কোচিং বন্ধের নির্দেশনা নিয়ে কী বলছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা?

স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের কোচিং বন্ধে উচ্চ আদালতের আদেশকে স্বাগত জানিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলছেন, কোচিং নীতিমালা পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসম্মত পাঠদান নিশ্চিত করতে হবে। আর শিক্ষকরা বলছেন, এ উদ্যোগের কার্যকরী ফল পেতে কোচিং নির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ জরুরি।

বিভিন্ন সময় প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে। শিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণের অভিযোগের তীরও দেশের আনাচে-কানাচে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে। নানা সমালোচনা ও শিক্ষাবিদদের পরামর্শে ২০১২ সালে কোচিং নীতিমালা করে সরকার। কিন্তু আইন বাধ্যবাধকতায় প্রায় ছয় বছর ঝুলে থাকে সেটির বাস্তবায়ন। বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সরকারের ওই নীতিমালাকে বৈধ ঘোষণা করে আদেশ দেন উচ্চ আদালত।

এ আদেশের ফলে, সরকারি-বেসরকারি কলেজের শিক্ষকরা এখন থেকে কোচিং করাতে পারবেন না। উচ্চ আদালতের এমন সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদানে ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রত্যাশা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।

অভিভাবকরা মনে করেন এতে শিক্ষা ক্ষেত্রে বাণিজ্য কমবে এবং শ্রেণীকক্ষেই পাঠদানের বিষয়ে আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে। শিক্ষার্থীরা মনে করেন, শিক্ষকরা যদি শ্রেণীকক্ষেই যথাযথভাবে পাঠদান করেন তবে তাদের আর বাইরে কোচিং করতে হবে না।

এ অবস্থায় নীতিমালা পূর্ণ বাস্তবায়নে শিক্ষকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় এবং সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান শিক্ষকদের।

স্কলার্সহোম স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) জুবায়ের সিদ্দিকী বলেন, শ্রেণীকক্ষের বাইরে টাকার বিনিময়ে পাঠদান করাকে অনুৎসাহিত করাই উচিৎ।

বঙ্গবন্ধু রাজশাহী কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. কামরুজ্জামান মনে করেন, শিক্ষকদেরকে যদি আর্থিকভাবে আরও সমৃদ্ধ করা যায়, কিংবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও উন্নত করা যায় তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়েরই শ্রেণীকক্ষের প্রতি আকর্ষণ বাড়বে।

এই কলেজের অধ্যক্ষ মো. নুরুল ইসলাম বলেন, মন দিয়ে ক্লাস করলে কোনো কোচিংয়ের প্রয়োজন পড়বে না।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মানসম্মত পাঠদান নিশ্চিত এবং নীতিমালা বাস্তবায়নে সরকারকে সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হবে।

রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ মো. হাবিবুর রহমান মনে করেন, কোচিং বন্ধ হলে শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষার দিকে এগিয়ে যাবে।

তবে সিলেট শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আবদুল কুদ্দুছ বলেন, শিক্ষকের সহায়তা ছাড়াও যাতে শিক্ষার্থীরা পড়তে পারে সে অনুযায়ী সিলেবাস ও বই প্রণয়ন করা প্রয়োজন। সেটা না করে হঠাৎ এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হলে বেশি সুফল পাওয়া যাবে না।

তবে কোচিং করাতে না পারলেও প্রয়োজন সাপেক্ষে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে ঘণ্টায় ১৭২ টাকা পারিশ্রমিকে ১০ জন ছাত্র পড়ানোর সুযোগ পাবেন স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা।