খালেদার মুক্তি দাবি মামাবাড়ির আবদার : ওবায়দুল কাদের

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সরকারের কাছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি মামাবাড়ির আবদার। কাদের বলেন, তাকে সাজা দিয়েছেন আদালত। তার মুক্তির জন্য বিএনপিকে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। পাশাপাশি তার চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি অন্য কাউকে না করে বিএনপিকে করার আহ্বান জানান তিনি।

ওবায়দুল কাদের দলের নেতাদের ফ্রি স্টাইলে বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। আগামী নির্বাচনে বিজয়ের লক্ষ্যে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ইস্পাত-কঠিন ঐক্য গড়ে তোলারও নির্দেশ দেন তিনি।

সোমবার বিকালে রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে লেডিস ক্লাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণ আয়োজিত এক আলোচনা সভা, দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

দলের নেতাদের যে কোনো বিষয়ে ফ্রি-স্টাইলে কথা না বলার আহ্বান জানিয়ে কাদের বলেন, নির্বাচন কৌশলগত বিষয়। আমাদের জোটের রাজনীতিরও কৌশল আছে। কাজেই নেতাদের প্রতি অনুরোধ, সব বিষয়ে ফ্রি-স্টাইল কথা বলবেন না। দলের নীতি-কৌশল, জোট গঠন এই সব নিয়ে ফ্রি-স্টাইল কথা বলা দলের জন্য শুভ নয়। আমাদের এক ভয়েস, এক টোনে কথা বলতে হবে। সব বিষয়ে সবার কথা বলার প্রয়োজন নেই। যারা যে বিষয়ে কথা বলার, সেই পর্যন্ত বলবেন।

খালেদা জিয়ার মুক্তি আগামী নির্বাচনে যাওয়ার শর্ত বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ওবায়দুল কাদের বলেন, কার কাছে শর্ত দিচ্ছেন? কে তাকে মুক্তি দেবে? কে তাকে দণ্ড দিল? আদালতে যান। সরকারের কাছে শর্ত দিয়ে লাভ নেই। সরকার তাকে জেলে নেয়নি। সরকার তাকে দণ্ড দেয়নি। সরকার তাকে মুক্তি দিতে পারে না। আদালতের সিদ্ধান্তই হচ্ছে তার মুক্তির সম্পর্কে শেষ কথা। এখানে সরকারের কোনো করণীয় নেই। সরকারের কাছে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি মামাবাড়ির আবদার। এই আবদারটা না করলেই ভালো।

উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানো সংক্রান্ত সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ড. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর (বি চৌধুরী) বক্তব্যের সূত্র ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, এই দাবিটা বিএনপি করুক। যদি জেলকোড অনুযায়ী তার চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর প্রয়োজন হয় সেটা বিবেচনা করবে ‘সময়’।

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, লন্ডনে তারেক জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের বৈঠক খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। তার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে জেনারেল সেক্রেটারি বৈঠক করবে এটাই স্বাভাবিক। এটা নিয়ে মন্তব্য নেই। মন্তব্য হচ্ছে, দণ্ডপ্রাপ্ত বিদেশে পলাতক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলাপ করা এবং এই ধরনের রাজনীতি কি গণতন্ত্রে সংগত? দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি কি কোনো দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হতে পারেন? এটাই হলো আমাদের প্রশ্ন?

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদক বলেন, আগামী নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং নির্বাচন। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে আমরা বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে ঐক্যের সোনালি ফসল ঘরে তুলব। আজকে আওয়ামী লীগকে যে কোনো মূল্যে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ইঞ্জিন। এই ইঞ্জিনকে সচল রাখতে হবে। আমাদের কর্মীদের সচল ও সংগঠিত থাকতে হবে। কোনো অবস্থাতেই কোন কলহ-কোন্দলকে প্রশ্রয় দেবেন না। আগামী নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং নির্বাচন। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস আমারা ঐক্যবদ্ধ থাকলে বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগকে পরাজিত করার সেই সামর্থ্য ও সেই সমর্থন নেই।

আওয়ামী লীগ এখনো কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে আছে দাবি করে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, একটু বেশি নিলেও আপনারা কমিটি জমা দিয়েছেন। কমিটি আমাদের পার্টি অফিসে জমা হয়েছে। আমরা দ্রুত আমাদের সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করে এই কমিটিগুলো প্রকাশ করব।

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সভাপতি আবুল হাসনাতের সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য রশিদুল আলম, দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ প্রমুখ।

অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আকতার হোসেন এবং উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মামুনুর রশিদ শুভ্র।