খেজুর এবং পানিই রমজানের স্বাস্থ্যসম্মত ইফতার

রমজান আত্ম-সংযমের মাস। ইবাদাত-বন্দেগির মাস। বাস্তবে দেখা যায়, মানুষ ইবাদাত-বন্দেগির চেয়ে রুচিসম্মত রকমারি খাবারের আয়োজনেই ব্যস্ত থাকে।

রমজানের ইফতার এবং সাহরিকে ভোজন রসনায় পরিণত করার ফলে রোজার আসল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে মানুষ ব্যর্থ হয়।

রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাতের মাস রমজানে রকমারি ইফতার আয়োজনে ব্যস্ত না থেকে ইবাদত-বন্দেগির প্রতি যথাযথ লক্ষ্য রেখে স্বাস্থ্যসম্মত সুন্নাতি ইফতার করাই শ্রেয়। যেভাবে ইফতার করতেন বিশ্বনবি; যে ইফতারের রয়েছে সুস্থ থাকার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা।

ইফতারে ভাজা-পোড়া ও অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। সারাদিন উপবাস করার ফলে ইফতারের সময় পাকস্থলী ও খাদ্য পরিপাকতন্ত্র অবসর থাকে। ইফতারের সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত ভাজা-পোড়া ও চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণে পাকস্থলী ও পরিপাকতন্ত্রের ওপর চাপ পড়ে। যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

ইফতারের সময় হলে প্রথমে খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার করা অতি উত্তম। এর রয়েছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। রোজা খুলতে ইফতারের সময় প্রথমে খেজুর এবং পানি দেহে সুক্রোজ তৈরি করে থাকে। ফলে মুহূর্তেই তৃষ্ণা এবং শরীরের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।

হাদিসে এসেছে-
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ ইফতার করে সে যেন খেজুর দ্বারা ইফতার করে। কেননা তাতে বরকত (কল্যাণ) রয়েছে। আর যদি খেজুর না পাওয়া যায় তবে সে যেন পানি দ্বারা ইফতার করে। কেননা তা পবিত্রকারী। (তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, দারেমি, মিশকাত)

খেজুর ও পানি দ্বারা ইফতারের পর অন্য হাদিসে প্রিনবি ইরশাদ করেন-
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন, ‘পিপাসা দূর হলো, শিরা উপশিরাসিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ চান তবে সাওয়াব স্থির হলো। (আবু দাউদ ও মিশকাত)

ইফতারের পর রোজাদার ব্যক্তি মাগরিবের নামাজ আদায় করে। এ সময়ে রোজাদারের পাকস্থলী সারাদিন বসে থাকার পর একটু কাজ পেয়ে সক্রিয় বা কর্মক্ষম হয়ে নেয়।

মাগরিব পরবর্তী সময়ে রোজাদার ব্যক্তি রাতের খাবার গ্রহণে পর্যাপ্ত মাছ-মাংস অর্থাৎ আমিষ জাতীয় খাদ্য খেলেও কোনো অসুবিধা নেই।

তাই ইফতারে ভাজা-পোড়া না খেয়ে খেজুর ও পানি খেয়ে ইফতার করা এবং মাগরিবের নামাজ আদায় করে রাতের খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারি।

এতে রোজাদারের স্বাস্থ্য যেমন ভালো থাকে, তেমনি রোজার আত্মিক-আধ্যাত্মিক প্রাপ্তিও অর্জিত হয়। হাদিসে এসেছে, ‘অতিরিক্ত পানাহার থেকে বিরত থাক। তা না হলে তোমার অন্তরাত্মার মৃত্যু ঘটবে।’ (মুসলিম)

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশনা অনুযায়ী ইফতারে স্বাস্থ্যসম্মত ও বিজ্ঞানসম্মত খাবার গ্রহণ করলে পবিত্র রমজান মাস জুড়ে রোজাদার অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন সুস্থ্য ঝরঝরে ও ফুরফুরে থাকবে।

পরিশেষে…
ইফতারের সময়টি যেহেতু মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত মহামূল্যবান। তাই এ সময়ে বিশ্বনবির ইফতারের অনুসরণ আমাদের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ।

বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অভ্যাস ছিল- শুধু খেজুর আর পানি খেয়ে ইফতার করা এবং অতঃপর মাগরিবের নামাজ আদায় করা। মাগরিবের নামাজ আদায় করার পর রাতের খাবার খাওয়া।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিশ্বনবির শেখানো পদ্ধতিতে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে ইফতার করার তাওফিক দান করুন। আমিন।