কবি আবদুল হাই ইদ্রিছীর পিতার ১ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

জাতীয় কবিতা মঞ্চ এর মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি, মাসিক শব্দচর সম্পাদক, উদীয়মান কবি, ছড়াকার, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক আবদুল হাই ইদ্রিছী’র পিতা আলহাজ্ব মাওলানা ইদ্রিছ আলীর প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী আজ।

আলহাজ্ব মাওলানা ইদ্রিছ আলী একজন আলেমে দ্বীন এবং আদর্শ শিক্ষ ছিলেন। কর্মজীবনে তিনি দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তাঁর শত শত ছাত্র-ছাত্রী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত।

তিনি ২০১৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর রাত ১.৩০ ঘটিকায় ৭৫ বছর বয়সে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার পতনউষার ইউনিয়নের রামেশ্বরপুর গ্রামে নিজ বাস ভবনে ইন্তেকাল করেন।

পিতার ইন্তেকালের প্রথম বার্ষিকীতে কবি আবদুল হাই ইদ্রিছী ফেসবুকে লিখেন-

“আজ সেই ভয়ঙ্কর রাত, যে রাতে এতিম হয়েছিলাম আমরা। আমাদের চোখের সমনেই আজরাঈল কেঁড়ে নিয়েছিলো আমার প্রিয় বাবার প্রাণটা। সারা দিন সেই দৃশ্যটা চোখের সমনে ভেসেছিলো তাই মনটা ভীষণ খারাফ ছিলো। হাতের কাজ ফেলে রেখে অফিস থেকে তারাতারি বাড়িতে মায়ের কাছে চলে এসেছি। গত বছর (১৭ ডিসেম্বর ২০১৭) এই দিনের এই সময়েও প্রিয় বাবা আমাদের মাঝে ছিলেন। যদিও তখন তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিলো তবুও আমাদের আশা ছিলো তিনি আরো অনেক দিন অামাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন। কিন্তু সময় যত যেতে থাকলো বাবা অবস্থারও তত অবনতি হতে লাগলো। মা তখন খুব বেশী অসুস্থ ছিলেন। বাবার অবস্থা খারাফ দেখে মাকের ধরে ধরে এনে বাবার সামনে একটি চেয়ারে বসালাম। আমরা চার ভাই বোন, একজন ফুফু, চাচাতো বোন, ফুফুতো বোন, আমার বড় ভাগনাসহ আরো কয়েকজন আত্নীয় বাবার চারিদিকে বসেছিলাম। সবাই কুরআন তেলাওয়াত করছিলেন এবং আমি তখন বাবাকে কালেমা শুনাচ্ছিলাম আর একটু পরপর জমজমের পানি বাবার মুখে দিচ্ছিলাম। রাত ১.৩০টার দিকে দেখতে পেলাম অনেক দিন থেকে ব্যকে থাকা বাবার পাটা সোজা হয়ে গিয়েছে। হাত দিয়ে দেখি পা ঠান্ডা হয়ে গেছে। বুকটা ধরফর করছে, তখন অামি আর আশা রাখতে পারিনি। মনে হচ্ছিলো আমার বুকের উপর পাথর চাপা পরে কলিজাটা ফেটে যাচ্ছে তবুও নিজেকে সামলে রাখার চেষ্টা করছিলাম। কারণ আমি ভেঙ্গে পড়লে ভাই বোনদেরকে সামলানো যাবে না। বাবা তখন হা করে মুখ দিয়ে শ্বাস নিচ্ছিলেন। তাঁর বুকটা লাফাচ্ছিলো কিন্তুু মুহুর্তের মধ্যেই তিনি নিরব হয়ে গেলেন। তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে জিহ্বা নাড়তে দেখে বুঝতে পারলাম তিনি কালেমা পড়তেছেন। মুখের কাছে কান লাগিয়ে তাই শুনতে পেলাম। এরই মধ্যে তাঁর ঠোঁটের কোনে হাসির ঝিলিক ফোঁটে উঠেই মুখটা বন্ধ হয়ে গেলো। হায়! আমাদের চোখের সামনেই আমাদেরকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে তিনি চলে গেলেন মহান প্রভূর সান্নিধ্যে। আমরা চিরদিনের জন্য এতিম হয়ে গেলাম। বঞ্চিত হলাম বাবা আদর সোহাগ ভালোবাসা থেকে। দোয়া করি মহান রাব্বুল আলামী যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন। জান্নাতের সিঁড়িতে যেন তাঁর সাথে আমাদের দেখা করিয়ে দেন।