কৃষি শিক্ষক নেন ‘গণিত’ ক্লাস!

সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলাধীন মুরারীকাটি ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক মুজিবুর রহমান অনৈতিক সুবিধা ভোগের কান্ডারী হয়ে উঠেছেন। তার বিরুদ্ধে যেন অনিয়মের অন্ত নেই। এই প্রতিবেদন তৈরির এক অনুসন্ধানে রেরিয়ে এসেছে চমকপ্রদ বেশ তথ্য।

সূত্রে জানা যায়- মুজিবুর রহমান কৃষি শিক্ষার শিক্ষক হয়েও তিনি অতিরিক্ত আর্থিক সুবিধাভোগের জন্য দীর্ঘদিন অত্র স্কুলে অংকের ক্লাস নিয়ে আসছেন। শুধু তাই নয়, ঐ স্কুলে দু’জন গণিত শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও তিনি কিভাবে এমন সুবিধা ভোগ করেন সেটি নিয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মধ্যে রয়েছে নানা প্রশ্ন ও ক্ষোভ। তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায় শিক্ষক মুজিবুর রহমান বি.এড এর সার্টিফিকেট দেখিয়ে নাকি এসব সুবিধা ভোগ করছেন। কিন্তু তার বি.এড সার্টিফিকেটের বৈধতা নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ।

এদিকে অনুসন্ধানে আরো জানা যায়- শিক্ষক মুজিবুর রহমান গত ০৮/০৭/২০১৭ইং তারিখ থেকে ২৭/০৭/২০১৭ ইং তারিখ পর্যন্ত কোনো ছুটি ছাড়াই স্কুলে অনুপস্থিত ছিলেন। তবে পরবর্তীকালে তিনি ব্যাক ডেট দিয়ে একটি দরখস্তের মাধ্যমে মেডিকেল ছুটির আবেদন করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষকের স্বহস্তে লেখা ঐ মেডিকেল দরখস্তের আবেদনপত্রটি ইতোমধ্যে আমাদের হাতে এসেছে পৌঁছেছে।

শিক্ষক মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স্বাক্ষরিত গত ২৮ আগস্ট এক অফিস আদেশ জারি হয়। ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করারও নিদের্শ দেওয়া হয় ঐ আদেশে। অধিদপ্তরের অফিস আদেশের বিষয়টি জেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এবং স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সহ ৯জনকে অবগতি ও প্রয়োজনীয় কার্যার্থে বলা হয়।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অফিস আদেশ ও তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা অফিসার এস,এম সাইদুর রহমান ও কলারোয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবদুল হামিদ এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন গণমাধ্যমকে।

অত্র স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমানুল্লাহ’র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন- শিক্ষা অধিদপ্তরের অফিস আদেশ জারির বিষয়টি আমার জানা নেই। তাছাড়া এটি আমাকে কেউ অবহিত করিনি। শিক্ষক মুজিবুর রহমানের স্কুলে অনুপস্থিত থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঐ শিক্ষক মেডিকেল সার্টিফিকেট সহ ছুটির দরখস্ত করেছিলেন, আমরা সেটি মঞ্জুর করার পর তিনি ছুটি কাটিয়েছেন।

এদিকে প্রধান শিক্ষকের এই বক্তব্যের সাথে ভিন্নমত দিয়েছে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম (লাল্টু)। তিনি বলেন, শিক্ষক মুজিবুর রহমানের ছুটির দরখস্ত মঞ্জুর করার প্রশ্নই আসে না। কারণ তিনি ছুটির জন্য আমাদের কাছে কোনো দরখস্তই করেননি। তাছাড়া যে সময় শিক্ষক মুজিবুর ছুটি কাটিয়েছেন ঐ সময় তিনি ওয়েন্টভুক্ত মামলার আসামী ছিলেন। এজন্য হয়তো তখন স্কুলে অনুপস্থিত ছিলেন।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র আমাদেরকে জানায়- শিক্ষক মুজিবুর ওয়েন্টভুক্ত মামলার আসামী হওয়ায় স্কুলে ২০দিনের মতো অনুপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি ব্যাক ডেট দিয়ে একটি মেডিকেল ছুটির দরখস্ত করেন। তবে, দরখস্তটি তখন মঞ্জুর হয়নি। প্রধান শিক্ষকের সাথে আঁতাত করে ঐ শিক্ষক স্কুলে আধিপত্য বিস্তার করে চলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্কুলের কয়েকজন ছাত্রছাত্রী জানিয়েছে- শিক্ষক মুজিবুরের কাছে অংকের প্রাইভেট পড়তে তাদের বাধ্য করা হয়। বোর্ডের ব্যবহারিক পরীক্ষায় তিনি শিক্ষার্থী প্রতি ৩০০/৪০০ হারে টাকাও নেন বলে তারা অভিযোগ করে।

অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষক মুজিবুর রহমানের কাছে জানতে চাইতে তিনি সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে গণমাধ্যমকে বলেন- আমি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ছুটি কাটিয়েছি। তবে তার ছুটির দরখস্তটি ব্যাক ডেটের এবং সেটি নাকি মঞ্জুর হয়নি এমন প্রশ্ন তুললে তখন ঐ শিক্ষক একটু ইতচ্চবোধ করে বলেন, না এটা ঠিক নয়। আমার দরখস্তটি প্রধান শিক্ষক ও স্কুলের সভাপতি সাহেব মঞ্জুর করেছিলেন।
প্রতিষ্ঠান থেকে অনুমতি বা ছুটি না নিয়ে বিএড করার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন- আমি স্কুল থেকে ছুটি নিয়েই বি.এড করেছিলাম। শান্তা মারিয়াম ইউনিভার্সিটি’র সাতক্ষীরা ক্যাম্পাস থেকে তিনি বিএড করেন বলেও জানান।

মুরারীকাটি গ্রামের অনেক অভিভাবক দাবী জানিয়ে বলেন- শিক্ষক মুজিবুরের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্ত হওয়া জরুরি। তারা বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিও আকর্ষণ করেন।