কার্যক্রম শুরুর আগেই ২৮ মার্চ ২টি কক্ষ ভাড়া দেয় ‘রেইন ট্রি’

আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরুর আগেই হোটেলের কক্ষ ভাড়া দেয়া শুরু করে ‘দ্য রেইন ট্রি’ কর্তৃপক্ষ। হোটেলের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরুর কথা ছিল ৯ এপ্রিল। কিন্তু তার আগেই ২৮ মার্চ হোটেলের দুটি কক্ষ ভাড়া দেয়া হয়।

আর ওই সময় হোটেলটির নিরাপত্তাজনিত তদারকি ও যন্ত্রপাতি সক্রিয় ছিল না। হোটেল কর্তৃপক্ষের বক্তব্যে উঠে এসেছে এসব তথ্য। আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরুর মাস না পেরুতেই আলোচনার জন্ম দিয়েছে রাজধানীর বনানীর এই হোটেলটি।

হোটেল কর্তৃকক্ষ বলছেন, হোটেলটির গ্রান্ড ওপেনিং হয় ৯ এপ্রিল। এর আগে মেটাল ডিটেক্টর কার্যকর ছিল না। স্বাভাবিক তল্লাশির মাধ্যমেই হোটেলটিতে ছিল প্রবেশের সুযোগ। আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরুর আগেই গত ২৮ মার্চ সাফাত ও সাদমানদের হোটেলটির দুটি কক্ষ ভাড়া দেয়া হয়। তখন ম্যানুয়ালি তল্লাশি করা হয়। হোটেলটির জেনারেল ম্যানেজার ফ্রাঙ্ক ফরগেইট ও ফারজানা আরাফ রিমি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

শনিবার সকাল ১০টায় হোটেলটি পরিদর্শনে যান জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত কমিটির প্রধান নজরুল ইসলাম ও সদস্য শরীফ উদ্দিন। পরিদর্শন শেষে নজরুল ইসলাম বলেন, হোটেলটিতে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে।

অন্যদিকে শনিবার সোয়া ১১টার দিকে গুলশান জোনের পরিদর্শক ওয়াবদুল কবিরের নেতৃত্বে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরেরে একটি দল ‘দ্য রেইন ট্রি’ পরিদর্শনে আসেন।

পরিদর্শন শেষে পরিদর্শক ওয়াবদুল কবির বলেন, হোটেলের বিরুদ্ধে মাদক বিক্রি ও বার পরিচালনার অভিযোগ ছিল। সে কারণে আমরা পরিদর্শনে এসেছি। তল্লাশি চালিয়ে আমরা হোটেলটিতে অ্যালকোহল জাতীয় কিছু পাইনি। তবে যেহেতু অভিযোগ উঠেছে সে কারণে আমরা হোটেলটির উপর নজরদারি রাখব।

এরপর যোগাযোগ করা হলে হোটেলটির এক্সিকিউটিভ (ইন্টারনাল অপারেশন) ফারজানা আরাফ রিমি বলেন, ‘অভিযানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও মানবাধিকার কমিশন অস্বাভাবিক কিছু পায়নি। আমাদের পুরো হোটেলের স্ট্রাকচার থাইল্যান্ড থেকে করা। হোটেলটির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয় গত ৯ এপ্রিল। তবে এর আগে আমরা টেস্ট কেস হিসেবে কক্ষ ভাড়া দিয়েছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের পুরো হোটেলের কক্ষ কাচের দেয়াল দিয়ে ঘেরা সাউন্ড প্রুফড। কাচের ঘরের ভেতর থেকে কেউ চিৎকার চেচামেচি করলে কোনোভাবে শোনার কথা নয়। তাছাড়া আমরা কোনো ধরনের স্বাভাবিক কিছু দেখিনি। ওই দুই তরুণী যে ধরনের অভিযোগ করেছেন তা আমাদের কাছে করা হয়নি। আমাদের কাছে যদি অভিযোগ করা হতো তবে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতাম।’

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ওই রাতে ‘ধর্ষক’রা অস্ত্র নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেছিল। অস্ত্রের মুখে মদ খাইয়ে জোরপূর্বক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফারজানা আরাফ রিমি বলেন, ‘তখন আমাদের ওপেনিং ছিল। যদিও আমরা এখনও গ্রান্ড ওপেনিংয়ে যায়নি। ওই সময় আমাদের ফ্রন্ড ডেস্ক অফিসার ম্যানুয়ালি চেক করেছেন। অস্ত্র ফ্রন্ট ডেস্কে জমা দিয়ে হোটেলে প্রবেশ করেছিল সাফাত, সাদমান, নাঈমরা। ফলে ধর্ষণের শিকার দুই তরুণী অস্ত্রের মুখে ধর্ষণের যে অভিযোগ করেছেন, তা মিথ্যা।’

অস্ত্র ও মদ চেক করার ক্ষেত্রে আপনাদের দায় কি এড়াতে পারেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমাদের দায় ছিল এটা আমরা বলব না। কারণ ফ্রন্ট ডেস্ক অফিসার যদি না পায় তবে কী করার সুযোগ আছে? আমরা ম্যানুয়ালি চেক করেছি। তারা যদি লুকিয়ে গোপনে উপরে নিয়ে গিয়ে থাকে তবে আমাদের কী করার। ওই সময় মেটাল ডিটেক্টর কানেক্ট ছিল না। কারণ ওই সময় পর্যন্ত হোটেল রেডি ছিল না। আমাদের হোটেল রেডি হয় পরের মাসে ৯ এপ্রিল। ২৮ মার্চ ধর্ষণের ঘটনার অভিযোগ উঠেছে অনেক আগের ঘটনা।’

হোটেল রেডি হওয়ার আগে কিভাবে হোটেলের কক্ষ ভাড়া দিলেন জানতে চাইলে ফারজানা আরাফ রিমি বলেন, ‘আপনারা আন্তর্জাতিকমানের ৫/৭টি হোটেল পরিদর্শন করেন আমাদের কোনো দায় থাকে কি না? এরপর ল’ নিয়ে কথা বলা যায়। যতটুকু সময় থাকার জন্য তিনি নোটিশ করেছিলেন, ঠিক ততটুকু থেকেই তারা চলে গেছেন। আমরা অস্বাভাবিক কিছু পাইনি।’

উল্লেখ্য, গত ২৮ মার্চ বন্ধুর সঙ্গে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়ে ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে ধর্ষণের শিকার হন দুই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণী। ওই ঘটনায় গত ৬ মে রাজধানীর বনানী থানায় অভিযুক্ত সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ ও সাদমান সাকিফসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন তারা।

পরে গত ১১ মে রাতে সিলেট থেকে অভিযুক্ত সাফাত ও সাদমানকে গ্রেফতার করে পুলিশ সদরের বিশেষ টিম ও সিলেট পুলিশ। এরপর আবেদনের প্রেক্ষিতে সাফাতকে ৬ দিন সাদমানকে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন মুখ্য মহানগর হাকিম।

সাফাত আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে। আর সাদমান সাকিফ রেগনাম গ্রুপের মালিকের ছেলে এবং ওই গ্রুপের পরিচালক। এর মধ্যে সাফাতের বাবার বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকা দক্ষিণ ইউনিয়নের নগরগ্রামে।

নাঈম আশরাফ নিজেকে আওয়ামী লীগ নেতার ছেলের বন্ধু বলে পরিচয় দিলেও তার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে বলে জানা গেছে। মামলার অপর আসামিরা হলেন- সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদ।