কুবিতে ভূমি অধিগ্রহণের স্থান নির্বাচনে মতবিরোধ : শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

ইমদাদুল হক মিরন, কুবি প্রতিনিধি : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতাধীন ২০০ দশমিক ২২ একর ভূমি অধিগ্রহণের স্থান নির্বাচন নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। প্রস্তুতকৃত প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী ভূমি অধিগ্রহণের স্থানটি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার লালমাইয়ের রাজার খোলা গ্রামে পড়ে যা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ক্যাম্পাস (সালমানপুর) থেকে প্রায় দুই কিলোমিটারেরও বেশি দূরে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই স্থান নির্বাচনকে ‘ক্যাম্পাস সম্প্রসারণ’ ও ‘যৌক্তিক’ ব্যাখ্যা করলেও সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের দাবি- তারা ‘অখণ্ড ক্যাম্পাস’ চান। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তীব্র ক্ষোভ ও সমালোচনা চলছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মরিয়ম আক্তার সোনিয়া অখণ্ড ক্যাম্পাসের দাবিতে লিখেছেন, ‘বুঝতে পারছি না বারবার কেন আমাদের অস্তিত্ব নিয়েই টানাটানি করা হয়। একবার নাম নিয়ে তো আরেকবার অন্যকিছু নিয়ে। এবারতো শিকড়ই উপড়ে ফেলতে চাচ্ছে। ক্যাম্পাসের আশেপাশে প্রচুর জায়গা থাকা স্বত্ত্বেও কেন এখানেই সম্প্রসারণ করা যাবে না?’

আইসিটি বিভাগের শিক্ষার্থী মাইনুল হোসাইন লিখেন, ‘এক দুইজনের রাজনীতির শিকার আমরা হাজার স্টুডেন্ট কেনো হবো? এইটা আমাদের মূল ক্যাম্পাস নয়; এইটাই আমাদের একমাত্র ক্যাম্পাস। এইখানে জায়গা নেওয়ার হেডম থাকলে নেন, আর না হয় এই উন্নয়নের আমাদের দরকার নাই।’

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী নাছির উদ্দিন লিখেছেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, উন্নয়নের নামে আমার কোনো শাখা ক্যাম্পাস লাগবে না। আমি অখণ্ড ক্যাম্পাস চাই।’

এছাড়াও অসংখ্য শিক্ষার্থী অখণ্ড ক্যাম্পাসের দাবিতে নিয়মিতই সমালোচনা করছেন ফেসবুকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে।

জানা যায়, গত ২৩ অক্টোবর (মঙ্গলবার) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৬৫৫ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার মেগা প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে ২০০ দশমিক ২২ একর যাতে ১০০ একর ভূমির উন্নয়নের কথা রয়েছে।

প্রকল্পটি নিয়ে গত ২৪ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের উপস্থিতিতে এক মতবিনিময় সভায় ভিডিওচিত্রে দেখানো হয় ভূমি অধিগ্রহণের জন্য কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার ৭, ৯, ১২ এবং ১৩ নং মৌজার অন্তর্ভুক্ত জমি নির্ধারণ করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উল্লেখিত ১২ ও ১৩ নং মৌজা হচ্ছে রাজার খোলা নামক গ্রামের মৌজা। স্থানটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ক্যাম্পাস থেকে ২ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে যা ক্যাম্পাসকে দ্বিখণ্ডিত করবে। আর এই পরিকল্পনাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ‘ক্যাম্পাস সম্প্রসারণ’ বলে অভিহিত করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো: আবু তাহের (চলতি দায়িত্ব) বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নকল্পে সব ধরণের চিন্তা মাথায় রেখেই প্রকল্পটি সাজিয়েছি। প্রকল্পে ২০০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে যার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় সংযুক্ত উপযুক্ত স্থানই নির্বাচন করা হয়েছে। এতে ক্যাম্পাস স্থানান্তর হবে না, সম্প্রসারণ হবে। ক্যাম্পাস যদি স্থানান্তরের প্রশ্ন আসে তাহলে সবার আগে আমিই তার বিরোধিতা করবো।’

তবে ‘বিশ্ববিদ্যালয় সংযুক্ত উপযুক্ত’ স্থানটি কী বা কোথায় এই বিষয়ে তিনি বলেন- ‘সরকার যে স্থানটি উপযুক্ত মনে করে সেটিই হবে।’

এছাড়াও নির্দিষ্টভাবে ঠিক কোন জায়গাটিতে ক্যাম্পাস সম্প্রসারণ করা হবে জানতে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার দপ্তরে গেলে রেজিস্ট্রার ‘পরে আসতে’ বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।

সরকারি সিদ্ধান্তেই ক্যাম্পাসের জায়গা নির্ধারিত হবে জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য প্রফেসর ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমান ক্যাম্পাস আমাদের মা। এটিকে স্থানান্তরের কোনও প্রশ্ন বা সম্ভাবনাই নেই। বর্তমান ক্যাম্পাসকে অপরিবর্তিত রেখেই ভূমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে ক্যাম্পাস সম্প্রসারণ করা হবে।’