কারাগারে স্বজনদের নিয়ে দুপুরে একসঙ্গে খেলেন খালেদা

কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন তার স্বজনরা। ঈদের দিন কারাগারে আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে দুপুরে একসঙ্গে বাসার রান্না করা খাবার খেয়েছেন তিনি।

শনিবার বেলা দুইটার দিকে তার পরিবারের ২০ জন সদস্য কারাগারে ঢুকে দুই ঘণ্টা অবস্থান করেন। স্বজনদের মধ্যে ছিলেন- খালেদা জিয়ার প্রয়াত ভাই সাঈদ এস্কান্দরের স্ত্রী নাসরিন এস্কান্দার ও তার ছেলে শামস এস্কান্দার, শাফিন এস্কান্দার, ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার, তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা, ছেলে অভিক এস্কান্দার, এরিক এস্কান্দার, ভাগ্নি অরনি এস্কান্দার, অনন্যা এস্কান্দার, শাফিয়া ইসলাম, ভাগিনা সাজিদ ইসলাম, মো. মেহরাব, মো. আল মামুন, খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমানের স্ত্রীর বড় বোন শাহিনা খান জামান বিন্দু, তার স্বামী শফিউজ্জামান, বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তারসহ গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’র গৃহকর্মী ও গাড়ি চালক।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে বেলা সোয়া দুইটার দিকে তারা কারা ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন। বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে তারা বেরিয়ে আসেন।

দলীয় সূত্র জানায়, পরিবারের সদস্যরা বাসায় রান্না করে খাবার নিয়ে আসেন। খালেদা জিয়া ঈদের দিনে যেসব খাবার পছন্দ করেন সেগুলো রান্না করে আনা হয়। কারাগারে সদস্যদের প্রবেশের আগে ওইসব খাবার কারা কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা করার পর সদস্যদের কারাগারে প্রবেশ করতে দেয়া হয়।

বেগুনি সাদা অর্কিডের একটি ফুলের তোড়া নিয়ে যান স্বজনরা। এটি দিয়ে বেগম জিয়াকে তারা স্বাগত জানান।

পরিবারের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়ার বোন ও ভাইয়ের স্ত্রী ও স্বজনদের বুকে জড়িয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

ছোট ভাইসহ তাদের সন্তানরা খালেদা জিয়াকে পায়ে ধরে সালাম করেন। এ সময়ে অনেকে আবেগ প্রবণ হলেও খালেদা জিয়া তাদের আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে ধৈর্য ধারণ করতে বলেন।

তিনি স্বজনদের নাম ধরে সবার খোঁজ-খবর নেন এবং বিশেষ করে শিশু-বাচ্চারা কেমন আছে তা জানতে চান।

নিজের কক্ষ থেকে অসুস্থ শরীর নিয়ে খালেদা জিয়া আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য আসেন। তাকে দুই পাশ দিয়ে দুই জন ধরে নিয়ে আসেন স্বজনদের জন্য নির্ধারিত কক্ষে। এতো কষ্টের মধ্যেও খালেদা জিয়া সবার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

এদিকে কারা সূত্র জানায়, ঈদ উপলক্ষে প্রথম শ্রেণির বন্দি হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসনকে সকালে দুধের সেমাই, জর্দা ও মিষ্টি দেয়া হয়েছে। তার চাহিদা অনুযায়ী দুপুরের খাবার রান্না করা হয়।

তবে খালেদা জিয়া দুপুরেই আত্মীয়-স্বজনের খাবার খেয়ে ঈদের দিনটির সূচনা করেছেন বলে জানা গেছে।

ঈদের দিন সকাল ১০টা থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারের বাইরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বিএনপির নেতাকর্মীরা কারাগারের সামনে আসবেন- এমন কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা জোরদারের অংশ হিসেবে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের সাজার পর বিএনপি চেয়ারপারসন নাজিমউদ্দিন রোডের পুরাতন কারগারে বন্দি। সঙ্গে রয়েছেন তার গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম।

দীর্ঘ ৩৬ বছরের রাজনৈতিক জীবনে খালেদা জিয়া কারান্তরীণ অবস্থায় তিন বার ঈদ উদযাপন করেছে। তবে রাজনৈতিক সরকারের সময়ে কারাগারে তার এটি প্রথম ঈদ।

এর আগে ১/১১ সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৭ সালে ৩ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া গ্রেফতারের পর সংসদ ভবনে স্থাপিত সাব জেলে বন্দি রাখা হয়েছিল। ওই সময়ে দুইটি ঈদ সেই সাবজেলে উদযাপন করেন। ওই সাবজেলে আরেকটি বাসায় অন্তরীণ ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।