খালেদার মুক্তির স্বাক্ষর এক কোটি ছাড়িয়েছে

দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে বিএনপি। সংঘাত এড়াতে এই মুহূর্তে কঠোর কোনো কর্মসূচিতে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই দলটির। কোনো ধরনের ‘ষড়যন্ত্র বা উস্কানিতে’ পা না দিয়ে শেষ পর্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে চান দলের নীতিনির্ধারকরা।

বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবি, নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সরকারবিরোধী জনমত তৈরি এবং খালেদা জিয়াকে মুক্ত করাই তাদের মূল লক্ষ্য।

ইতোমধ্যে মানববন্ধন, অনশন, স্মারকলিপি প্রদান, প্রতিবাদ মিছিল সহ কয়েকদফা কর্মসূচিতে সরকার বাধা দিয়েছে। তাই ‘নিরীহ’ কর্মসূচি দিয়ে হলেও মাঠে থাকতে থাকতে চায় বিএনপি। এসব কর্মসূচিতে জনগণ ব্যাপক সাড়া দিচ্ছে বলেও দাবি করেছেন দলটির নেতারা।

তারা বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে চলা গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচিতে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছে। ঢাকাসহ সারাদেশে চলছে বিএনপির এ গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া বিএনপির গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও বিভিন্ন পেশার মানুষজনও স্বাক্ষর দিচ্ছেন। সোমবার পর্যন্ত খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে বিএনপি এক কোটির বেশি স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছে। এ কর্মসূচি আরও কিছু অব্যাহত থাকবে।

গণস্বাক্ষর নিয়ে এরপর পরবর্তী প্রদক্ষেপের জন্য নীতিনির্ধারকরা বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি এবং সরকারকে স্মারকলিপি আকারে তা দেয়ার পরিকল্পনা আছে বলে জানা গেছে।

দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক নেতা বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনকে অন্যায়ভাবে সাজা দিয়েছে তা দেশের জনগণ মেনে নিতে পারছে না। বিপুলসংখ্যক মানুষের স্বাক্ষরের মাধ্য দিয়ে তারা নিরব প্রতিবাদ জানাচ্ছে। আমরা এই বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরেও আনব। জাতিসংঘ মহাসচিবসহ বিদেশি দূতাবাস-হাইকমিশনে গণস্বাক্ষরের তালিকা পাঠাব।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচি অব্যাহত আছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ব্যাপক সাড়া পেয়েছি আমরা। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে সাড়া দিচ্ছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা তো কর্মসূচির মধ্যেই আছি। সারাদেশের দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ প্রতিদিনই কোনো কোনো কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সারাদেশে গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে আমরা ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। দলমত নির্বিশেষে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য স্বাক্ষর করছেন। তাদের এই স্বাক্ষর গণতন্ত্রের নেত্রীর মুক্তির দাবিকে আরও বেগবান করবে।

ঢাকা বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে শুধু বাংলাদেশ নয়, প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝেও ব্যাপক আগ্রহ দেখছি আমরা। তারা ই-মেইলের মাধ্যমে গণস্বাক্ষরের ফরম নিয়ে পূরণ করে আবার পাঠিয়ে দিচ্ছেন। কেউ কেউ অনলাইনে স্বাক্ষর করছেন। শুধু ঢাকা বিভাগে প্রায় ২০ লাখ স্বাক্ষর সংগ্রহ হয়েছে।

দলটির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, সারাদেশে দলের চেয়ারপারসনের মুক্তি দাবিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচি চলছে। তৃণমূলের নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে আমরা এরইমধ্যে সারাদেশে এক কোটির বেশি স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে পেরেছি।

তিনি আরও বলেন, সাংগঠনিকভাবে যেগুলো হচ্ছে, তা আমরা গণনার করার সুযোগ পাচ্ছি। এর বাইরেও অনেক স্বাক্ষর হচ্ছে তা আমাদের কাছে আসতে হয়তো আরও সময় লাগবে।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে ৫ বছর, তারেক রহমানসহ বাকি আসামিদের ১০ বছর করে কারাদণ্ড ও ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা জরিমানার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার বিশেষ জজ-৫ আদালতের বিচারক ড. আখতারুজ্জামান। ওইদিনই খালেদা জিয়াকে ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়।সূত্র : পরিবর্তন ডটকম