কেন বিএনপি ছেড়ে বিকল্পধারায় শমসের মবিন চৌধুরী

ঠিক তিন বছর আগে বিএনপির তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী যখন রাজনীতি থেকে অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দেন, তখন অবাক হয়েছিলেন অনেকে।

কিন্তু তিন বছর পর গতকাল (শুক্রবার) তিনি আরেকটি চমক সৃষ্টি করলেন বিকল্পধারায় যোগ দেয়ার মাধ্যমে রাজনীতিতে ফিরে এসে।

কেন তিনি তার দীর্ঘদিনের দল বিএনপি ছেড়ে বিকল্পধারায় যোগ দিলেন? বিবিসির এই প্রশ্নের উত্তরে শমসের মবিন চৌধুরি বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট বদরুদ্দোজা চৌধুরির সঙ্গে তার ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল এবং তার সঙ্গে গত কিছুদিন ধরে কথাবার্তা চলছিল।

“উনি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব। উনার অনেক কিছুর সঙ্গে, নীতির সঙ্গে, আদর্শের সঙ্গে, কথা-বার্তার সঙ্গে আমার মিলে যায়। তো মতের মিল থাকাতে, মনে হলো একটা চেষ্টা করে দেখি। সেই কথা ভেবেই আমি আনুষ্ঠানিকভাবে বিকল্পধারা বাংলাদেশে যোগ দিয়েছি।”

বিএনপির রাজনীতিতে শমসের মবিন চৌধুরীর উত্থানটা ছিল বেশ নাটকীয়। তিনি ছিলেন একজন কূটনীতিক এবং সেনা অফিসার। বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর জোট সরকারের আমলে তিনি পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ঐ একই সরকারের আমলে তাকে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতও নিয়োগ করা হয়। চাকরি থেকে অবসরে গিয়ে বিএনপিতে যোগ দেয়ার পর তিনি দ্রুত দলে এক গুরুত্বপূর্ণ নেতায় পরিণত হন।

বিএনপির সঙ্গে কি তার এমন কোন মতপার্থক্য তৈরি হয়েছিল যে তিনি দল বদল করলেন?

এ প্রশ্নের উত্তরে শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, “মতবিরোধ কিছুটা তো অবশ্যই ছিল। যেমন সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রশ্নে। আমি আশা করেছিলাম যে বর্তমান বাংলাদেশের কথা চিন্তা করে বিএনপি তার কাজে কর্মে এবং তার অবস্থানে আরেকটু অসাম্প্রদায়িকতার দিকে চলে আসবে। সেসব বিষয়ে আমি বাধা পাচ্ছিলাম। আমার মনের মতো হচ্ছিল না। দ্বিতীয়ত নাশকতার রাজনীতিতে আমি মোটেও বিশ্বাস করি না। সেটা সবধরণের নাশকতা। পেট্রোল বোমা দিয়ে পুড়িয়ে মারা হোক, বা লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মারা হোক।”

তিনি যে প্রথমে বিএনপির রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন, এখন আবার বিকল্প ধারায় যোগ দিলেন, এরকম রাজনৈতিক অবস্থান নেয়ার পেছনে সরকারের কি কোন চাপ আছে?

এর উত্তরে শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, “সরকারের চাপ থাকলে তো অনেক আগেই থাকতো। এটা নিতান্তই আমার একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই আমি এই পদক্ষেপ নিয়েছি।”

তিনি কি বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা ভাবছেন?

শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, “এটা তো সময় বলে দিতে পারবে। এই মূহুর্তে তো বলা মুশকিল নির্বাচনে আমি অংশ নিতে পারবো কিনা, অংশ নেব কিনা। আমি এখন একটা দলের সঙ্গে আছি। সেই দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঠিক করবো।”

২০১৩ সালে নির্বাচন প্রশ্নে যখন জাতিসংঘের উদ্যোগে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতার আলোচনা চলছিল, সেই আলোচনায় বিএনপির পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল শমসের মবিন চৌধুরীকে। তখন বিএনপি যে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সেই সিদ্ধান্তকে তিনি কিভাবে দেখেন?

এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিএনপি তখন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সেটিকে সেই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে দেখতে হবে। তখন বিএনপি ভেবেছিল হয়তো নির্বাচনে না যাওয়াটা তাদের জন্য ভালো। তবে আমার মতে বিএনপি ঐ নির্বাচনে অংশ নিলে হয়তো তাদের ক্ষতি খুব একটা হতো না।”

-বিবিসি বাংলা