‘কোনো হাসপাতালেই জায়গা নেই, এত বেশী ডেঙ্গু রোগী’

বাংলাদেশে রাজধানী ঢাকার হাসপাতালগুলো ডেঙ্গু রোগীর ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। “হাসপাতালগুলোতে বলতে গেলে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছে। কারণ কোন জায়গায়ই বেড খালি নেই। সরকারি হাসপাতালে বারান্দায় অতিরিক্ত বেড দিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা চলছে। অনেক রোগীকে ফেরত দেয়া হচ্ছে” – বলছিলেন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের সাবেক ডীন ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ।

ডা. আব্দুল্লাহ জানান, এ মৌসুমে কয়েক হাজার ডেঙ্গু রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছেন তিনি।

“এ বছর তো অনেক রোগী দেখলাম, সেই জানুয়ারি থেকে শুরু করেছি। মে জুন থেকে তো ডেইলি প্রচুর রোগী দেখছি। প্রতিদিনই বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীরা ভিড় করছেন, অনেকেই সিটের অভাবে ভর্তি হতে পারছেন না” – বিবিসি বাংলাকে বলেন তিনি।

“যেখানে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হওয়ার কথা না যেমন নিউরোলজি ওয়ার্ড, সিসিইউ ইত্যাদিতেও বেড দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে,” বলেন তিনি।

ডেঙ্গুর চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে বেড পেতে ভোগান্তির কথা বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন একজন চাকরিজীবী শারমীন নিপা।

তার ৫ বছর বয়সী মেয়ে, ছোট বোন, ছোট ভাইসহ পরিবারের তিন সদস্য ডেঙ্গুতে আক্রান্ত । এরমধ্যে ছোট ভাই চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরলেও চার দিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ছোট বোন। নতুন করে জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন তার বাবা। ধারণা করা হচ্ছে, তিনিও ডেঙ্গুতেই ভুগছেন।

তিনি বলেন, “আমার বোন যখন ভর্তি হয় ওর ১০৩ বা ১০৪ জ্বর ছিলো। কিন্তু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর ওরা সিট দিতে পারছিলো না। সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করে কোন রকমে একটি ওয়ার্ডে সিট ম্যানেজ করে তারপর ভর্তি করি।”

ডেঙ্গু রোগের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম বলেছে, গত ২৪ ঘণ্টাতেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৪৭ জন। গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত এই সংখ্যা ৯ হাজার ২৫৬ জন।

সরকারি হিসাব বলছে, এবছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৮ জন। তবে, বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা আরো অনেক বেশি।

অন্যদিকে ডেঙ্গু রোগের জীবাণুবাহী এডিস মশা নির্মূলের কার্যকর প্রক্রিয়া জানাতে দুই সিটি কর্পোরেশনকে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন হাইকোর্ট।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান দুই স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে তলবের পর তারা আদালতে উপস্থিত হলে এক শুনানির পর এই নির্দেশ দেয় হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ।

গত ২২ জুলাই মশা মারার কার্যকর ওষুধ আনার প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

আজ আদালতে হাজির হওয়ার পর তাদের বক্তব্য শুনেছেন আদালত। পরে সে প্রেক্ষাপটে মশা মারার ওষুধ নিয়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সায়রা ফায়রোজ বলেন, “হাইকোর্ট বলেছেন, কী ওষুধ দিলে মশা মারা যাবে? কারণ রোগটা তো এখন মহামারী আকার নিয়েছে।”

“তখন সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা বলেন, তারা যে ওষুধ দেন তার ডোজ দ্বিগুণ করে তারা দেখতে চান – একটি নির্দিষ্ট এলাকায় মশা মরে কিনা। এজন্যই তারা সময় চেয়েছে। হাইকোর্ট আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় দিয়েছে।”