কিডনির রোগ কেড়ে নিতে পারে প্রাণ

বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটির বেশি মানুষ কোনো না কোনো ভাবে কিডনি রোগে আক্রান্ত। এই রোগে প্রতি ঘণ্টায় পাঁচজন অকালে মারা যায়। বিভিন্ন সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, পারিবারিক ইতিহাসে কিডনির সমস্যা থাকলে, ইউরিন ইনফেকশন হলে কিংবা দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ থাকলে কিডনির অসুখে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন বা ‘হু’র দাবি, সারা বিশ্বে কিডনির অসুখে প্রতি বছর মৃত্যু হয় প্রায় সাড়ে আট লাখ মানুষের। অর্থাৎ একবার অকেজো হলে প্রাণ নিয়ে নেয় এই কিডনির অসুখ। তাই আগে থেকেই সতর্ক হওয়া উচিত।

কিডনির অসুখ মূলত দুই ধরনের হয়। ১. অ্যাকিউট কিডনি ডিজিজ ২. ক্রনিক কিডনি ডিজিজ

অ্যাকিউট কিডনি ডিজিজ: হঠাৎ করেই কিডনির উপর প্রভাব ফেলে। বিভিন্ন ইনফেকশন, ম্যালেরিয়া, সিভিয়ার ডায়ারিয়া, সাপের কামড় অথবা হঠাৎ দুর্ঘটনা ঘটলে তার প্রভাবে হয় অ্যাকিউট কিডনি ডিজিজ। তবে এই ধরনের কিডনির অসুখ ৩ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়।

ক্রনিক কিডনি ডিজিজ: সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এই অসুখ। দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস ও হাই ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ না করলে কিডনির সমস্যা সবচেয়ে বেশি হয়। এছাড়াও ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশন, কিডনি স্টোন, পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ (কিডনিতে সিস্ট) ও গ্লুমেরুলোনেফ্রাইটিসের (নেফ্রনে প্রদাহ) সমস্যা দেখা যায়। প্রোস্টেটের সমস্যা, ইউরিনারি ট্র্যাক ব্লক থাকলেও কিডনির সমস্যা হয়।

কারা বেশি আক্রান্ত হন: বয়স্ক হলে, পরিবারে কারও কিডনির সমস্যা থাকলে, দীর্ঘদিন হার্টের অসুখ, ওবেসিটি, ধূমপানের অভ্যাস থাকলে কিডনির রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কয়েক গুণ বেড়ে যায়।

শনাক্ত: ক্রনিক কিডনি ডিজিজে তেমন কোনও লক্ষণ থাকে না। ধীরে ধীরে রোগ বাড়তে থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অ্যাডভান্স স্টেজে রোগী বুঝতে পারেন। পরবর্তীকালে যে যে লক্ষণ দেখা যায় তা হল-

১. হঠাৎ করে ওজন বৃ‌দ্ধি কিংবা ওজন কমে যাওয়া।
২. একটুতেই দুর্বল হয়ে পড়া।
৩. প্রস্রাব করার সময় ব্যথা।
৪. প্রস্রাবের বেগ পাওয়ার সময় ব্যবধানের মধ্যে পরিবর্তন।
৫. শরীরে ফুলে যাওয়া
৬. তলপেট ও কোমরের দিকে ব্যথা৷
৭. খিদে কম
৮. বমি ভাব
৯. সারা শরীরে চুলকানি

বদ অভ্যাস:

কথায় কথায় পেন কিলার ও কারণ ছাড়াই নিয়মিত গ্যাসের ওষুধ খাওয়ার অভ্যাস কিডনিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খাওয়া অত্যন্ত জরুরি৷

কিডনি ভালো রাখতে:

নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করতে হবে ও সঠিক ডায়েট মেনে চলা জরুরি। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। খাবারে নুন কম খান।
উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে নিয়মিত চেক আপ জরুরি।