খালেদাকে চকলেট খাইয়ে ঠিক করা হয়েছিলো : অ্যাটর্নি জেনারেল

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন— ‘বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন, এটা ঠিক না। বা অজ্ঞান ছিলেন, এটাও ঠিক না। সুগার লেভেল নেমে যাওয়ার পরে উনি দাঁড়ানো থেকে ঘুরে গিয়েছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে চকলেট খাইয়ে ঠিক করা হয়েছিলো। আদালতের সহানূভুতি পাওয়ার জন্যেই তারা (খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা) এমন করছেন।’

কারাগারে থাকা খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য বিষয়ে আদালতে তার আইনজীবীদের বক্তব্য প্রসঙ্গে এসব কথা বলেন মাহবুবে আলম।

নাশকতার অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে কুমিল্লায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা মামলায় রোববার জামিন চেয়ে আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুনানি শেষে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে অ্যাটর্নি জেনারেল এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থের বিষয়ে যে বক্তব্য আদালতে রেখেছেন তার আইনজীবীরা, আমি জানি এ বিষয়টি নিয়ে তারা নানারকম ভাবে মিডিয়াকে মাতাবেন, অনেক কিছু বলবেন। তাই আমি আদালতে যাওয়ার আগে আইজি প্রিজনের সাথে আলাপ করেছি। আইজি প্রিজন যে তথ্য আমাকে দিয়েছেন, গত ৫ জুন ইফতারের ঠিক আগে আগে উনার সুগার লেভেল কমে গিয়েছিল। সেই জন্য তিনি যে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন, এটা ঠিক না। বা অজ্ঞান ছিলেন, এটাও ঠিক না। সুগার লেভেল পড়ে যাওয়ার পরে উনি দাঁড়ানো থেকে ঘুরে গিয়েছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে চকলেট খাইয়ে ঠিক করা হয়েছিলো। এই বয়সে যার ডায়াবেটিক আছে তার সুগার লেভেল তো সারাদিনের পরে একটু এদিক ওদিক হতেই পারে।

মাহবুবে আলম আরো বলেন— আর এটা আমার কাছে বিশেষ রকম ব্যাপার মনে হয়, আজ একটি মামলার তারিখ, আর তার আগের দিন শনিবার তার চিকিৎসকরা কারাগারে গেলেন। আর এসেই এমন একটা প্রেস কনফারেন্স করে ফেললেন যে, তিনি অজ্ঞান ছিলেন। তিনি যদি অজ্ঞান হতেন তাহলে নিশ্চয় আইজি প্রিজনের কাছে রিপোর্ট থাকতো, সিভিল সার্জন জানতো। এগুলো নিয়ে তারা একটি জনমত সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। উনি অজ্ঞান হননি, উনার সুগার লেভেল কমে গিয়েছিলো। এই হলো আসল কথা।

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা বলছেন মাইল্ড স্ট্রোক হয়েছে। এ প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন— এটাও ঠিক না। তিনি অসুস্থ হলে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এনে স্ক্যান করা হতো। তার চিকিৎসায় সরকার যতটা গুরুত্ব দিচ্ছে, কোন আসামীর ব্যাপারে আপনারা দেখেছেন ব্যাক্তিগত চিকিৎসকদের যেতে (দেখতে) দেওয়া হয়?

রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ এই আইন কর্মকর্তা বলেন— কিন্তু তারা যাতে কোনো রকমে সরকারকে দোষারোপ করতে না পারে এ জন্যই সরকার বেশ কয়েকবার তার ব্যাক্তিগত চিকিৎসকদের জেলে যেতে অনুমতি দিয়েছে।

মাহবুবে আলম বলেন— দুঃখজনক ব্যাপার হলো, চিকিৎসকরাও যদি রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে যান এবং এ ধরণের কথা বলেন। তিনি অজ্ঞান হননি তারা বলছে সাত-আট মিনিট অজ্ঞান ছিলেন, এটা দুঃখজনক।

