কোটি টাকা দিয়ে যে দলকে টানছে বিসিবি

আজ শুরু হচ্ছে ফ্র্যাঞ্চাইজি বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের (বিসিএল) ষষ্ঠ আসর। চার দলের ডাবল লিগ পদ্ধতির টুর্নামেন্টের প্রথম দিনে সিলেটে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বিসিবি উত্তরাঞ্চল মুখোমুখি হবে দুবারের চ্যাম্পিয়ন ওয়ালটন মধ্যাঞ্চলের। বিকেএসপিতে দুবারের চ্যাম্পিয়ন প্রাইম ব্যাংক দক্ষিণাঞ্চল খেলবে ইসলামী ব্যাংক পূর্বাঞ্চলের বিপক্ষে। নামগুলো খেয়াল করেছেন? একটা দল বাদে বাকি তিনটারই কিন্তু স্পনসর নেই। অথচ এই দলটাই বর্তমান চ্যাম্পিয়ন!

ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট হওয়ার পরও বিসিএলের এই একটি দল বছরে পর বছর অবিক্রীত। স্পনসর না পাওয়ায় কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে উত্তরাঞ্চল দলকে ২০১২-১৩ মৌসুমে লিগের প্রথম আসর থেকেই পৃষ্ঠপোষকতা করছে বিসিবি। অনেকে মজা করে উত্তরাঞ্চলকে তাই ‘সরকারি দল’ বলে ডাকেন!

বিসিবির সর্বশেষ নিরীক্ষা অনুযায়ী, অবিক্রীত থাকা বিসিবি উত্তরাঞ্চলের পেছনে ব্যয় ও টুর্নামেন্ট পরিচালনায় গত পাঁচ বিসিএলে খরচ হয়েছে ৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের ধারণাটি হলো, এটি চালাবে ফ্র্যাঞ্চাইজগুলো। বিপিএলের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে তো টাকার ঝনঝনানি। ২০১২ থেকে ২০১৬—চার বিপিএলেই বিসিবির আয় ১২২ কোটি ২৯ লাখ টাকা। ঘরোয়া ক্রিকেটের ৮০ শতাংশ আয় আসছে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক এই টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট থেকে।

বিসিএল সেখানে ব্যতিক্রম। ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক এই লিগ থেকে ক্রিকেট যেখানে বড় অঙ্ক টাকা আয়ের কথা, সেখানে উল্টো ভর্তুকি গুনছে বিসিবি। টি-টোয়েন্টির তুলনায় বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে মানুষের আগ্রহ কিছুটা কম হওয়ায় বিসিএল হয়তো বিপিএলের মতো অর্থপ্রসবা হবে না। কিন্তু বিসিএলের চার দলের বাকি তিনটি যদি পৃষ্ঠপোষক পায়, একটি কেন পাচ্ছে না? ওয়ালটন, প্রাইম ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে নতুন সঙ্গী কেন খুঁজে পাচ্ছে না বিসিবি?

উত্তরাঞ্চলের স্পনসর না পাওয়া নিয়ে বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী বললেন, ‘তিন দলে যদি দেখেন, (বিসিবির) বর্তমান পৃষ্ঠপোষকেরাই তাদের স্পনসর হচ্ছে প্রতি মৌসুমে। নতুন কাউকে আনা যায় কি না, সেটা আমরা চেষ্টা করছি। ‘‘পণ্য’’ হিসেবে লিগটা (বিসিএল) নতুনদের কাছে হয়তো আকর্ষণীয় মনে হচ্ছে না। এখানে লগ্নি করে যে প্রাপ্তি, সেটি বর্তমান পৃষ্ঠপোষকেরা যেভাবে দেখছেন, সম্ভাবনাময়ী পৃষ্ঠপোষকেরা হয়তো সেভাবে দেখছেন না। তবুও আমরা চেষ্টা করব, পরের মৌসুমে এই দলটির কোনো স্পনসর পাওয়া যায় কি না।’

কাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ত্রিদেশীয় সিরিজের টিকিট বিক্রি ও দলের জার্সি স্পনসরের নাম ঘোষণার সময় যখন দুই পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা বারবার বলছিলেন, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে থাকতে পেরে, বিসিবির সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে ভীষণ গর্বিত’, বিসিবির প্রধান নির্বাহীর ব্যাখ্যাটা তখন কানে বাজছিল! টি-টোয়েন্টি দিয়ে তো আর দেশের ক্রিকেটের উন্নতি হবে না। দেশের ক্রিকেটের আসল অক্সিজেন হবে ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট।