‘খালেদার পরিণতি টুকু-দুলুর মতো হবে ভেবেই টালবাহানা’

খালেদার পরিণতি দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির মীর নাছির, মীর হেলাল, টুকু, দুলু ও ডাক্তার জাহিদের মতো হবে ভেবেই বিএনপির আইনজীবীরা আদালতে এসে টালবাহানা করছেন বলে মন্তব্য করেন অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম।

তিনি বলেন, যেহেতু দণ্ডপ্রাপ্তরা আবেদন করার পর তা রিজেক্ট (বাতিল) হয়েছে। তারা আর নির্বাচন করতে পারছেন না, খালেদারটাও রিজেক্ট হবে বুঝতে পেরেছেন। বুঝতে পেরেই খালেদার আইনজীবীরা টালবাহানা করছেন।

বৃহস্পতিবার বিকেলে সুপ্রিম কোর্টে অ্যার্টনি জেনারেলের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এসব কথা বলেন মাহবুবে আলম।

অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘ফৌজদারি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা মীর মোহাম্মদ নাসির, মীর মোহাম্মদ হেলাল, হাসান মাহমুদ টুকু, রুহুল কুদ্দুস দুলু এবং ড. এ জেড এম জাহিদ নির্বাচন করতে পারবেন না। দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে তারা হাইকোর্ট থেকে কোনো আদেশ পাননি বা পেলেও সুপ্রিম কোর্টে তা স্থগিত করা হয়েছে। ফলে, তারা নির্বাচন করতে পারছেন না। খালেদারও বিএনপি নেতাদের মতো পরিণতি হবে। তাই তারা (বিএনপির আইনজীবী) এমন টালবাহানা করছেন।’

এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, ‘আমি আদালতে স্পষ্ট করে বলেছি, ১০ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত একজন ব্যক্তি কোনোমতেই নির্বাচন করতে পারবেন না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে দ্বিধাবিভক্ত আদেশ হওয়ার পর তারা এসব করছে।’

তিনি বলেন, ‘তারা যে আপত্তি তুলেছে সেটি সকালে বলেনি, বেলা ১১টায় বলেনি, ১টার সময়ও বলেনি, পরে এসে মামলা শুনানির সময় এসে বলেছে, মামলাটিকে ঝুলিয়ে রাখা একটা টালবাহানা। আদালতে তারা কোনো অনাস্থা (নো-কনফিডেন্স) জানাননি। তারা সঠিক কথা বলছেন না। তারা বেঞ্চে কোনো অনাস্থা দেননি।’

অ্যার্টনি জেনারেল বলেন, ‘তারা বলছেন, বিচারপতি, যিনি রুল জারি করেছেন তার থেকে কোনো জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে শুনতে হবে। হাইকোর্টে ডিভিশনের রুলসেও নাই যে, প্রধান বিচারপতি একজন বিচারপতিকে দায়িত্ব দেয়ার পর তিনি মামলা শুনতে পারবেন না।’

তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হলো, এটা স্পষ্ট, একজন সাধারণ নিরক্ষর মানুষও বলবে যে, আবেদন রিজেক্ট হয়ছে। রিজেক্ট হবে তারা জানে। বিএনপির অন্য নেতাদের আবেদন কেন রিজেক্ট হয়েছে, খালেদারটাও রিজেক্ট হবে বুঝতে পেরেছে। বুঝতে পেরেই তারা টালবাহানা করছেন। ইতোমধ্যে যারা দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেস তারা নির্বাচন করতে পারছেন না। খালেদাও পারবেন না।’

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে আপনি লড়ছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যার্টনি জেনারেল বলেন, ‘যখনি আমি দাঁড়াই তখনি বিএনপির আইনজীবীরা এটা বলেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি তো নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলাম।’

এর আগে বেগম খালেদা জিয়ার প্রার্থিতা ফিরে পেতে তিনটি রিট আবেদনের শুনানি করতে প্রধান বিচারপতির ঠিক করে দেয়া বেঞ্চের প্রতি অনাস্থা জনিয়েছেন তার আইনজীবীরা।

আদালতে আজ খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, নওশাদ জমির, রাগীব রউফ চৌধুরী, ফজলুর রহমান জুয়েল, এ কে এম এহসানুর রহমান, ফাইয়াজ জিবরান, অ্যাডভোকেট নাসরিন আক্তার, সালমা সুলতানা সুমা ও ফারুক হোসেন প্রমুখ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, তার সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যার্টনি জেনারেল মুরাদ রেজা, মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও ডেপুর্টি অ্যার্টনি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজ এবং ড. বসির উল্লাহ।

খালেদা জিয়ার মনোনয়নের বৈধতা প্রশ্নে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে বিভক্ত আদেশ হওয়ার পর বুধবার (১২ ডিসেম্বর) হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বে একক বেঞ্চ গঠন করে দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।

বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার পরে ওই বেঞ্চে মামলা তিনটির শুনানি শুরু হলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী মৌখিকভাবে অনাস্থা জানান। বিচারক তখন শুনানি মূলতবি করে দেন। শুনানির শুরুতেই এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে আপনার আদালতের প্রতি আমাদের আস্থা নেই।’

বিচারক তখন এ জে মোহাম্মদ আলীকে লিখিত আবেদন করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘আপনারা তো এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতিকে জানাতে পারতেন।’

এ জে মোহাম্মদ আলী তখন বলেন, ‘আমাদের কিছু করার ছিল না। আমরা দেখেছি যে, বেলা ২টায় এই আদালতে মামলার শুনানি হবে। যা বলার এই আদালতেই বলতে হবে।’

এ পর্যায়ে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে শুনানিতে আসা অ্যাটর্নি জেনালেন মাহবুবে আলম বলেন, ‘উনারা এ কথা এ আদালতে বলতে পারেন না। প্রধান বিচারপতিকে বলতে পারতেন। কালক্ষেপণের কৌশল থেকে এই অনাস্থা জানিয়েছেন।’

এর জবাবে মোহাম্মদ অলী বলেন, ‘আমরা হলাম সংক্ষুব্ধ পক্ষ। আমাদের আর্জেন্সি (প্রয়োজন) বেশি। উনি (অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম) তো রাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল। এ মামলায় উনার এত মাথাব্যথার কারণ কী? উনি ব্যক্তি মাহবুবে আলম হিসেবে দাঁড়াতে পারেন।’

বিচারক তখন বলেন, ‘উনি ব্যক্তি মাহবুবে আলম হিসেবে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।’

এ পর্যায়ে মোহাম্মদ আলী আজ বিষয়টির শুনানি না করার জন্য আর্জি জানালে আদালত তাতে সম্মতি দেন।

পরে খালেদা জিয়ার আইনজীবী বদরুদ্দোজা বাদল সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিয়ম হচ্ছে বিভক্ত আদেশ দেয়া বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি যিনি থাকেন তার চেয়ে জ্যেষ্ঠ কোনো বিচারপতিকে দিয়ে একক বেঞ্চ গঠন হবে। বিভক্ত আদেশ দেয়া বেঞ্চের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ সিনিয়র বিচারপতি। কিন্তু প্রধান বিচারপতি বুধবার বিচারপতি জে বি এম হাসানকে দিয়ে একক বেঞ্চ গঠন করে দিয়েছেন। তিনি বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের কনিষ্ঠ। যে কারণে আমরা অনাস্থা জানিয়েছিলাম। আদালত লিখিতভাবে আবেদন করতে বলে সোমবার পর্যন্ত শুনানি মূলতবি রেখেছে।’

তবে, নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী মাহবুবে আলম দাবি করেছেন, খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালতের প্রতি অনাস্থা দেননি। তিনি বলেন, ‘আবেদনটি খারিজ হবে জেনেই খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা টালবাহানা শুরু করেছেন। কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন লোকেরা জানেন, দণ্ডিতরা নির্বাচন করতে পারছেন না। সেখানে খালেদা জিয়া কীভাবে নির্বাচন করবেন?’

যে বেঞ্চ বিভক্ত আদেশ দিয়েছেন তার চেয়ে জ্যেষ্ঠ বেঞ্চে বিষয়টি নিষ্পত্তির যে দাবি তুলেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা, সে বিষয়েও আপত্তি জানিয়েছেন মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের কোনো আইন নাই বা সুপ্রিম কোর্টেরও বিধি নাই। প্রধান বিচারপতি নির্বাচন-সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তির জন্য এই বেঞ্চকে এখতিয়ার দিয়েছেন। এ কারণে খালেদা জিয়ার মামলা তিনটিও এই বেঞ্চে পাঠিয়েছেন নিষ্পত্তির জন্য।’

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছর এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৭ বছরের দণ্ড নিয়ে গত ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে আছেন খালেদা জিয়া। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে তাকে ফেনী-১ এবং বগুড়া-৬ ও ৭ আসনে প্রার্থী করেছিল বিএনপি।

এরপর ২ ডিসেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তার বাছাইয়ে দুই বছরের বেশি সাজার কারণ দেখিয়ে খালেদা জিয়ার তিনটি মনোনয়নপত্রই বাতিল করে দেয়া হয়। খালেদার আইনজীবীরা ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেও বিফল হন। এরপর তারা রিট আবেদন নিয়ে আসেন হাইকোর্টে।

কিন্তু বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্রের বৈধতা প্রশ্নে বিভক্ত আদেশ দেয়। নিয়ম অনুযায়ী, মামলার নথি প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হলে তিনি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জে বি এম হাসানকে ওই তিন আবেদন নিষ্পত্তির দায়িত্ব দেন।

বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ইসিকে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়ে রুল জারি করেন। খালেদার মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় রুলে। অন্যদিকে বিচারপতি মো. ইকবাল কবির এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলে খালেদার ভোটের ভাগ্য আটকে যায়।