‘ক্যাম্পাসে যায় না বাস, ভোগান্তিতে কুবি শিক্ষার্থীরা’

ইমদাদুল হক মিরন, কুবি থেকে : বাস নিয়ে নতুন করে ভোগান্তিতে পড়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীরা। রাস্তা মেরামতের দোহাই দিয়ে গত কয়েকদিন ধরে ক্যাম্পাস পর্যন্ত যাচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে নিয়োজিত বাসগুলো। এতে ভাড়া খরচ করে যাতায়াতে বাধ্য হচ্ছেন দেশের ২৬তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের অধীনে কুমিল্লা সদর দক্ষিণের কোটবাড়িতে ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কারকাজ চলছে, যার কারণে কোটবাড়ি থেকে সালমানপুর পর্যন্ত যানবাহন চলাচল শিথিল হয়ে পড়েছে। এই রাস্তা দিয়ে ছোটখাটো যানবাহন চলাচল করলেও বাসের মত বড় যানগুলো চালনা করা সম্ভব নয়। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বহনকারী বাস বিকল্প পথে (ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বেলতলি রোড দিয়ে) বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করলেও শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহৃত কোনো বাসই ক্যাম্পাস পর্যন্ত যাচ্ছে না। এতে ভাড়া খরচ করে ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করেন প্রায় চার হাজার শিক্ষার্থী।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এতদিন রাস্তা মেরামতের দোহাই দিয়ে বিআরটিসির ভাড়া করা বাসগুলো কোটবাড়ির কুমিল্লা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট পর্যন্ত এসে থেমে যেত। রবিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব (‘নীল বাস’ হিসেবে পরিচিত) বাসগুলোও অনুসরণ করছে একই পন্থা। এতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরেই নেমে যেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এরপর কেউ এই দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে গমন করেন, কেউ আবার পকেটের টাকা খরচ করে ব্যবহার করেন পাবলিক ট্রান্সপোর্ট। শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাস বিকল্প পথে যাতায়াত করলেও শিক্ষার্থীদের বাসগুলো বিকল্প পথ ব্যবহার না করায় শিক্ষার্থীদের মনে রয়েছে ক্ষোভ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ছাত্র জহির রায়হান বলেন, ‘আমাদের বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। বাস বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যায় না বলে প্রতিদিন আমাদের পকেটের টাকা খরচ করে যাতায়াত করতে হয়। অনেকে এই দীর্ঘ পথ হেঁটে আসে।’

নৃবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী সায়মা ইসলাম থাকেন দৌলতপুর এলাকায়। সড়কের বেহাল অবস্থার দোহাই দিয়ে সেদিকেও যায় না বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিদিন ৫০-৬০ টাকা খরচ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে হয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়েও আমরা পরিবহণের যথাযথ সুবিধা পাচ্ছি না। আর স্টাফ বাস বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করলেও আমাদেরকে মাঝপথেই নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে, আবার উঠতে হচ্ছে মাঝপথে এসে।’

একই অভিযোগ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ছাত্রী তাসনিমেরও। তিনি জানান, ‘বাস থেকে নেমে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ যানবাহন না থাকায় শিক্ষার্থীদের হুড়োহুড়ি করতে হয়।’ অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব সবগুলো বাসও পরিবহণ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে না। নিজেদের ভোগান্তি নিয়ে এমন কথা জানান পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী মুন্না মনি তালুকদার ও গণিত বিভাগের ছাত্র আবদুল্লাহ আল হামিমও।

শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাস বিকল্প পথ ব্যবহার করলেও শিক্ষার্থীদের বাস কেন বিকল্প পথ ব্যবহার না করে মাঝপথে থেমে যাচ্ছে, এটি জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহণ উপদেষ্টা কমিটির সদস্য-সচিব মো. বিল্লাল হোসাইন বলেন, ‘বেলতলি রোড অত্যন্ত সরু হওয়ায় গাড়ি মোড় নিতে সমস্যা হয়। তাই এই রাস্তায় সবগুলো গাড়ি একসাথে চলাচলে ভোগান্তি আরও বাড়বে। রাস্তার কাজ চলছে, তাই সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে। কাজের ঠিকাদারের সাথে আমাদের কমিটির আলোচনা হয়েছে। আমরা তাদের অনুরোধ করেছি, তারা দ্রুত কাজ শেষ করার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন।’

এছাড়া দৌলতপুর এলাকায় বাস চলাচল না করা এবং নিজস্ব সবগুলো বাস পরিবহণ কাজে ব্যবহার না করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দৌলতপুরের রাস্তায় খানাখন্দ রয়েছে, যাতে গাড়ির সামনের ও পেছনের অংশ লেগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই রাস্তা সংস্কারের আগে ঐ রুটে গাড়ি চালানো যাচ্ছে না। আর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট গাড়ির সংখ্যা ১৭টি, যার বিপরীতে চালক আছেন ১২ জন। এর মাঝে দুই-একজন চালক অসুস্থও থাকেন। চালক স্বল্পতার কারণে সবগুলো গাড়ি চলতে পারছে না। তবে দ্রুত চালক নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছেন।’