কলারোয়ায় ইউপি চেয়ারম্যান চৌকিদার দিয়ে বাঁধতে চায়লেন পরিসংখ্যান অফিসারকে!

কলারোয়ার চন্দনপুরে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনি (পিইসি) পরীক্ষা কেন্দ্রে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে দায়িত্বরত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার লাঞ্চিত ও বাকবিতন্ডার বিষয়টি ‘কলারোয়ায় টক অফ দা টাউন’ এ পরিণত হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের আগে রুম খুলে দেয়া, কেন্দ্রের মধ্যে লোকজন নিয়ে অবস্থান করে মোবাইল ফোনে কথা বলা ও চৌকিদার দিয়ে হেনস্তা করার হুশিয়ারি দিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম মনি সেখানকার পরীক্ষা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসার তাহের মাহমুদ সোহাগের সাথে বাকবিতন্ডা ও চরম দূর্ব্যবহারের ঘটনা ঘটেছে।

ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম মনির মেয়ে ওই কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে।

জানা গেছে- প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনি (পিইসি) পরীক্ষার প্রথম দিনে নিজের মেয়েসহ কয়েকজন কর্মীসমর্থক নিয়ে কেন্দ্রে গিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম মনি নির্ধারিত সময়ের আগে পরীক্ষার হলরুম খুলে দিতে বলেন। এতে অপরাগতা প্রকাশ করলে কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন ইউপি চেয়ারম্যান। তখন তিনি মোবাইল ফোনে কথা বলা শুরু করেন। বিষয়টি নিষেধ করলে ক্ষেপে যান তিনি। শুরু হয় বাকবিতন্ডা। এসময় তিনি চৌকিদার দিয়ে উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসারকে হেনস্তা করারও হুমকি দেন। এখানেই শেষ নয়, পরীক্ষার ৩য় দিনেও একই ঘটনা ঘটে। বিষয়টি দায়িত্বরত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ ঊর্দ্ধতন অফিসারদের জানালে তারা দু’জনকে মীমাংসাও করে দেন। অপ্রীতিকর অথচ মুখোরচক এই ঘটনাটি কলারোয়ায় টক অফ দ্যা নিউজে পরিণত হয়েছে।

বৃহষ্পতিবার অপ্রীতিকর এ ঘটনার বিষয়টি নিয়ে সরেজমিন খোঁজ নিতে গেলে কেন্দ্রের দায়িত্বরত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসার তাহের মাহমুদ সোহাগ জানান- ‘মঙ্গলবার পিইসি পরীক্ষার পরিবেশ ও পরিচিতি পরীক্ষা চলছিল। চন্দনপুর ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম সাহেবের মেয়ে পিইসি পরীক্ষা দিচ্ছিল। পরীক্ষা কেন্দ্রে চেয়ারম্যান জোরপূর্বক ঢুকে ডিউটিরত শিক্ষকদের তার কথামত পরীক্ষা নেয়ার জন্য বলেন। যেটা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও অন্যায় আবদার।

ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন- ‘চেয়ারম্যান সাহেব কেন্দ্র এলাকার ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করেছেন, উনি নির্দিষ্ট সময়ের ১০ মিনিট আগে রুম খুলে দেয়ার কথা বলেন। সেসময় তিনি পরীক্ষার হলে দায়িত্বরত অন্য ইউনিয়নের শিক্ষকদের ব্রিফ দেয়ার চেষ্টা করছিলেন। সকালা সাড়ে ১০টার পরে স্কুলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনে উচ্চস্বরে কথা বলতে থাকলে আমি বাঁধা দেয়ায় এবং বিনয়ের সাথে তাকে চলে যেতে বললে উনি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।

তিনি আরো বলেন- ‘এমনকি চৌকিদার দিয়ে আমাকে হেনস্থা করার চেষ্টা করেন।’

তাহের মাহমুদ সোহাগ বলেন- ‘মোবাইলে কথা বলতে নিষেধ করায় চেয়ারম্যান তাকে লঞ্চিত করেন। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। ঘটনাটি তিনি সাথে সাথে কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করেন।’

বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রের হল সুপার আরশাদ আলী বলেন- ‘ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত, এমন ঘটনা আমরা কেন্দ্রে আশা করি না। কারণ এমন ঘটনায় পরীক্ষার্থীদের উপর অনেক সময় বিরূপ প্রভাব পড়ে।’

কেন্দ্র সচিব প্রধান শিক্ষক আনছার আলী বলেন- ‘ঘটনাটি অত্যন্ত নিন্দনীয় ও দৃষ্টিকটু। এমন ব্যবহার করলে তো বাইরের শিক্ষক বা কর্মকর্তারা আমাদের এখানে আর আসতে চায়বেন না। চেয়ারম্যানের মেয়ে পরীক্ষা দেয়ায় তিনি হলের ভিতরে ঢুকে মোবাইলে কথা বলছিলেন, এসময় তাকে মোবাইল ফোনটি পরীক্ষাকক্ষের বাহিরে যেয়ে কথা বলতে বলায় তাকে লাঞ্চিত করে চেয়ারম্যান।’

