কলারোয়ায় ইটভাটার কাণ্ডজ্ঞানহীন ব্যবস্থাপনা, মৃত্যুর পথযাত্রী এক নারী

কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়ীয়ায় (পশ্চিম পাড়ার মাঠ) ইট ভাটার কাণ্ডজ্ঞানহীন ব্যবস্থাপনায় ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী। ইট ভাটা সংশ্লিষ্টদের অমানবিক আচরণেও ক্ষুব্ধ জনসাধারণ। তাদের বিরুদ্ধে একেরপর এক অভিযোগের তীর ছুঁড়ছে স্থানীয়রা।

জানা যায়- কলারোয়া-চন্দনপুর সড়কের একেবারে পাশে ইট ভাটায় রাখা মাটির স্তুপ রাখতে রাখতে সেটা এখন বিদ্যুতের তার ছুঁইছুই অবস্থা। রাস্তার ধার দিয়ে যাওয়া বিদ্যুতের মেইন খুটির তার পর্যন্ত প্রায় ছুয়েছে মাটির পাহাড়। দৃশ্য দেখলে যে কেউ শিউরে উঠবে!
এমতাবস্থায় গত ১০ অক্টোবর দুপুরে ইটভাটায় ঐ বিশাল মাটির স্তুপ থেকে বিদ্যুৎস্পর্শ হয়ে এক নারী এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। বর্তমানে তিনি কলারোয়া সরকারি হাসপালে চিকিৎসাধীন।

ভুক্তভোগীর প্রতিবেশী ও স্থানীয় যুবলীগ নেতা নবীছদ্দীন জানান- ‘উত্তর সোনাবাড়ীয়ার (সরদার পাড়া) জাহানারা খাতুন (৪০) ৩ সন্তানের জননী। জাহানারা মাঠে লোকের ক্ষেত-খামারে কাজ করে অনেক কষ্টে জীবিকা নির্বাহ করে। স্তুপাকৃত মাটির উপরে ছাগল উঠে যাওয়ায় ছাগল আনতে সেখানে গেলে পাশের বিদ্যুতের খুটির তারে স্পৃষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হন তিনি।’
তিনি আরও জানান- ‘ভুক্তভোগী খুব গরীর ও অসহায় পরিবার হওয়ায় চিকিৎসার জন্য তারা এখন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। সবচেয়ে ন্যাক্করজনক বিষয় হলো- দুর্ঘটনার পর ভাটা মালিক কামরুল এখনও পর্যন্ত ভুক্তভোগী পরিবারের খোঁজ নেননি।’

সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়- ইট ভাটার মাটির স্তুপ প্রায় বিদ্যুতের তার ছুঁইছুঁই অবস্থা। তবে, ইতোমধ্যে দুর্ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা মাটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় অনেক ব্যক্তি ক্ষুব্ধ হয়ে গণমাধ্যমকে জানান- সোনাবাড়ীয়ার এই ভাটার কারণে মানুষ অনেক ভোগান্তিতে রয়েছেন। ট্রাকে করে ভাটায় মাটি আনা নেওয়ার কারণে একটু বৃষ্টি হলেই মেইন রোড কাদামাটিতে মৃত্যুকূপে পরিণত হয়। চোখের সামনে প্রতিনিয়ত ঘটতে থাকে দুর্ঘটনা। বিষয়টি ভাটা মালিককে দফায় দফায় জানানো হলেও কোনো প্রতিকার পায়নি স্থানীয়রা।

এদিকে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এই ভাটায় কাঠ পোড়ানো হচ্ছে বলেও একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্ট ইউপি মেম্বর আনারুল ইসলাম জানান- ‘ঘটনাটি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। ভাটা মালিক কামরুল এখনও পর্যন্ত ভুক্তভোগী পরিবারের খোঁজ না নেওয়াটা ধিক্কারজনক কাজ বলে আমি মনে করি।’ তিনি সবাইকে ভুক্তভোগী পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এস.এম মনিরুল ইসলাম জানান- ‘বিষয়টি কেউ এখনও আমাকে জানায়নি।’
তবে তিনি এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে জানান- ‘বিষয়টি খোঁজ-খবর নিয়ে দ্রুত ভুক্তভোগীর পরিবারের পাশে দাঁড়ানো হবে।’

কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মারুফ আহম্মদ জানান- ‘এ ব্যাপারে কেউ এখনও থানায় অভিযোগ করেনি।’ তবে অভিযোগ পেলে যথার্থ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।

ইট ভাটার মালিক কামরুল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান- ‘আমি বর্তমানে এলাকার বাহিরে আছি। তবে আমার লোকজন সার্বক্ষণিক ভুক্তভোগী পরিবারের খোঁজ-খবর রাখছে।’

তবে ভুক্তভোগি ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন- সরেজমিনে দেখলে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত হবে। ভাটার স্তুপাকৃত মাটি বিদ্যুতের মেইন খুটির তার ছুইছুই। তারের নিচে খুটির সাথে রক্ষিত ট্রান্সমিটার পর্যন্ত হাত দেয় যায়। যেকোন সময় আরো বড় ধরণের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।’