ওসি মোয়াজ্জেমের হাতে হাতকড়া নেই কেন?

গুরুতর অভিযোগ নেই, একেবারেই সাধারণ মানুষ, সমাজে প্রতিষ্ঠিত- এমন মানুষদেরকে আদালতে হাজির করার সময়ও পুলিশ হাতকড়া পরায়। কখনো কখনো কোমড়ে রশি বেঁধে সমালোচিতও হয়েছে তারা। অথচ ফেনীর সোনাগাজী থানার বরখাস্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেনকে আদালতে হাজির করার সময় তাকে ‘মুক্ত’ অবস্থায় নিয়ে গেছে পুলিশ। এটা পুলিশের পক্ষপাত কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। খবর ঢাকাটাইমসের।

ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ২০ দিন পর রবিবার রাজধানী ঢাকা থেকে আটক হন তিনি। আইনের কর্মকর্তা হয়েও আদালতের আদেশের প্রতি সম্মান না দেখিয়ে পালিয়ে যাওয়া এই কর্মকর্তা এই ‘সম্মান’ পেতে পারেন কি না, এ নিয়ে এরই মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে।

সোমবার মোয়াজ্জেমকে ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে হাজির করার সময় ওসি মোয়াজ্জেমের বেশভুষা ছিল পরিপাটি। গেঞ্জি পরে ছিলেন। সঙ্গে ছিল কালো একটি সানগ্লাস। তার চেহারায় কোনো উদ্বেগ ছিল না। এত দিনের না কাটা দাড়িগুলোতেও ছিল যত্নের ছাপ।

ওসি মোয়াজ্জেমকে পুলিশের এই ‘খাতির করা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গণমাধ্যমকর্মী শহিদুল ইসলাম। তিনি লিখেন, ‘হাজার হাজার মিথ্যা মামলার আসামিদের হাতকড়া পরিয়ে আদালতে তোলার নজির পুলিশের অভাব নেই। অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি, বয়োবৃদ্ধ, অসুস্থ ব্যক্তিকে হাতকড়া পরানো খবর বহুবার গণমাধ্যমে এসেছে। কিন্তু ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন গুরুত্বপূর্ণ একটি মামলার আসামি হয়েও তাকে আজ হাতকড়া পরায়নি পুলিশ।’ ওসি মোয়াজ্জেমের প্রতি এই আচরণ পক্ষপাত কি না- জানতে চাইলে কল করলে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা অঞ্চলের উপ কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ‘ওটা ওসিকে জিজ্ঞাসা করেন। আমি কি থানায় বসে এসব দেখব?’

এ ব্যাপারে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসান বলেন, ‘প্রিজন ভ্যানে কোন আসামিকে হাতকড়া পড়ানো হয় না। আপনি আগে ভালো করে জানেন। ধন্যবাদ।’

মানবাধিকারকর্মী এলিনা খান বলেন, ‘কোনো ব্যক্তিকে হাতকড়া পরাতে হবে কি না তার সুনির্দিষ্ট কোনো আইন নেই। তবে আমাদের দেশে সাধারণত পুলিশ অপরাধীদের হাতকড়া পরিয়ে থাকে। তাহলে মোয়াজ্জেম হোসেনকে কেন পরানো হলো না এটা একটি প্রশ্ন। এক্ষেত্রে পুলিশের একটি পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ দেখা যায়। সকল ব্যক্তিকে হাত কড়া পরানো হলেও মোয়াজ্জেমকে কেন নয়?’

ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত গত মার্চ মাসে তার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করলে ওসি মোয়াজ্জেম তাকে থানায় ডেকে জবানবন্দি নিয়েছিলেন। তার কয়েক দিনের মাথায় নুসরাতের গায়ে অগ্নিসংযোগ করা হলে সারাদেশে আলোচনা শুরুর হয়। তখন ওই জবানবন্দির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ উঠে, ওসি মোয়াজ্জেম ওই ভিডিও বেআইনিভাবে ধারণ করে ফেসবুকে ছেড়ে দিয়েছেন।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাতের মৃত্যু হলে গত ১৫ এপ্রিল ওসি মোয়াজ্জেমকে আসামি করে ঢাকায় বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ওই অভিযোগের সত্যতা পায়। এরপর সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের বিচারক আস সামছ জগলুল হোসেন গত ২৭ মে মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

নুসরাতের মৃত্যুর পর ওসি মোয়াজ্জেমকে প্রথমে সোনাগাজী থানা থেকে প্রত্যাহার করে রংপুর রেঞ্জে পাঠান হয়। পরে তাকে বরখাস্ত করা হয় পুলিশ বাহিনী থেকে।

কিন্তু আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিলে তা তামিল করা নিয়ে ফেনী ও রংপুর পুলিশের মধ্যে বেশ কয়েক দিন ঠেলাঠেলি চলে। এই সুযোগে পালিয়ে যান মোয়াজ্জেম।