খেলা বদলে দিয়েছে তিন বোনের জীবন

আবদুল আলেক কখনই চাননি তার মেয়েরা খেলাধুলা করুক। বাংলাদেশ ডাক বিভাগের গাড়ী চালকের চাকরির বেতন দিয়েই টানতেন সংসারের ঘানি। ছেলে-মেয়েদের সুশিক্ষিত করে গড়ে দিতে চেয়েছিলেন তাদের জীবন। কিন্তু অদম্য মেয়েদের খেলাধুলা থেকে রুখে কে?

রাজশাহীর পবা নতুনপাড়ার তিন কিশোরী জান্নাতুল ফেরদৌস শিখা, আইরিন আক্তার নীপা আর রুনা খাতুন সুযোগ পেলেই বল নিয়ে নেমে পড়তেন মাঠে। তবে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নটা বেশি দূর টেনে নিতে পারেননি বাবা আলেকের চোখ রাঙানি আর মায়ের বকুনিতে। ফুটবল ছাড়লেও খেলাকে জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলেন ওই তিন কন্যা। এখন তাদের উপার্জনেই সুখের আনন্দ আবদুল আলেক আর জোসনা বেগমের সংসারে।

তিন বোনের মধ্যে বড় জান্নাতুল ফেরদৌস শিখা জাতীয় পর্যায়ের তায়কোয়ানদো খেলোয়াড়। তার দুই অনুজ আইরিন আক্তার নীপা আর রুনা খাতুন খেলেন কুস্তি। তাদের আরো পরিচয় তিনজনই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকুরি করেন। তিন বোনের বেতনেই এখন স্বাচ্ছন্দে চলছে সাবেক সরকারী কর্মচারীর সংসারগাড়ী।

খেলাধুলার পাশাপাশি লেখাপড়াও চালিয়ে যাচ্ছেন শিখা, নীপা ও রুন। তাদের ছোট দুই ভাই মামুন ইসলাম, আরিফ ও বোন আসমান মনিও ব্যস্ত পড়াশুনা নিয়ে। ঢাকা থেকে বোনদের পাঠানো অর্থে এখন তাদের জীবন চলছে মসৃণ গতিতে।

ফুটবলে পা দিলে খেলাধূলার সঙ্গে পরিচিত হওয়া এ তিন কন্যা কিভাবে আসলেন কুস্তি ও তায়কোয়ানদোতে? সোমবার পল্টন ময়দান সংলগ্ন হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামে সার্ভিসেস কুস্তি প্রতিযোগিতা চলার ফাঁকে নিজেদের জীবনের গল্প বলে গেলেন নীপা ও রুনা।

‘ফুটবল খেলতে গিয়েও পারিনি। একদিন আমাদের এলাকার জুডো ও কারাতে কোচ বাবু স্যার ডেকে বললেন তোমরা ফুটবল ছেড়ে এ খেলায় আসো। তারপর তিনি আমাদের জুডো ও কারাতে খেলা ট্রেনিং দিতে থাকলেন। তারপরই আমাদের জীবন জড়িয়ে গেলো এ খেলাগুলোর সