কোটি টাকার বিশ্বকাপ টিকিট কিনছে বিসিবি

দেশে খেলা হলেই সৌজন্য টিকিটের জন্য বিশাল লাইন পড়ে বিসিবিতে। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি এমনও হতে দেখা গেছে, সৌজন্য টিকিটের চাহিদা মেটাতে গিয়ে বঞ্চিত করা হয়েছে ক্রিকেটের পাঁড় সমর্থকদের। সেখানে এবার বিশ্বকাপের খেলা হবে ইংল্যান্ডে মতো দেশে। টিকিট থাকলে রথ দেখা আর কলা বেচার মতো বিলেত দর্শন ও বিশ্বকাপের খেলা দেখা দুই হবে। এই সুযোগ কাজে লাগাতেই দেশ-বিদেশ থেকে বিসিবির কাছে চাওয়া হচ্ছে বিশ্বকাপের টিকিট। নানা মহল থেকে বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে টিকিটের জন্য ধরনা দিয়েছে। বাধ্য হয়েই টিকিটের জন্য আইসিসির দ্বারস্থ হতে হয়েছে বিসিবিকে। এ নিয়ে ক্রিকেটের পরিচালকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, প্রায় দুই কোটি টাকার টিকিট কেনার উদ্যোগ নিয়েছে বোর্ড। সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী এ সম্পর্কে বলেন, ‘বোর্ডের স্টেকহোল্ডারদের কিছু টিকিট দিতে হবে। আইসিসি থেকে যে টিকিট পাওয়া যায়, তা দিয়ে সবার চাহিদা পূরণ হবে না। স্টেকহোল্ডারদের চাহিদা পূরণ করতে কিছু টিকিট কিনতে হচ্ছে। হাতে পাওয়ার পরই টিকিটের সংখ্যা জানাতে পারব।’

বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচের জন্য আইসিসি থেকে ১০০টি করে সৌজন্য টিকিট পাবে বিসিবি। লীগ রাউন্ডের নয়টি ম্যাচ থেকে পাওয়া যাবে ৯০০টি টিকিট। আইসিসি খেলোয়াড়দের জন্য দেয় এই টিকিট। কিন্তু বিসিবি এ থেকে ক্রিকেটারদের জন্য বরাদ্দ করে ম্যাচপ্রতি দুটি করে টিকিট। বাকি ৭০টি টিকিট বিসিবি রেখে দেয়। নয় ম্যাচে ৬৩০টি টিকিট থাকবে বোর্ডের হাতে। যা থেকে বিসিবি পরিচালকদের প্রতি ম্যাচে দেওয়া হবে দুটি করে টিকিট। ২৫ জন পরিচালকের জন্য ৯ ম্যাচে বরাদ্দ থাকবে ৪৫০টি টিকিট। অবশিষ্ট ১৮০টি টিকিট দিয়ে বিশাল চাহিদা পূরণ হওয়ার নয় বলে জানান নিজামউদ্দিন চৌধুরী। তাই ঢাকার ক্লাব ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের চাহিদা মেটাতে আইসিসি থেকে টিকিট কিনতে হচ্ছে। পরিচালকরাও বোর্ডের কাছ থেকে টিকিট কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বিশেষ করে ঈদ সামনে থাকায় টিকিটের চাহিদা বেড়ে গেছে। যে কারণে, টিকিট কিনতে কোটি কোটি টাকা গুনতে হচ্ছে বোর্ডকে। তবে, কত টাকার টিকিট কেনা হচ্ছে জানতে চাওয়া হলে বিসিবি সিইও বলেন, ‘টিকিট হাতে পাওয়ার পর টাকার পরিমাণ জানাতে পারব। খুব বেশি টাকা খরচ হবে না। আমাদের দিক থেকে আইসিসির কাছে যে টিকিট চাওয়া হয়ছে, তা নাও দেওয়া হতে পারে। কারণ অন্য বোর্ডগুলোও তো টিকিট কিনবে।’

তিন কোটি টাকার সমপরিমাণ টিকিট চেয়ে ‘রিকুজিশন’ দেওয়ার সুযোগ রেখেছে আইসিসি। একজন পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিসিবি থেকেও তিন কোটি টাকা সমমূল্যের টিকিট চাওয়া হয়েছে। শেষ পর্যন্ত দুই কোটি টাকার টিকিট পাওয়া যেতে পারে। জাতীয় দলের একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, গত ২২ মে লন্ডন থেকে টিকিট সংগ্রহ করেছেন বোর্ডের একজন কর্মকর্তা। বেশিরভাগ টিকিটই লন্ডন থেকে পার্সেলের মাধ্যমে ঢাকায় পাঠিয়েছেন তিনি। বিসিবির কাছে দু-একদিনের মধ্যেই টিকিট পার্সেল পৌঁছে যেতে পারে। আর কিছু টিকিট ইংল্যান্ডে জাতীয় দলের ম্যানেজারের কাছে রেখে দেওয়া হয়েছে। বিশ্বকাপের টিকিট কিনতে আইসিসির সঙ্গে যাবতীয় যোগাযোগ করেছেন বিসিবির সভাপতির পিএস তৌহিদ মাহমুদ। তার কাছে এ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে বলেন, ‘যে পরিমাণ টিকিট কেনা হয়েছে, বিসিবি হয়তো তা থেকে ১০ ভাগ রাখবে। এই টিকিটগুলো রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় দেওয়া হতে পারে। বাকি ৯০ ভাগ টিকিটই বিসিবি পরিচালক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কিনে নেবেন। টাকা পরিশোধ করার পরই টিকিট দেওয়া হবে।’ যদিও স্টেকহোল্ডাররা বিসিবির কাছ থেকে টিকিট পাওয়া নিয়ে শঙ্কার মধ্যে আছেন। একজন পরিচালক জানান, ক্রিকেট সংশ্নিষ্টদের কথা বলা হলেও প্রভাবশালীরাই টিকিট ভাগাভাগি করে নিতে পারেন। তার এই শঙ্কার কারণও আছে, প্রভাবশালীদের সঙ্গে সংশ্নিষ্টরা যে হারে ভিসা করেছেন, তাদের চাহিদা মেটাতেই হিমশিম খেতে হতে পারে বিসিবিকে।