কাঁচা ডিমের কুসুম খাওয়া কি আদৌ উচিত?

শরীরকে মজবুত করতে অনেকেই সকালে খালি পেটে কাঁচা ডিমের কুসুম খেয়ে থাকেন। বিশেষত বডি বিল্ডারদের তো কাঁচা ডিম বেশ পছন্দের খাবার। কিন্ত এইভাবে কাঁচা কুসুম কাওয়া কি আদৌ স্বাস্থ্যকর?

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, এইভাবে ডিম খেলে শরীরের কোনও ক্ষতি তো হয়ই না, উল্টে অনেক উপকার পাওয়া যায়। তাই তো সুস্থ শরীর, খুশি মন এবং আনন্দময় জীবন পেতে কাঁচা কুসুম খাওয়া শুরু করতেই পারেন।

শরীর যদি সুস্থ থাকে, তাহলে মনও সুস্থ থাকবে। আর মন যদি সুস্থ থাকে, তাহলে জীবনে যে কোনও সময়ই কালবৈশাখীর ঝড় উঠবে না, তা বলাই বাহুল্য! এবার বুঝেছেন তো কাঁচা ডিমের কুসুম খাওয়া কতটা উপকারি।

চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে, ডিমের কুসুম নানাভাবে শরীরের উপকারে লাগে। পেশির গঠনকে মজবুত করার পাশাপাশি এনার্জির ঘাটতি দূর করতে এবং শরীরকে সার্বিকভাবে রোগ মুক্ত রাখতে ডিমের কুসুমের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। তাই তো আপনাদের কাছে অনুরোধ, সুস্থ এবং দীর্ঘ জীবন পেতে কাল সকাল থেকেই শুরু করে দিন কাঁচা ডিমের কুসুম খাওয়া। এমনটা করলে কয়েক দিনের মধ্যেই যে সুফল পেতে শুরু করবেন, সে কথা হলফ করে বলতে পারি। কাঁচা ডিমের কুসুম থেকে সাধারণত যে যে উপকারগুলো পাওয়া যায়। সেগুলো হল:

উপকারী কোলেস্টেরলের যোগান বাড়ায়
শরীরকে সচল রাখতে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়াটা একান্ত প্রয়োজন। আর কীভাবে হবে এমনটা? খুব সহজ! প্রতিদিন ডিমের কুসুম খেলেই দেখবেন ধীরে ধীরে শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়তে শুরু করবে। তখনই বুঝবেন উপকারী কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে আপনার শরীরে।

ভিটামিন এ, ডি, ই এবং কে সমৃদ্ধ
শরীরে এই ভিটামিনগুলোর মাত্রা যত বাড়বে, তত দেহে পুষ্টির অভাব দূর হবে। সেই সঙ্গে নানাবিধ রোগের প্রকোপও কমবে। এখানেই শেষ নয়, সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্রে দাবি করা হয়েছে, ভিটামিন ডি ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৫০ শতাংশ কমিয়ে দেয়। এবার বুঝতে পারছেন তো সকাল সকাল কাঁচা ডিমের কুসুম খাওয়া কতটা জরুরি।

অ্যালার্জির প্রকোপ কমায়
ডিম খেলেই যাদের অ্যালার্জি হয়, তারা এবার থেকে কাঁচা ডিম খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন ডিমের পুষ্টিও পাবেন, আবার কোনও শারীরিক সমস্যাও হবে না। আসলে রান্নার সময় ডিমের অন্দরে থাকা প্রোটিনের চরিত্র একেবারে বদলে যায়। যে কারণে অনেকেরই শরীরে সেই বদলে যাওয়া প্রোটিন অ্যালার্জেনের ভূমিকা পালন করে অ্যালার্জির প্রকোপ বাড়িয়ে দেয়। প্রসঙ্গত, কাঁচা ডিমের কুসুমে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা নানাবিধ অ্যালার্জির প্রকোপ কমাতেও বিশেষ ভূমিকা নিয়ে থাকে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের চাহিদা মেটায়
দুইটা কাঁচা ডিমের কুসুম খেলে শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের কোনও ঘাটতিই থাকে না। শুধু তাই নয়, অ্যাম্যানো অ্যাসিড, ট্রাইপোফেন এবং টাইরোসিনের মতো উপাদানের ঘাটতিও দূর করে। ফলে একাধিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবানা হ্রাস পায়। কারণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হল এমন একটি উপাদান যা একাই শরীরেরে নানাবিধ ক্ষয়কে রোধ করে দেয়। ফলে কোনও রোগই শরীরকে আক্রামণ করার সুযোগ পায় না।

শরীরে ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি দূর হয়
একটা কাঁচা ডিমের কুসুমে প্রায় ০.২ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি১২ থাকে। এই ভিটামনিটি শরীরে জমে থাকা চর্বি ঝড়িয়ে ফেলার পাশাপাশি নার্ভ সেলের কর্মক্ষমতা বাড়াতে কাজে আসে।

প্রোটিন এবং মিনারেল
একটা কাঁচা ডিমের কুসুমে প্রায় ৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে। এই পরিমাণ প্রোটিন শরীরে প্রবেশ করা মাত্র কোষেদের ক্ষত দূর করে তাদের পুনরায় চাঙ্গা করে তোলে। সেই সঙ্গে নতুন কোষেদের জন্ম যাতে ঠিক মত হয়, সেদিকে খেয়াল রাখে। প্রোটিন ছাড়াও ডিমের কুসুমে রয়েছে ৬৬ এম জি ফসফরাস এবং ২২ এম ডি ক্যালসিয়াম। এই দুটি উপাদান আমাদের শরীরের মধ্যে থাকা ৩৭ ট্রিলিয়ান কোষেদের কর্মক্ষমতা বাড়াতে এবং হাড়কে শক্তপোক্ত করতে দারুন কাজে আসে।

হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়
একাধক গবেষণায় দেখা গেছে, ডিমের অন্দরে উপস্থিত ফসপোলিপিড নামক একটি উপাদান মেটাবলিজ বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে বদ-হজম এবং গ্যাস-অম্বলের সমস্যা কমাতেও সাহায্য করে।

ব্রেন পাওয়ার বাড়ায়
ডিমের শরীরে উপস্থিত ফসপোলিপিড যে শুধু হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়, তা নয়। সেই সঙ্গে ব্রেন পাওয়ার বাড়িয়ে অ্যালঝাইমার-এর মতো রোগের আক্রমণ থেকে বাঁচাতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। সূত্র: বোল্ডস্কাই।