কেন সৌদি আরবে সেনা পাঠাচ্ছে পাকিস্তান?

প্রথমে আগ্রহী না হলেও সিদ্ধান্ত বদলিয়ে সৌদি আরবে সেনা পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে পাকিস্তান। ‘প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ’ মিশনে এ সেনা পাঠানো হচ্ছে বলে পাক সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। তবে কত সংখ্যক সেনা পাঠানো হবে তা বলা হয়নি।

ইতোমধ্যে ১৩৭৯ জন পাক সেনা সৌদি অবস্থান করছে। যার বেশিরভাগই সেনা সদস্য। এ ছাড়া নৌ ও বিমান বাহিনীর কিছু সদস্যও এর মধ্যে রয়েছে।

এর আগে পাকিস্তান সৌদি আরবে সেনা পাঠানোর ব্যাপারে অনাগ্রহ প্রকাশ করে। কারণ দেশটির পার্লামেন্টে যে প্রস্তাব পাস হয়েছে তা এই সিদ্ধান্তের (সেনা পাঠানো) পরিপন্থী। ওই প্রস্তাবে বলা আছে, মধ্যপ্রাচ্য, বিশেষ করে ইয়েমেনের সংঘাতে অংশ নেবে না পাকিস্তানি সেনা। তাছাড়া সৌদি আরবে সেনা পাঠালে তেহরানের সঙ্গেও সম্পর্কের অবনতির শঙ্কা করেছিল ইসলামাবাদ।

কিন্তু সে অবস্থান থেকে সরে এসে নতুন করে রিয়াদে সেনা পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে ইসলামাবাদ। বিষয়টি নিয়ে দেশটিতেও শুরু হয়েছে নানা বিতর্ক। বিশেষ করে, পার্লামেন্টের বিরোধী দলগুলো এর বিরোধিতা করছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে বিষয়টি পার্লামেন্টে স্পষ্ট করারও আহ্বান জানানো হয়েছে।

ইয়েমেন, লেবানন তথা গোটা মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে যখন তেহরান ও রিয়াদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে তখন পাকিস্তানের এই সিদ্ধান্ত এটাই প্রমাণ করে যে, ইসলামাবাদ সৌদি পরিমণ্ডলে নিজেদের জড়িয়ে ফেলছে। সেইসঙ্গে তেহরানের সঙ্গে ইসলামাবাদের সম্পর্কের অবনতি হবে সেটা তারা মেনে নিয়েই যে এই উদ্যোগ নিচ্ছে তাও স্পষ্ট।

কিন্তু কেন এই পরিবর্তন? সৌদি আরব ও পাকিস্তানি কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে এ ব্যাপারে যখন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হচ্ছেন না, তখন আমার (টম রোগান) মনে হয়, এখানে দুটি বিষয় কাজ করছে।

প্রথমত, পাকিস্তান বুঝতে পারছে যে, যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমান খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বাবার কাছ থেকে ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়ে নিবেন। সে কারণে তাকে (যুবরাজ) পাকিস্তানের প্রতি ইতিবাচক রাখতে হবে। ইতোমধ্যেই বিন সালমান দেশটির কার্যত নেতায় পরিণত হয়েছেন। কারণ তিনি এরই মধ্যে অনেক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই পাক আর্মি বিন সালমানকে সন্তুষ্ট রাখতে চাচ্ছে। কারণ আর যাই হোক, পাকিস্তানের অর্থনীতি যে এখনও সৌদি আরবের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল সেটা মনে রাখতে হবে।

তাছাড়া এক্ষেত্রে একটি ব্যক্তিগত কারণও থাকতে পারে। পাকিস্তানের সাবেক সেনাপ্রধান রাহিল শরীফ সৌদি অর্থায়নে পরিচালিত প্যান-ইসলামিক ন্যাশনের প্রধান। রিয়াদভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠানটি সন্ত্রাস দমনের উদ্দেশ্যে গঠন করা হয়েছে। রাহিল শরীফ ইতোমধ্যে বিন সালমানের আস্থা অর্জন করতে পেরেছেন এবং তিন চান যে, ইসলামাবাদ রিয়াদের সঙ্গে সম্পর্ক অব্যাহত রাখুক।

দ্বিতীয়ত, সৌদি আরব ইরানকে মোকাবিলার সক্ষমতা অর্জন করতে চায়। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও মার্কিন সেনাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সৌদি সেনারা যদিও এখন সুসজ্জিত, কিন্তু তারা আক্রমণ ও ইরানি সেনাদের ব্যাপারে কম অভিজ্ঞ। এক্ষেত্রে পাকিস্তান সেনারা, যারা সব সময় যুদ্ধ-বিগ্রহ মোকাবিলা করে অভ্যস্ত, সৌদি সেনাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

তাছাড়া কূটনৈতিক দিক থেকেও বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর মাধ্যমে, যদি অন্য কোনো কিছু না ঘটে, পাক-সৌদি মিত্রতা আরো ঘনিষ্ঠ হবে এবং ইরান বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। আর সেটাই চাওয়া সৌদি আরবের।