কেন নির্বাচনকালীন সরকারে আওয়ামী লীগের অনাগ্রহ?

নির্বাচনের বাদ্য চারদিকে। রাজধানীর যেদিকে চোখ যাবে, মনোনয়নের পোস্টার। এলাকাতেও তাই। যদিও এসব প্রচারণায় সরব বেশিরভাগ নেতাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং তাদের শরিক সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির।

এখন পর্যন্ত সুরাহা হয়নি নির্বাচনের সময়কার সরকার বিষয়ে। বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর দাবি, নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে হতে হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

সরকার এবং আওয়ামী লীগও একটা পর্যায়ে চলমান মন্ত্রিসভা ছোট করে রুটিন কাজের জন্য ‘নির্বাচনকালীন’ সরকারের রূপ দেয়া কথা বলেছিল।

তবে তারা সে অবস্থান থেকে সরে এসেছে। নির্বাচন ঘিরে মন্ত্রিসভার আকারে তেমন পরিবর্তন আসছে না। অবশ্য সোমবার সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আভাস দিয়েছেন, বিরোধী দল (জাতীয় পার্টি) দাবি করলে মন্ত্রিসভায় দু’একজন যুক্ত করা হবে। তবে সেক্ষেত্রে কলেবর তেমন বাড়বেও না, আবার ছোটও হবে না।

জানা গেছে, নির্বাচনকালীন— এই তকমা দিয়ে কোনো সরকার গঠনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আগ্রহী নয়। নির্বাচনের যাবতীয় প্রস্তুতি চলতি সরকারের অধীনেই করবে এবং সেভাবেই এগোচ্ছে তারা।

এর পেছনে ক্ষমতাসীনদের শঙ্কা, নির্বাচনকালীন নামে আলাদা সরকার গঠন হলে একটি বিশেষ গোষ্ঠী সক্রিয় হয়ে উঠবে। প্রশাসনেও ঘাপটি মেরে থাকা অংশ সরাসরি কমান্ড মানবে না।

যদিও ক্ষমতাসীনরা প্রকাশ্যে বলছে, বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে সরকার বহাল থেকে নির্বাচন হয়, সেভাবে এখানেও হবে।

নির্বাচনের সময়কার সরকার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘মন্ত্রিসভা ছোট করব কিনা, ভাবছি। এ নিয়ে আমি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলেছি। বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশের সঙ্গেও কথা হয়েছে। তারা তো চলমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন করে। নতুন করে নির্বাচনকালীন সরকার বলতে কিছু করে না। আমরা যেহেতু সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী প্রায় সবগুলো দলকেই মন্ত্রিসভায় রেখেছি। সুতরাং এই মন্ত্রিসভা নিয়ে নির্বাচন করতে কোনো অসুবিধা নেই। তারপরও বিরোধী দল দাবি করলে পরিবর্তন করব। না হয়, করব না।’

সোমবার সংবাদ সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর এই অবস্থান আরো স্পষ্ট করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

মঙ্গলবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘মন্ত্রিসভার বিষয়টি আমাদের ভাবনায় আছে। কি করা হবে, তা আগামী ২৬ অক্টোবর যৌথসভায় চূড়ান্ত হবে। তবে এটা স্পষ্ট নির্বাচনকালীন বলতে কোনো সরকার হবে না। যেভাবে আছে চলবে, মন্ত্রিসভায় দু’একজন সদস্য যুক্ত হবেন। সেটা সরকারি বা বিরোধী দল থেকেও হতে পারে।’

সচিবালয় সূত্রের দাবি, শেষ সময়ে এসে মন্ত্রিসভা থেকে কোনো সদস্যই বাদ পড়তে চান না। তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে যুক্তি তুলে ধরছেন, নির্বাচনের আগে তাদের বাদ দেয়া হলে জনগণের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে নিজ নির্বাচনী এলাকায় ভোটারদের কাছে ছোট হয়ে যাবেন। এজন্য আগ থেকেই তারা দলীয় প্রধানকে বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। সম্ভবত এতে সফলও হয়েছেন।

কারণ, সর্বশেষ সোমবারের আগে যে সংবাদ সম্মেলন প্রধানমন্ত্রী করেছিলেন, সেখানে তিনি নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভার আকার ছোট করার কথা বলেছিলেন। এখন সেই অবস্থান থেকে নিজেই সরে গিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট আরেকটি সূত্রের খবর, আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন করতে চায়। কারণ, নির্বাচনকালীন সরকার বলে কোনো কিছু বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে নেই। বাংলাদেশও তাই করবে। অন্যথা হলে বা নির্বাচনকালীন সরকার করলে, প্রশাসনসহ সর্বত্র প্রভাব পড়বে। বিরোধীরা সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করবে। এজন্যই হয়তো তারা নির্বাচনকালীন সরকার গঠনে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য ৫৩ জন। এদের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী ৩৩ জন, ১৭ জন প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী রয়েছেন ২ জন।-পরিবর্তনের সৌজন্যে প্রকাশিত।