এ যেন এক অচেনা শরৎ, তাপমাত্রা ৩৬ ছাড়িয়ে!

‘আশ্বিন, গাও করে শিনশিন’। খনার বচনের এমন উক্তি যেন আজ অপাঙক্তেয়। যে আশ্বিনে গায়ে খানিক হিম ভর করবে, সেই আশ্বিনে শরীর থেকে ঘাম ঝরছে দরদর করে। বয়জ্যেষ্ঠরা বলছেন, এমন আশ্বিন তারা দেখেনি কখনো! দিন কী রাত, সারাক্ষণই যেন কুপোকাত! ঘরের জ্বালা জুড়াতে বাইরে আসলে আরও বাড়ে। অসহ্য গরমে দিনের শুরু, আর গরম বাড়িয়েই দিনের শেষ। এ যেন এক অচেনা শরৎ।

বুধবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় সর্বোচ্চ ৩৬.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করছে আবহাওয়া অফিস। ভোর ৬টায় ২৯.৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা দিয়ে দিনের শুরু হয়। সকাল ৯টা বাজতেই ৩২.২ ডিগ্রিতে বৃদ্ধি পায়। আর দুপুর না গড়াতেই তাপমাত্রা বেড়ে ৩৫-এর কোটা পেরিয়ে যায়। তাপমাত্রা কমবে, আপাতত তার কোনো ইঙ্গিতও মিলছে না।

ঋতু রাজ্যে শরৎ আসে অন্তহীন রূপের খেলা নিয়ে। প্রকৃতি রঙ্গের খেলায় মেতে ওঠে। বর্ষণ বিধৌত প্রকৃতি। তবে বর্ষার নিদারুণ সর্বনাশটুকু থাকে না ভাদ্র-আশ্বিনের প্রেমমেলায়। মেঘমুক্ত আকাশ, তাতে সাদা মেঘের খানিক লুকোচুরি। সুউচ্চ শরৎ আকাশে আলো-ছাঁয়ার খেলা থাকে ক্ষণে ক্ষণে। নদী তীরে কাঁশফুলের মনকাড়া ছোঁয়া। প্রভাতে তৃণপল্লবে সূর্যকণার হেয়ালিপনা। শুভ্র জ্যোৎস্নায় মাধবী রাত্রী।

সবই তো এলো! তবে কোথায় যেন শরৎ রূপ ফ্যাকাশে হয়ে আছে। আছে বৈকি! গ্রীষ্মের দাবদাহ শরতের মিষ্টি রোদকে রীতিমতো ম্লান করে দিল এবারে।

বর্ষা বেলাতেই সূর্যের তেজ কমার কথা। কমলো না। তাই বলে শরতেও থাকবে! যেন ঋতু পরিবর্তনের ধারাপথে ঘোর লেগেছে। জৈষ্ঠের সূর্য যেন ভাদ্র-আশ্বিনে এসে মাথার উপরে খাড়া। অসহনীয় গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। বৃষ্টি আছে, বৃষ্টি নেই। অথচ গরমের কোনোই কমতি নেই।

ভাদ্র-আশ্বিনে অনবরত বারিধারা শরতের রূপ বাড়ায়। এবার বৃষ্টিও কম। নদীতে পানি বাড়ছে সবে। তবে আকাশে মেঘ নেই। শরতের শেষ বেলায় বৃষ্টির ঘনঘটা থাকবে কি-না তারও কোনো ইঙ্গিত মিলছে না। খনার বচনে আছে ‘উনো বর্ষায় দিনো শীত’। বর্ষার তেজ তো কম ছিল, তবুও তো উষ্ণতা কমছে না। কাঠফাটা রোদে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে নগরজীবন। আর ভ্যাপসা গরমে যন্ত্রণাময় হয়ে উঠছে রাত্রীযাপনও। গরমের এই বাড়াবাড়িই যেন এবারে শরৎকে খানিক রূপহীন করে রেখেছে।

শরতের চলমান আবহাওয়াকে বৈরীই বললেন ঢাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী। দক্ষিণ বাড্ডার একটি স্কুলের শিক্ষক মোহাম্মদ আলী বলেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটছে, তা সহজেই বোঝা যাচ্ছে। আশ্বিন মাসে গরম থাকে বটে। কিন্তু এভাবে দিনের পর দিন গরম দেখিনি। বৃষ্টি যা হচ্ছে, তাতে গরমের হেরফের হচ্ছে না।