কানাডার আদালতে ‘সন্ত্রাসী’ ঘোষণা নিয়ে ‘চুপ’ বিএনপি

কানাডার আদালত তৃতীয়বারের মতো ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা দেয়ার বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়াই নেই বিএনপির। এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য তো আসেইনি, কোনো নেতা ব্যক্তিগতভাবেও কিছু বলছেন না।

গত ৪ মে কানাডার ফেডারেল আদালতের একজন বিচারক বিএনপির এই সদস্যের রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদন ফিরিয়ে দেয়। ওই রায়েই বিএনপিকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ উল্লেখ করে বলা হয়, এই সংগঠনের সদস্যকে আশ্রয় দেয়া হলে কানাডার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে।

এই রায়টি ২১ মে কানাডা সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে দেয়া হয়। বাংলাদেশে ২২ মে সংবাদটি গণমাধ্যমে আসে।

এর আগেও ২০১৭ সালের ১২ মে এবং ২৫ জানুয়ারি দুটি রায়ে বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই জন নেতার রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন ফিরিয়ে দিয়ে বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করা হয়।

সে সময় দুই বারই বিএনপির নেতারা এই রায় নিয়ে কথা বলেছেন। এর পেছনে সরকারের ভূমিকা রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তারা। তবে এবার ২৩ মে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সংবাদ সম্মেলনে কাছে জানতে চাইলেও তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।

এরপরও প্রতিদিনই সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন রিজভী। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ বিভিন্ন নেতারা নানা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রেখেছেন। কিন্তু এসঙ্গটি তারা তুলেনইনি।

বিএনপি বিব্রত, এটা স্পষ্ট। তবে জানতে চাইলে দলের সহআন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা বলেন, ‘একটি বিদেশি আদালত কী বলল তাতে বিএনপির কিছু যায় আসে না। বিএনপি গণমানুষের দল, এই দেশে বিএনপি আছে, মানুষ যতদিন থাকবে বিএনপিও থাকবে।’

‘বিএনপির জনপ্রিয়তা প্রতিদিন বাড়ছে। গত ১০ বছর বিএনপি কঠিন সময় পার করছে, কিন্তু বিএনপি ভাঙে নাই। কারা কী বলল তাতে বিএনপির কোন যায় আসে না।’

কানাডার আদালতের রায় বিএনপির জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিএনপির জন্য নতুন কোনো চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসবে কি না- এমন প্রশ্নে রুমিন ফারহানা বলেন, ‘এই বিষয়টিকে আমি কোন চ্যালেঞ্জ মনে করি না। আমি ৮/৯ বছর থেকে বিএনপির কুটনৈতিক বিভাগে কাজ করছি, আমি বিদেশিদের মনোভাব জানি। তারা কানাডার আদালতের এই বিষয়টি জানে বলেও মনে হয় না।’

‘বাংলাদেশের মিডিয়া যেভাবে এটাকে তুলে ধরছে, আমি মনে করি এই বিষয়টি বিদেশিরা ঠিকভাবে জানেও না।’

‘বিদেশিরা চায় দেশের মানুষ নির্ভয়ে গিয়ে ভোট দিতে পারবে। তবে তাদের মধ্যে একটা ধারণা জন্মেছে যে, বাংলাদেশে ভোট ওঠে গেছে। তাছাড়া দেশের মানুষও কিন্তু গণতন্ত্রমনা, তারা ভোট দিতে চায়, দিতে না পারলে প্রতিবাদ করে। কিন্তু দেশে তো ভোটের কোন পরিবেশ নাই।’

কানাডা আদালতের রায়কে গুরুত্ব না দিলেও সারা বিশ্বে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি নিয়ে জার্মান একটি সংস্থার জরিপকে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছেন রুমিন ফারহানা। ওই জরিপে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ গণতন্ত্রের নূন্যতম শর্ত পূরণ হচ্ছে না এবং এটি স্বৈরতান্ত্রিক দেশের তালিকায় ঢুকেছে।

বিএনপি নেত্রীর মতে, আদালতের আদেশের চেয়ে গবেষণা সংস্থার জরিপের ফল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার যুক্তি, ‘কানাডা এবং জার্মানির মধ্যে পার্থক্য আছে। জার্মান সংস্থা একশ কয়েকটি দেশে জরিপ চালিয়ে বলেছে, আর অন্যদিকে এটা একটা কোর্টের রায়। দুইটা এক বিষয় না।’

জানতে চাইলে বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যয এমাজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘কানাডার আদালতের যে রায় দিয়েছে, সেখানে বিএনপির কোন প্রতিনিধিত্ব ছিল না। তাদের বক্তব্য না শুনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির আগে পরের আন্দোলনের সহিংসতায় কিছু গাড়ি পোড়ানোর বিষয়টি সামনে এনে এই রায় দিয়েছে।’

‘আমার মতে, তাদের বক্তব্য না শুনে এ রকম একটা রায় দেওয়া ঠিক হয়নি। কানাডার আদালতের এভাবে রায় দেয়া উচিত না। বিএনপির কোন প্রতিনিধির সাথে কথা বলে রায় দেয়া উচিত ছিল।’

এই রায়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিএনপি কোনো বেকায়দায় পড়বে কি না-প্রশ্ন ছিল এমাজউদ্দিনের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘এই সমস্ত রায়ে তেমন কোন প্রভাব পড়ে না। কিছু দিন আগে জার্মানির রিপোর্টে সরকারের খুব যে প্রভাব পড়েছে, তা মনে হয় না। তবে একটা স্টেটের একটি বড় পার্টির সম্পর্কে কোন মন্তব্য করতে তাদের (কানাডার আদালতের) আরও সচেতন হওয়া উচিত ছিল।’

তবে এই দুই জনের বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক গোবিন্দ চক্রবর্তী। তিনি মনে করেন, কানাডা আদালতের রায়ের প্রভাব বিএনপি এড়াতে পারবে না।

‘এতে করে বিএনপির ভাবমুর্তিতে ইমপেক্ট আছে। কানাডার আদালতের রায় রাজনৈতিক পরিসরে বিএনপির ইমেজ সংকট তৈরি করবে। দেশীয় রাজনীতিতে দলকানা কিছু রাজনীতিবিদ আছে তারা মনে করবে এটা বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। তবে আগামী ইলেকশনে খুব একটা প্রভাব পড়বে না।’