খালেদা জিয়ার মুক্তির একমাত্র পথ রাজপথ : বিএনপি

কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে বিএনপি নেতারা বলেছেন, সরকার ষড়যন্ত্র করে দলের চেয়ারপারসনের মুক্তি দিচ্ছে না। এজন্য তার মুক্তির একমাত্র পথ হচ্ছে রাজপথ। তাকে মুক্ত করে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আগামী সংসদে তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায় বিএনপি।

বুধবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত আয়োজিত প্রতীকী অনশনে বিএনপির সিনিয়র নেতারা এসব কথা বলেন। অনশনে স্থায়ী কমিটির সদস্যরাসহ সিনিয়র নেতারা বক্তব্য রাখেন। তবে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুক্তরাষ্ট্র সফরে থাকায় তিনি এ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন না। জাতীয়তাবাদী ঘরানার বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ পানি পান করিয়ে অনশন ভঙ্গ করান।

প্রতীকী অনশনে সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, মূল মামলায় জামিন হওয়ার পরও সরকার ষড়যন্ত্র করে খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দি করে রেখেছে।

তিনি বলেন, ‘সারাদেশ আজ ঐক্যবদ্ধ। যেসব রাজনৈতিক দল জাতীয় ঐক্য গঠন প্রক্রিয়ায় কাজ করছে তারাও বলেছে, দেশি-বিদেশি বন্ধু রাষ্ট্রগুলোও বলেছে—আগামী জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। আর খালেদা জিয়াকে ছাড়া, বিএনপিকে ছাড়া অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না। তাই স্পষ্ট করে বলতে চাই, সরকার যতই ষড়যন্ত্র করুক না কেন, ২০১৪ সালের মতো একতরফা নির্বাচন দেশে আর হতে দেওয়া হবে না। কারণ, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দেশে কোনও নির্বাচন হয়নি।’

সরকার ও পুলিশ বাহিনীকে উদ্দেশ করে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘আপনাদের সময় শেষ। মামলা গ্রেফতার করে বিএনপির দাবি আদায়ের আন্দোলন দমন করা যাবে না। আপনারা যারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, তারা আওয়ামী লীগের কর্মচারী নন। যারা এখনও আওয়ামী লীগের কথায় কাজ করছেন, তাদেরও কিন্তু আগামীতে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তাই অযথা বিএনপির নেতাকর্মীদের হয়রানি, গ্রেফতার ও মামলা করবেন না।’

খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া গণতন্ত্রের মুক্তি হবে না বলেও মন্তব্য করেন মোশাররফ হোসেন।

বিএনপির অনশনবুধবারের প্রতীকী অনশনের পূর্বে আরও দুবার প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। যার একটি কর্মসূচি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ও অন্যটি ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে পালন করেছে দলটি।

রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চত্বরে বুধবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা থেকে এ প্রতীকী অনশনে বিএনপি, তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

পূর্ব নির্ধারিত প্রতীকী অনশন কর্মসূচি সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত চলে। মঙ্গলবার (১১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালনের জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) বিএনপিকে মৌখিক অনুমতি দেয়।

প্রতীকী অনশনে অংশ নিয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘সময় আসতেছে, বেশি দেরি নাই। এমন কর্মসূচি দেওয়া হবে, যে কর্মসূচিতে এই সরকারের নৌকা ভেসে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া নির্জন কারাগারে আছেন। তাকে একটি পরিত্যক্ত কক্ষে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।’

মওদুদ আহমদ বলেন, ‘সরকার চায় না খালেদা জিয়ার মুক্তি পাক। আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে বলে অন্তত আমার মনে হয় না। তাই খালেদা জিয়ার মুক্তির একমাত্র পথ হলো রাজপথের আন্দোলন। ইনশাল্লাহ, আমরা খালেদা জিয়াকে আন্দোলনের মাধ্যমেই কারামুক্ত করবো।’

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে মওদুদ বলেন, ‘সময় মাত্র মাসখানেক। আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। এবার রাজপথে নেমে অভীষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছানোর শেষ পর্যন্ত থাকতে হবে। সরকারকে বিদায় করতে হবে।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়া কারাগারে অসুস্থ। তাকে সুস্থ করতে সরকারের কোনও প্রচেষ্টা নেই। বরং খালেদা জিয়াকে জেলখানায় তিলে তিলে মারার ষড়যন্ত্র করছে সরকার।’

তিনি বলেন, ‘‘খালেদা জিয়া কারাগারের ভেতরে অবস্থিত আদালতে উপস্থিত হয়ে বলেছেন—‘আমি অসুস্থ। বার বার হাজিরা দিতে আসতে পারবো না। এখানে ন্যায় বিচার হয় না। তাই, যা ইচ্ছে সাজা দেন। আমি আসতে পারবো না।’ কাজেই নেত্রীর বার্তার প্রতি সমর্থন জানিয়ে আমরাও বলছি—এই আদালতের রায় আমরা মানি না। দেশের জনগণও মানে না।’’

‘খালেদা জিয়াকে ছাড়া বাংলাদেশে কোনও নির্বাচন হতে পারে না। এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় ভোট ছাড়া। নির্বাচনে ভোট দেয় দলীয় প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার ও দলীয় এজেন্টরা’- বলেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

খালেদা জিয়া ছাড়া দলের যারা নির্বাচনে যেতে চায় তাদের সমুচিত জবাব দিতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির এই নেতা।

তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কেউ যদি আড়ালে আবডালে নির্বাচনে যাওয়ার চেষ্টা করে তাদের সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের মাতা খালেদা জিয়া আজ কারারুদ্ধ। তাকে মুক্ত করতে হবে। কারামুক্ত খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হবেন। এই অনির্বাচিত সরকার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। তাই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে চেষ্টা করতে হবে।’

ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘এই দেশের কোটি কোটি মানুষ খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করে আগামী দিনে দেশের চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করবেন।’

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই গণতান্ত্রিক লড়াই চলবে। সেই লড়াইয়ের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি। বিজয়ী হয়ে খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী করবো।’

এ সময় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বানও জানান সাবেক এই রাষ্ট্রদূত।

এদিকে, অনশন শেষ হওয়ার পর অন্তত ২২ জন নেতাকর্মীকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে এখন পর্যন্ত কোনও পক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।