কোনো প্রতিবন্ধকতাই রুখতে পারছে না ফিলিস্তিনি প্রতিবন্ধীদের

কেউ কেউ তাকে দেখে হাসতেন। অন্যরা বলতেন-তিনি সফল হবেন না। আব্দুল রহমান আবু রাওয়া শেষ পর্যন্ত সবার ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করলেন। কেবল তার জোর ইচ্ছা ও ইতিবাচক মনোভাবের জন্যই এটি সম্ভব হয়েছে।

গাজার বালুময় সড়কে কেবল একটি হাত ও পা দিয়ে তিনি সাইকেলে চড়ে বেড়ান। উপত্যকাটির বেদুইন গ্রামে প্রতিবেশীদের কাছে এ সাইকেলে বাহন করেই তিনি ঘুরতে যান।

আবু রাওয়া বলেন, সবাই আমাকে নিরুৎসাহিত করতেন। বলতেন-এটি ভয়ঙ্কর। কেউ কেউ আমাকে ভর্ৎসনাও করতেন।

এমনকি হাসি তামাশার খোরাক হওয়ার কথা জানিয়ে এ ফিলিস্তিনি যুবক বলেন, তবে আমি এটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। কিন্তু সবাইকে দেখিয়ে দিয়েছি-আমার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা আমাকে অক্ষম করতে পারেনি।

২৩ বছর বয়সী এ যুবক বলেন, নতুন কিছু করার নামই হচ্ছে জীবন। একটি হাত ছাড়াই জন্ম নিয়েছিলেন রাওয়া। পরে অস্ত্রোপচার করে একটি পাও হারান।

সোমবার ছিল বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস। নানা রকম প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ফিলিস্তিনি প্রতিবন্ধীরা জীবন জয়ের যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে নিজ ভূমির অধিকার রক্ষার স্বাদ পেতে পঙ্গু ফিলিস্তিনিরাও ইসরাইলিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পিছু হটছে না। গুলির মুখে বুক চিতিয়ে দিয়ে শহীদ হচ্ছেন।

অনেকে হাত-পা হারালেও স্বপ্ন জিইয়ে রেখে আবার নতুন জীবন শুরু করছেন। শুরু করেছেন স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে চলা।

এমন ফিলিস্তিনি এক তরুণ আলা আলদালি।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের ৩০ মার্চ থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ কর্মসূচির জের ধরে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় অন্তত পাঁচ হাজার ৩০০ ফিলিস্তনি আহত হয়েছেন।

এদের মধ্যে অন্তত ৬৮ জনের পা কেটে ফেলতে হয়েছে। তাদেরই একজন আলদালি।

৩০ মার্চ দ্য গ্রেট মার্চ রিটার্ন কর্মসূচিতে ইসরাইলি সেনার ছোড়া একটি গুলি এসে তার পায়ে লাগে। আঘাতটি গুরুতর হওয়ায় পরে অস্ত্রোপচার করে পা কেটে ফেলতে হয়।

তার চলাফেলার একমাত্র অবলম্বন সাইকেল। আলদালির স্বপ্ন ছিল-গত আগস্টে ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত সাইকেল রেস প্রতিযোগিতায় নাম লেখানোর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ফিলিস্তিনির প্রতিনিধিত্ব করা।

ইসরাইলের একটি গুলি তার স্বপ্নকে গুঁড়েবালি করে দেয়। দক্ষিণাঞ্চলীয় গাজার রাফাহ এলাকার বাসিন্দা আলদালি বলেন, তারা (ইসরাইলি সেনারা) আমার পা কেটে ফেলেছে, কিন্তু আমার স্বপ্নকে নয়।

তিনি বলেন, আমার প্রিয় খেলা নিয়েই আবার আমি ফিরে আসব। আমরা অবশ্যই আবার আগের বাড়িতে ফিরে যাব। আমরা ফিলিস্তিনিরা যে ত্যাগ স্বীকার করছি, তা বৃথা যেতে পারে না।