তিনি আরো বলেন- ‘হল সুপার ও দায়িত্বরত কর্মকর্তার কাছে জিজ্ঞাসা করেন।’ আমি এর বেশি বলতে পারবো না বলে তিনি এড়িয়ে যান।

অভিযোগের তীর যার দিকে সেই ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম মনি বলেন- ‘পরীক্ষার প্রথম দিন আমার মেয়েকে পরীক্ষার হলে রাখতে যেয়ে দেখি সাড়ে ১০টা বেঁজে গেছে, তখনো পরীক্ষার হলে ডিউটি করতে আসা আমার চৌকিদাররা পৌছায়নি। আমি স্কুলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে ফোনে চৌকিদারদের সাথে কথা বলছিলাম যে, তাদের দেরি হচ্ছে কেন? এমন সময় দায়িত্বরত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিসংখ্যান অফিসার আমাকে বারবার চলে যেতে বলেন ও বিরূপ আচরণ করতে থাকেন।’

তিনি আরো বলেন- ‘তখন আমি জানতে চাই উনি আমাকে চেনেন কি না, উত্তরে উনি চেনেন বললেও আমাকে এক রকম অপমান করে তাড়িয়ে দেন। আমি মান-সম্মানের কথা চিন্তা করে ও পরীক্ষার্থীদের অসুবিধার কথা ভেবে তাৎক্ষনিক চলে আসি।

চেয়ারম্যান মনি আরো বলেন- ‘পরীক্ষার দ্বিতীয় দিন আমি আর যাইনি, কিন্তু তৃতীয় দিন আবারো মেয়ের অনুরোধে কেন্দ্রে যেয়ে দেখি হল খুলে দেওয়ার তখনো ১০ মিনিট বাকি আছে। ছাত্র-ছাত্রীরা রৌদ্রে দাঁড়িয়ে কষ্ট পাচ্ছে। কেন্দ্র সচিবকে পরীক্ষার্থীদের বিষয়টি বললে দায়িত্বরত অন্য শিক্ষকরা সম্মতিদেন কিন্তু বাঁধ সাধেন দায়িত্বরত পরিসংখ্যান অফিসার। তখন আমি বলি যে, ভাই আপনি গতদিনও আমার সাথে বিরূপ আচরণ করেছেন, কিন্তু আমার মেয়ের কথা ভেবে বা পরীক্ষার্থীদের কথা ভেবে আমি কিছু বলিনি। ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসাবে এখানে আমারও কিছু দায়িত্ব কর্তব্য আছে। এই কথা বলার সাথে সাথে দায়িত্বরত কর্মকর্তা আমাকে পুলিশ ডেকে বারবার বাহির করে দেয়ার কথা বলে আমাকে অপমানিত করার চেষ্টা করলে আমি আর ধৈর্য ধরতে না পেরে চৌকিদার ডেকে তাকে বেঁধে ফেলতে বলি।

ঘটনার এ পর্যায়ে আমি বাহিরে এসে ইউএনও মহোদয়ের নিকট জানালে উনি বিষয়টি দেখবেন বলে আমাকে শান্ত হতে বলেন। পর দিন অর্থাৎ পরীক্ষার ৪র্থ দিন ইউএনও মহোদয়সহ আরো অন্যান্য কর্মকর্তারা চন্দনপুর কেন্দ্রে আসেন এবং হাতে হাত দিয়ে বিষয়টি মিমাংসা করে দিয়ে যান।

চেয়ারম্যান অভিযোগ করে বলেন- ‘কিন্তু তারপরও সতের জন সাংবাদিক ও ডিজিএফআই থেকে আমার কাছে ফোন করে জানতে চাওয়া হয়েছে। এখন দায়িত্বরত কর্মকর্তা আসলে কি বুঝায় তা আমার বোধগোম্য নয়।’

‘আমি এ ঘটনা সম্পর্কে কোন কথা বলবো না, ইউএনও সাহেব ঘটনাটি জানেন আপনি তার সাথে কথা বলেন’ -যোগ করেন তিনি।

কলারোয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মানিরা পারভীন সাংবাদিকদের জানান- ‘দুই জনের মধ্যে কথাকাটি হয়েছিল, আমার মাধ্যমে সেটি মিমাংসা হয়ে গেছে।’

এদিকে, চেয়ারম্যানের কথামত পরীক্ষা না নেয়ায় ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম মনির কাছে উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল অফিসার লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনার বিষয়টি স্থানীয় অনেক মিডিয়াতেও ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।