খালেদার নথি প্রধান বিচারপতির কাছে : গঠিত হবে তৃতীয় বেঞ্চ

তিন আসনে মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে করা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রিটের ওপর হাইকোর্টের দ্বিধাবিভক্ত আদেশের কপি এবং সংশ্লিষ্ট সকল নথি প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হাইকোটের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ থেকে নথি প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হয়।

বুধবার তৃতীয় বেঞ্চ গঠন করবেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। প্রধান বিচারপতির সচিব রেজাউল করিম এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

এর আগে মঙ্গলবার বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহম্মেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই বিভক্ত আদেশ দেন।

বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ রুলসহ মনোনয়নপত্র গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন। বেঞ্চের অপর বিচারপতি মো. ইকবাল কবির দ্বিমত পোষণ করে খালেদা জিয়ার তিনটি রিট খারিজ করে দেন।

আইনজীবীরা বলেছেন, এখন বিষয়টি প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে। তিনি বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য আরেকটি বেঞ্চে পাঠাবেন। এটি তৃতীয় বেঞ্চ হিসেবে পরিচিত। দ্বিধা বিভক্ত আদেশ আসায় খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশগ্রহণের পথ আরো অনিশ্চিতায় পড়েছে বলে মনে করেছেন তারা।

তিনটি আসনে মনোনয়নপত্র বাতিল করে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন খালেদা জিয়া। বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার ওই আবেদনের ওপর শুনানি শেষে মঙ্গলবার আদেশের জন্য রাখেন। আদেশে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ রুলসহ মনোনয়নপত্র গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন। আর বেঞ্চের অপর বিচারপতি মো. ইকবাল কবির দ্বিমত পোষণ করে খালেদা জিয়ার তিনটি রিট খারিজ করে দেন।

মঙ্গলবার আদেশের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন, খালেদা জিয়ার আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, কায়সার কামাল, নওশাদ জমির, অ্যাডভোকেট ফারুক হোসেন ও একে এম এহসানুর রহমান প্রমুখ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তার সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও মো.মোমতাজ উদ্দিন ফকির।

আদেশের পর খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন কমিশন শুরু থেকেই পক্ষপাতিত্ব করছে, ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত হয়েছে। আমরা ন্যায়বিচারের জন্য উচ্চ আদালতে এসেছিলাম। প্রিসাইডিং জাজ নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে তিনটি মনোনয়নপত্র গ্রহণ করার নির্দেশ দিলেও বেঞ্চের অপর বিচারপতি দ্বিমত পোষণ করেছেন। এখন নিয়ম অনুযায়ী এ মামলার নথিপত্র প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হবে। প্রধান বিচারপতি তৃতীয় একটি বেঞ্চ গঠন করে দেবেন আবেদনটি নিষ্পত্তি করার জন্য। আমরা প্রত্যাশা করছি, তৃতীয় বেঞ্চে আমরা ন্যায় বিচার পাব, সঠিক সিদ্ধান্ত পাব।

আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, বিচারিক আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তিকে নির্বাচন করতে দেয়া হলে তা সংবিধান লঙ্ঘন হবে। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার পক্ষে তিনটি রিট পিটিশন করা হয়েছিল। রিট আদেশে হাইকোর্ট দ্বিমত পোষণ করেছেন। যেহেতু দু’জন বিচারপতি ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেননি, সেজন্য বিষয়টি প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে। প্রধান বিচারপতির কাছে গেলে তিনি পরবর্তী বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেবেন।’

খালেদা জিয়া ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসনে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। যাচাই-বাছাই শেষে তিন আসনের মনোনয়নপত্রই বাতিল করেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা।

এর বিরুদ্ধে করা আপিল ৮ ডিসেম্বর নামঞ্জুর করে ইসি। এই সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে গত রোববার পৃথক তিনটি রিট করেন খালেদা জিয়া।

দুই মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।