কয়েক মাস ধরে দিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছেন খালেদা

আগামী জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য মরিয়া চেষ্টা করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ জন্য গত কয়েক মাস ধরে দিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করছেন তিনি।

কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে এ খবর জানিয়েছে ভারতের বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা।

দৈনিকটির দাবি, বিএনপি-জামায়াত রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ- আরএসএসের মাধ্যমে নরেন্দ্র মোদির সরকারের কাছে বার্তা পৌঁছনোর চেষ্টা করছে।

আর বার্তাটি হলো শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতি কূটনৈতিক পক্ষপাত বহাল না রেখে তাদের সঙ্গেও একটা বোঝাপড়ার দিকে অগ্রসর হোক দিল্লির সাউথ ব্লক।

নয়াদিল্লিকে এটা বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে, বিএনপি তাদের কর্মসূচিতে সর্বদা বাণিজ্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে এসেছে। ক্ষমতায় এলে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে নানা ধরনের ছাড় দেবে তারা।

পাশাপাশি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু অধিকারের বিষয়টি নিয়েও এ বারে যে তারা তৎপর হতে চায়, সে কথাও বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

সূত্রের বরাতে আনন্দবাজার আরও জানায়, এ বিষয়ে নাগপুরে আরএসএসের একটি অংশের সঙ্গে বিএনপির কয়েক জন প্রতিনিধি সম্প্রতি দেখা করে এসেছেন।

তাছাড়া গত বছরের শেষে খালেদা জিয়া যখন লন্ডনে যান, সেখানেও আরএসএসের প্রবাসী কিছু নেতার সঙ্গে কথা হয় তার।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা বাংলাদেশ হাইকমিশনের কোনো পক্ষেই প্রকাশ্যে এ ধরনের বৈঠকের কথা স্বীকার করছে না। বিএনপিও এ নিয়ে চুপ বলে উল্লেখ করেছে আনন্দবাজার।

তবে আরএসএস সূত্রে দৈনিকটি জানিয়েছে, দিল্লির সঙ্গে তারা একটা বোঝাপড়ায় আগ্রহী বলে জানিয়েছে বিএনপি নেতৃত্ব। খালেদা জিয়ার দল মোদি সরকারকে বোঝানোর চেষ্টা করছে, শেখ হাসিনা সরকারের সময়ই বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সব চেয়ে বেশি অত্যাচার হয়েছে এবং এখনও তা চলছে। মন্ত্রিসভায় অথবা জাতীয় সংসদে সংখ্যালঘু প্রতিনিধিত্ব নামমাত্র।

বিএনপি ঘরোয়া ভাবে এ কথাও আরএসএসকে জানিয়েছে, তারা অন্তত ৫০ জন সংখ্যালঘু প্রার্থীকে আগামী ভোটে প্রার্থী করতে ইচ্ছুক। ক্ষমতায় এলে মন্ত্রিসভায় হিন্দু প্রতিনিধিত্বও বর্তমানের চেয়ে অনেক বেশি থাকবে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ভারত নাক গলায় না। কোনও রাষ্ট্রে যখন যে দলের সরকার থাকে, নয়াদিল্লি তার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। বাংলাদেশে এর আগে বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, ভারত তাদের সঙ্গেও সম্পর্ক বহাল রেখে চলেছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার এই অতিসক্রিয়তাকে ভাল চোখে দেখছে না দিল্লি। বিএনপির উদ্দেশ্য নিয়েও সন্দিহান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে আনন্দবাজার জানিয়েছে, গত নভেম্বরে ‘দাঁতের চিকিৎসা’ করাতে লন্ডনে গিয়ে খালেদা জিয়া পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন। লন্ডনের পাকিস্তান হাই কমিশনের কর্তাদের সঙ্গেও অনেক বার বৈঠকে বসেছিলেন খালেদা, বাংলাদেশে যা নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। তবে বিএনপি নেতৃত্ব এই সব অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন ও বানানো’ বলে উড়িয়ে দিয়ে এসেছেন।

তবে আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে, খালেদা জিয়া পাকিস্তানের একটি কট্টরপন্থী অংশের মাধ্যমে অভ্যুত্থানে ক্ষমতা দখলের চক্রান্তে লিপ্ত বলেই নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এ কারণে সব মিলিয়ে সতর্ক ভাবেই বাংলাদেশ পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে মোদি সরকার।