ক্যানসার সারতে হাসপাতালে, মারা গেলেন ডেঙ্গুতে

ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জটিল অস্ত্রোপচার সফল হয়েছিল কলকাতার সোদপুরের বাসিন্দা মৌ দত্তের (৪০)। কিন্তু হেরে গেলেন ডেঙ্গুর কাছে। তাও আবার হাসপাতালেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। তার ৯ বছর একটা মেয়ে আছে।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সোদপুরের এইচবি টাউনের বাসিন্দা ওই নারী গত ১২ সেপ্টেম্বর অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের জন্য মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি পর্বের জন্য লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত মৌ টানা কয়েক সপ্তাহ হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন।

গত ৫ অক্টোবর হাসপাতালের পক্ষে পরিবারকে জানানো হয়, তার জ্বর হয়েছে। যদিও রক্ত পরীক্ষায় কোনও সংক্রমণ ধরা পড়েনি। ৭ অক্টোবর তার অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করা হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো প্রতিস্থাপনের পরও মৌ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। ১০ তারিখ হাসপাতালের পক্ষে জানানো হয়, তার রক্তে এনএস-১ পজিটিভ পাওয়া গেছে। ১১ অক্টোবর চিকিৎসকেরা জানান, ডেঙ্গুতে মৌয়ের মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক। ১২ তারিখ, শুক্রবার তিনি মারা যান।

হাসপাতালের দেওয়া ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে ‘ডেঙ্গু হেমারেজিক শক’উল্লেখ করা হয়েছে।

পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতাল থেকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় মৌ। তার স্বামী স্বর্ণাঙ্কুর দত্ত জানান, মৌ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু জ্বর কিংবা বমির মতো কোনও উপসর্গ ছিল না। অথচ হাসপাতালের বিশেষ নজরদারি থাকা ঘরে থাকাকালীনই তার দেহে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ধরা পড়ে।

স্বর্ণাঙ্কুরের কথায়, ‘মশার কামড়ে ডেঙ্গু হয়। তাহলে হাসপাতালেই যখন ডেঙ্গু সংক্রমণ হয়েছে, বোঝাই যাচ্ছে, হাসপাতাল পর্যাপ্ত নজরদারি করে না।’

তবে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, অস্থিমজ্জার চিকিৎসায় মৌকে একাধিক বার রক্ত দিতে হয়েছে। বিভিন্ন ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে সেই রক্ত কিনে আনা হয়েছিল। ফলে সেই রক্ত থেকেই সংক্রমণ ছড়িয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। হাসপাতালের এ যুক্তিতে গাফিলতির অভিযোগ এড়ানো যাবে না বলেই জানাচ্ছে মৃতার পরিবার।

তাদের অভিযোগ, বাইরের ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে কিনে আনা রক্তে কোনও রকম সংক্রমণ রয়েছে কি না, সেটা যাচাই করার দায়িত্বও তো হাসপাতালের। তাই হাসপাতাল কোনও ভাবেই দায় এড়াতে পারে না। হাসপাতালের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য কমিশনে অভিযোগ দায়ের করা হবে।

মুকুন্দপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, তাদের কাছে কোনও লিখিত অভিযোগ করা হয়নি। অভিযোগ পেলে ঘটনা খতিয়ে দেখা হবে।