তিনি বলেন— আজকে মামলার শুনানি অথচ ব্যাক্তিগত চিকিৎসকরা গতকাল গেলেন তার সঙ্গে দেখা করতে। ৫ জুন যদি তিনি অজ্ঞান হতেন তাহলে সেদিনই বিষয়টি মিডিয়াতে আসতো। কিন্তু তা আসেনি। আজ ১০ জুন। এ বিষয়টি নিয়ে ঘোলাটে করার চেষ্টা হচ্ছে। একটা বিভ্রান্ত তথ্য দেওয়া হচ্ছে।

‘অ্যাটর্নি জেনারেলের সম্মতি ছাড়া খালেদা জিয়ার জামিন মিলবে না’- খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের এই বক্তব্য প্রসঙ্গেও কথা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

তিনি বলেন— এটা শুধু মিথ্যা কথা নয়, দুঃখজনক এবং আদালত অবমাননাকর। আদালত কারো কথায় চলে না। আমার কথা বা সরকারের কথায় চলার তো প্রশ্নেই আসে না। কাজেই যে কথাগুলো বলছেন তাতে মনে হচ্ছে, তারা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন। কারণ, তারা তো অনেক মামলায় জামিন পাচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন, আমাদের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। এবং তারা তাদের নিজেদের বিবেক, বিচার, বিশ্লেষণ দ্বারা পরিচালিত হবেন। খালেদা জিয়াকে তারা (হাইকোর্ট) জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় জামিন দিয়েছেন। সুতরাং এ রকম কোন অভিযোগ করা অহেতুক।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন— এর আগে যে মামলায় (মানচিত্র, জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করার অভিযোগে এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে জন্মদিন পালনের অভিযোগের মামলা) আদালত থেকে অর্ডার নিয়েছিলেন, দুটি মামলাই হলো কমপ্লেইন্ট কেস। দুটি মামলাই দুজন করেছেন। একটি হলো তার মিথ্যা তথ্য দিয়ে জন্মদিন পালন করছেন। ওনার কাবিননামায়, ম্যাট্রিক সার্টিফিকেট ও অন্য এক জায়গায় অন্য রকম জন্মদিন। সর্বশেষ উনি জন্মদিন দেখিয়েছেন ১৫ আগস্ট, যেদিন আমাদের শোক দিবস এবং বঙ্গবন্ধুর পরিবারসহ সকলেই নিহত হয়েছেন। সেটি উনি ঘটা করে পালন করেছেন। এটাতে আহত হয়ে এক ব্যাক্তি একটি কমপ্লেইন্ট কেস করেছেন।

‘সেই কেসে ম্যাজিস্ট্রেট একটি ওয়ারেন্ট অব অ্যারেস্ট তামিলের অর্ডার দিয়েছেন । নিয়ম হলো, প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে এটা তামিল করা হয় এবং তিনি অন্য মামলায় আটক থাকলে তাকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়। উনি নিজে থেকেই আবেদন করেছেন আমাকে এ মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হোক এবং জামিন দেওয়া হোক।

আদালতের বরাত দিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন— ম্যাজিস্ট্রেট বলেছেন আমাদের এমন কোন বিধান নেই যে আসামীপক্ষের আবেদনে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো যায়। সেই আদেশের বিরুদ্ধে তারা হাইকোর্টে এসেছেন। হাইকোর্ট বলেছেন যে, ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশ ঠিক না, তাকে এই মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো যেতে পারে। যেহেতু তিনি অন্য মামলায় জেলে আছেন।

এই মামলার রায়ের বরাত দিয়ে তারা চৌদ্দগ্রামের একটি মামলাতে একই আদেশ পাওয়ার জন্য হাইকোর্টে এসেছেন উল্লেখ করে মাহবুবে আলম বলেন— সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, এই মামলায় আসামীর দরখাস্তের পরে যে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো যায় এমন আদেশের বিরুদ্ধে আমরা আপিলে যাবো। আজকেই আপিল ফাইল হচ্ছে। ওই রায়ের সার্টিফায়েড কপি পেয়েছি এবং আদালতকে জানিয়েছি সেই রায়ের বিরুদ্ধে আজকেই আপিল বিভাগে যাচ্ছি।