এ বছর তৃতীয় সন্তানের বাবা হতে চান মেসি

অন্তত সাতটি সন্তানের পিতা হতে চান ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। এরইমধ্যে রিয়াল মাদ্রিদের এই তারকার ঘর আলোকিত করেছি দুই ছেলে আর দুই মেয়ে। এবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি রোনালদোর সাথে পাল্লা দিয়ে আরও সন্তান চান বার্সেলোনার তারকা লিওনেল মেসি। নতুন বছরে আরও সন্তান চান আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। ফিফা ডট কমকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তেমনটি জানিয়েছেন এলএম টেন।

সাক্ষাৎকারে আসন্ন রাশিয়া বিশ্বকাপ নিয়েও কথা বলেন লিওনেল মেসি। ঘোচাতে চান বিশ্বকাপ জিততে না পারার অতৃপ্তি। আসুন দেখে নেওয়া যাক কী বললেন বার্সেলোনার মহাতারকা।

প্রশ্ন: আগামী বিশ্বকাপে সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়নদের তালিকায় ব্রাজিল এবং জার্মানির সঙ্গে আর্জেন্টিনাকে রাখবেন কী?
মেসি: অবশ্যই। বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে একাধিক কোচের প্রশিক্ষণে খেলতে হয়েছে আমাদের। তা সত্ত্বেও এই রাউন্ডের চ্যালেঞ্জ আর্জেন্টিনা অতিক্রম করেছে। জুনের আগে মানসিক ও শারীরিকভাবে দল আরো ভালো জায়গায় থাকবে। ফুটবলারদের বুঝে নেওয়ার জন্য সময় দিতে হবে নতুন কোচ জর্জ সাম্পাওলিকে। আমার ধারণা, আগামী কয়েক মাসে উনি জাতীয় দলকে অন্য স্তরে পৌঁছে দিতে পারবেন।

প্রশ্ন: রাশিয়া বিশ্বকাপে চিলির অনুপস্থিতিতে কি আপনি বিস্মিত?
মেসি: হ্যাঁ, বাকিদের মতো আমিও বিস্মিত। পরপর দু’বার কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন চিলির বিশ্বকাপের মূলপর্বে উঠতে না পারাটা দুঃখজনকও বটে। ধারাবাহিকভাবে জয়ের পথে চলা ওরা অভ্যাসে পরিণত করেছিল। দুনিয়া কাঁপানো একাধিক ফুটবলার রয়েছে চিলি দলে। তবে এটাও সত্যি যে, ওদের বিদায় প্রমাণ করে লাতিন আমেরিকান জোনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কতটা তীব্র। ব্রাজিল ছাড়া বাকি প্রত্যেকটি দল মূল পর্বে পৌঁছানোর ব্যাপারে শেষ পর্ব পর্যন্ত অনিশ্চয়তায় ভুগেছে।

প্রশ্ন: ব্রাজিল বিশ্বকাপে রানার্স হওয়ার যন্ত্রণা কি ভুলতে পেরেছেন?
মেসি: না। কীভাবে এই দুঃখ ভোলা যায় তা আমার জানা নেই। সারাজীবন সম্ভবত যা বয়ে বেড়াতে হবে। ব্রাজিল বিশ্বকাপে প্রচুর সুখস্মৃতিও রয়েছে। তবে ফাইনালের ফল আমাদের পক্ষে ছিল না। সকলেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চেষ্টা করেছিলাম বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার। কিন্তু শেষ চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করা সম্ভব হয়নি।

প্রশ্ন: তিরিশ বছরে পা দেওয়ার অনুভূতি কীরকম? এই বয়সে যেখানে থাকতে চেয়েছিলেন ঠিক সেখানেই কী আছেন?
মেসি: সত্যি কথাটা বলেই ফেলি। তিরিশ বছরে পা দেয়ার সময় নিজের অনুভূতি কীরকম ছিল তা ভাবার অবকাশই পাইনি। তবে ফুটবল এবং ব্যক্তিগত জীবনে আমি প্রচণ্ড সুখী। মাঠ এবং মাঠের বাইরে দিব্যি রয়েছি। এই মুহূর্তে যে জায়গায় রয়েছি তাতে খুশি না হওয়ার কারণ নেই।

