কুতুব মিনারকে ছুঁতে যাচ্ছে আবর্জনার পাহাড়!

ভারতীয় মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর গুরুত্বপূর্ণ এবং অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন কুতুব মিনার। ভারতের প্রথম মুসলমান শাসক কুতুবুদ্দিন আইবেকের আদেশে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১১৯৩ খ্রিস্টাব্দে। তবে মিনারের ওপরের তলাগুলোর কাজ সম্পূর্ণ করেন ফিরোজ শাহ তুঘলক ১৩৮৬ খ্রিস্টাব্দে।

কিন্তু বর্তমান ভারতের রাজধানী দিল্লিতে অবস্থিত একটি আবর্জনার ভাগার এতটাই উঁচু হয়েছে যে, সেটি এখন মিনারের উচ্চতার সমান হবে।

এক প্রতিবেদনে সে রকমই খবর দিয়েছে আনন্দবাজার। বলা হয়েছে, আর মাত্র আট মিটার। তার পরই কুতুব মিনারকে ছুঁয়ে ফেলবে গাজিপুরের আবর্জনার পাহাড়।

গান্ধীর দেড় শ-তম জন্মবার্ষিকীতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশজুড়ে আবর্জনা সাফাইয়ের ডাক দিয়েছেন। কিন্তু খাস দিল্লিতেই প্রশ্ন উঠেছে, সাফাইয়ের পর আবর্জনা জমা হবে কোথায়?

পূর্ব দিল্লির গাজিপুর, উত্তর-পশ্চিম দিল্লির ভলস্বা এবং দক্ষিণ দিল্লির ওখলা— রাজধানীর তিনটি আবর্জনা স্তূপেই আর জঞ্জাল ধারণের ক্ষমতা নেই। তা সত্ত্বেও সেখানে নিত্যদিন জঞ্জাল জমা হচ্ছে। সব থেকে খারাপ অবস্থা পূর্ব দিল্লির গাজিপুরে।

গাজিপুরে জঞ্জাল জমার শুরু ১৯৮৪ থেকে। ২৯ একর এলাকা জুড়ে ৩৪ বছরে ১ কোটি ৩০ লাখ টন জঞ্জাল জমেছে। ২০০২ সালে এই জঞ্জাল ধারণ ক্ষমতা পেরিয়ে যায়। ২০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত জঞ্জাল জমানোর অনুমতি ছিল। ইতিমধ্যেই ৬৫ মিটার উঠে গেছে। বছরে ৫ মিটার উচ্চতা বাড়ছে। রোজ ১ হাজার ১০০ টন জঞ্জাল সেখানে জমছে।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা মার্চ মাসে বলেছিলেন, সে দিন আর দূরে নেই যখন গাজিপুরের আবর্জনার পাহাড় ৭৩ মিটার উঁচু কুতুব মিনারের সমান হবে। মাথায় বিমানের পাইলটদের সতর্ক করতে লাল আলো বসাতে হবে। সপ্তাহ খানেক আগে সচেতনতা বাড়াতে একদল তরুণ-তরুণী ‘মিশন মাউন্ট গাজিপুর’-এর ডাক দিয়েছিলেন। জঞ্জালের পাহাড়ের নিচে বেস ক্যাম্প তৈরি করে, পাহাড়ে উঠে শৃঙ্গ জয়ের পতাকা পুঁতেছিলেন। তাতেও কারও হুঁশ ফেরেনি।

রোববার পূর্ব দিল্লির বাসিন্দারা রাস্তায় নেমেছিলেন। দাবি, আবর্জনার পাহাড় সরানো হোক। বন্ধ হোক নতুন করে আবর্জনা ফেলা। এক বছর আগে এই গাজিপুরের পাহাড়েই ধস নেমে জঞ্জালের ধাক্কায় রাস্তার বহু মানুষ পাশের খালে গিয়ে পড়েন। দুইজনের মৃত্যু হয়।

আন্দোলনকারী সংগঠন ‘ওয়াচডগ ইন্ডিয়া’র সভাপতি প্রেমচন্দ্র শর্মা বলেন, ‘১৬ বছর আগে যেখানে জঞ্জাল ফেলা বন্ধ হয়ে যাওয়া উচিত ছিল, সেখানে এখনও পাহাড় জমছে। গোটা এলাকার বাতাসে দূষণ ছড়াচ্ছে। মাটির নিচের পানিও দূষিত হচ্ছে।’

পরিবেশবিদদের অভিযোগ, স্থানীয় স্তরে যদি পৌরসভাগুলি প্রক্রিয়াজাতকরণ আবর্জনা আলাদা করে ফেলত, তা হলে এই সমস্যা হতো না। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পুনর্ব্যবহারেরও কোনও চেষ্টা নেই।