটা আসলে ভেঙ্গে পড়েছে বলে মনে করেন তিনি।

নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রিকেট ভক্তদের প্রতিক্রিয়া

মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম নামের একজন লিখেছেন, “১৬ সদস্যের ভিতরে না থাকা খেলোয়ার কীভাবে হঠাৎ করে ৭২ রান করে। দল নির্বাচকের সমস্যা আছে। একে পরিবর্তন করতে হবে।”

মূলত ইমরুল কায়েসের অন্তর্ভূক্তির কথা বলেন এই পাঠক।

অন্যদিকে মোহাম্মদ এনামুল কায়েস সজীব মন্তব্য করেন, “বাংলাদেশের যে সকল মানুষ খেলা বুঝে তাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষই নির্বাচক। তাই নির্বাচকরা আজ টালমাটাল।”

“যদিও লিটন ফর্মে নেই তবুও লিটনকে দলে রাখা প্রয়োজন। আগামী ম্যাচে শান্তকে বাদ দিয়ে সৌম্যকে দলে নিলেই হবে। খেলায় হার জিত থাকবেই।” লিখেছেন কনক দাস।

লিটন দাস আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৪১ রানের একটি ইনিংস খেলেছেন।

মোহাম্মদ রুহুল আমিন লিখেছেন, “উদ্ভট এক উটের পিঠে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। লিটন আর শান্ত বারবার ব্যর্থ হবার পরেও কেন এদেরকে দলে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে…!!! কেন ইমরুল কায়েসকে দলে আগে নেওয়া হয়নি..!!! ছয় সাত নাম্বার ব্যাটিং পজিশনে তো নাসির হোসেনই বেস্ট ছিলো,তাকে কেন দলে বেড়ানো হয়নি..!!আমি বোর্ড সভাপতি ও নির্বাচকদের পদত্যাগ দাবি করছি।”

-বিবিসি বাংলা