প্রশ্ন: ফুটবল পরিবর্তনশীল। আপনার ক্রীড়াশৈলীতেও কি তার ছোঁয়া লেগেছে?
মেসি: নিশ্চয়ই। যুগের সঙ্গে তাল না মেলাতে পারলে আপনাকে পিছিয়ে পড়তে হবে। অনেক দিন ধরেই খেলছি। তাই ফুটবলের পরিবর্তনগুলো আমার কাছে সুস্পষ্ট। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে পরিণতিবোধ। এখনো প্রতিদিন নতুন কিছু করার চেষ্টা থাকে। তবে লক্ষ্যে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন আসেনি। দলকে জেতানোই আমার লক্ষ্য ছিল, আছে এবং থাকবে।

প্রশ্ন: ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে নিজের পারফরম্যান্সকে কোন জায়গায় রাখবেন?
মেসি: এই জয় ফুটবলপ্রেমীদের মতো আমাকেও তৃপ্তি দিয়েছে। ইকুয়েডরকে না হারাতে পারলে বিশ্বকাপের মূলপর্বে পৌঁছানো যেত না। আর্জেন্টিনার ফুটবলপ্রেমীরা তাই যথেষ্ট দুশ্চিন্তায় ছিলেন। প্রথমে পিছিয়ে পড়েও যেভাবে আমরা জয় তুলে নিয়েছি তা সত্যিই প্রশংসনীয়। ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে আমি হ্যাটট্রিক পেলেও জয় এসেছে দলগত সংহতিতে। সবচেয়ে বড় কথা, বিশ্বকাপের মূলপর্বে না পৌঁছানোর যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়নি আর্জেন্টিনাবাসীদের।

প্রশ্ন: বিশ্বকাপের মূলপর্বে উন্নীত হওয়ার পরে কোচ জর্জ সাম্পাওলি বলেছিলেন, ফুটবলের উচিত এবার মেসিকে বিশ্বকাপ উপহার দেওয়া। ওঁর এই বক্তব্য শুনেছেন? কী প্রতিক্রিয়া?
মেসি: হ্যাঁ, শুনেছি। সাম্পাওলি আমাকেও এই একই কথা বলেছেন। আশা করি, ফুটবল মেসিকে এই উপহারও দেবে (হাসি)।

প্রশ্ন: রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ণ কী?
মেসি: গ্রুপ পর্বে আইসল্যান্ড, ক্রোয়েশিয়া এবং নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে খেলতে হবে আমাদের। তিনটি দলই প্রচণ্ড সংঘবদ্ধ। তাই সতর্ক থাকতে হবে। আইসল্যান্ড লড়াকু ফুটবল খেলে। বিনা যুদ্ধে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়বে না ওরা। ক্রোয়েশিয়ায় একাধিক দক্ষ ফুটবলার রয়েছে। ইভান র‌্যাকিটিচ, লুকা মডরিচ, ম্যাটিও কোভাসিচরা ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে ম্যাচের রং বদলে দিতে পারে। আর আফ্রিকার সুপার পাওয়ার নাইজেরিয়া বড়ই আনপ্রেডিক্টেবল। গ্রুপ পর্বের চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করার জন্য সেরা পারফরম্যান্স মেলে ধরতেই হবে আমাদের।

প্রশ্ন: বিশ্বকাপ নিয়ে অনেক কথাই হল। এবার একটি বাক্য সম্পূর্ণ করার দায়িত্ব আপনার। ২০১৮ সালে লিওনেল মেসি হতে চান….
মেসি: (একটু ভেবে) আমি তৃতীয়বার বাবা হতে চাই।