কয়েক মিনিটেই শেষ ১৮ বছরের আয়

‘এক-একটি গরুর দাম ছিল এক লাখ ২০ হাজার টাকা। আগুনে দগ্ধ হওয়ায় সেই গরু বিক্রি করলাম মাত্র ৩০ হাজার টাকায়। পাঁচটি গরু তো পুড়ে মারাই গেছে। ১৮ বছর ব্যবসা করে যা আয় করেছিলাম কয়েক মিনিটের আগুনে সব শেষ হয়ে গেল!’

গাবতলী পশুর হাটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী মো. অপু শুক্রবার এভাবেই নিজের কষ্টের কথা বললেন।

শুধু অপু নন, ওই আগুনে নিঃস্ব হয়েছেন আরও অনেক ব্যবসায়ী। আসন্ন কোরবানির ঈদে কিভাবে তারা ব্যবসা করবেন, কোথায় পাবেন ব্যবসার পুঁজি সেই অনিশ্চিতায় পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা।

বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর গাবতলী পশুর হাটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১৩টি গরু, পাঁচটি ছাগল ও একটি ভেড়া পুড়ে মারা গেছে। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, আগুনে তাদের অন্তত ২২টি পশু মারা গেছে। আর দগ্ধ হয়েছে অর্ধশতাধিক গরু, ছাগল ও ভেড়া।

গরু ব্যবসায়ী মো. অপু যুগান্তরকে বলেন, বাবা আমজাদ আলীও গরুর ব্যবসা করতেন। ১৮ বছর ধরে আমি বাবার ব্যবসার হাল ধরেছি।

তিনি বলেন, সারা বছরই গরুর ব্যবসা করি। তবে পুড়ে যাওয়া গরুগুলো কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পালছিলাম। প্রতিটি গরুর দাম ছিল লাখ টাকার ওপরে। আগুনে পাঁচটি গরু পুড়ে মারা গেছে। দগ্ধ হয়েছে সাতটি, সেগুলো খুব অল্প টাকায় কসাইদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছি। কসাইরা এসব মাংস বিভিন্ন প্রাণীর খাবার হিসেবে বিক্রি করবেন।

তিনি আরও বলেন, সামনের ঈদে কিভাবে ব্যবসা করব, কোথায় পুঁজির টাকা পাব বুঝতে পারছি না। ব্যাংকগুলো গরু ব্যবসায়ীদের লোন দেয় না বলে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।

আরেক ব্যবসায়ী মহসিন মেম্বার বলেন, আগুনে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমার দুটি গরুই পুড়ে মারা গেছে। অল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসা করছিলাম। এখন সব পুঁজি শেষ। ব্যবসা করার টাকা কোথায় পাব, সংসার চলবে কিভাবে বুঝতে পারছি না।

গাবতলী গবাদি পশু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মজিবুর রহমান বলেন, আগুনে অনেকের পশু পুড়ে যাওয়ায় ব্যবসার পুঁজি হারিয়েছে। সামনে কোরবানির ঈদ, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা যাতে ব্যবসা করতে পারেন সেজন্য সমিতির সবাই বসে তাদের আর্থিক সহাযোগিতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেব। হাটের যে শেডগুলো পুড়ে গেছে সেগুলো দ্রুত সময়ে ঠিক করে দেয়ার জন্য সিটি কর্পোরেশনকে চিঠি দিয়ে আবেদন জানাব।

তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা যাতে ব্যাংক লোন পায় সেজন্য সংশ্লিষ্টদের কাছেও আবেদন জানাব।

এদিকে শুক্রবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, আগুনে পুড়ে যাওয়া শেডগুলো পরিষ্কার করছেন সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। ট্রাকের পেছনে দড়ি বেঁধে পুড়ে মারা যাওয়া পশুগুলো টেনে হাটের বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আগুনে পোড়া শেডের পাশে বসেই নিজেদের নিঃস্ব হওয়ার কথা বলছেন ব্যবসায়ীরা। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন কেউ কেউ।