কেবল রাষ্ট্রই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে বাস মালিকদের

দেশের সড়ক-মহাসড়কে চলাচল করা যানবাহনের ৭২ শতাংশেরই ফিটনেস নেই। অন্যদিকে ৭০ লাখ চালকের মধ্যে ৫৪ লাখের বৈধ লাইসেন্স নেই। এমন সব তথ্য উঠে এসেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যানে।

শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘সড়কে নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনা উত্তরণে উপায়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় সমিতির পক্ষ থেকে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠান থেকে জানানো হয়, মালিক, শ্রমিক নেতা আর কিছু রাজনীতিবিদ গণপরিবহন খাতকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নাগরিকদের জিম্মি করে রেখেছেন।

সম্প্রতি দুটি বাসের রেষারেষির ঘটনায় সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব মারা যাওয়ার ঘটনা দেশবাসীকে কাঁদিয়েছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলেছে, প্রতিদিন সারা দেশে অন্তত ৬৪ জন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হচ্ছেন। এ ছাড়া আহত হচ্ছেন অন্তত দেড়শ জন।

গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা বলেন, চালক আর ফিটনেসবিহীন গাড়ির কারণে দুর্ঘটনা বেড়েই যাচ্ছে। গত তিন মাস ২০ দিনে ১ হাজার ৮৪১ জন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। আর আহত হয়েছে ৫ হাজার ৪৭৭ জন। দিনের পর দিন এভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে অথচ দেখার কেউ নেই। যে যেভাবে পারছে সড়কে চাঁদাবাজি করছে আর পরিবহন খাতকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করছে।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ‘এক তৃতীয়াংশের তো ফিটনেস আছে আর যেটার ফিটনেস আছে সেটাও তো অ্যাকসিডেন্ট করবে। একটা পর্যবেক্ষণের জন্য তো অনেক সরকারি কর্মচারী আছেন। মোর দ্যান হান্ড্রেড পারসেন্ট সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তারপরেও যদি সরকারি কর্মচারীদের আবার উপরির দিকে যেতে হয়, চোখ বন্ধ করে থাকতে হয় এটা তো কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য না। সড়ক পরিবহন সমাজে কিভাবে নৈরাজ্য চলছে, কিভাবে অবস্থাটা চলছে? বাস্তবচিত্র। আমাদের কোনো অগ্রগতি তো হচ্ছে না। ’

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলতে চাই। কেননা আমাদের সড়কের সমস্ত অব্যবস্থাপনা, বিশৃঙ্খলা জিইয়ে রেখে নৈরাজ্যকর পরিবেশে আমাদেরকে যাতায়াতে বাধ্য করা হচ্ছে।’

প্রকৃত মালিক সংগঠনকে কোণঠাসা করে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় কিছু সংগঠন পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি, পারমিট বাণিজ্য আর ক্ষমতা প্রদর্শনে ব্যস্ত। আর এসব সংগঠনের কাছে সরকারও মাথা নত করছে বলে মনে করেন বক্তারা। তারা বলেন, বিচার না হওয়ার কারণে গণ পরিবহনে নৈরাজ্য বাড়ছে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘এই সরকার প্রকৃত অর্থে জনগণের সুবিধা তৈরি করার জন্য, জনগণের জীবনকে আরো সহজ করার জন্য যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া দরকার এগুলোর বিষয়ে তার মাথাব্যথা নেই। মাথাব্যথা আছে কতগুলো বড় বড় প্রকল্প করার জন্য, আনপ্ল্যানড প্রকল্প করার জন্য। যেগুলো এই শহরকে আরো বিপদে ফেলবে।’

বাস কোম্পানির মালিককে একমাত্র রাষ্ট্রই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে বলে মত দেন আলোচকরা। তাঁরা বলেন, পরিবহন খাতে যে অরাজকতা চলছে তা বন্ধ করতে না পারলে নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব না, আর যেখানে জীবনের নিরাপত্তা নেই সেই দেশ অর্থনৈতিকভাবে খুব বেশি দূর এগুতে পারবে না বলেও অভিমত বিশিষ্টজনদের।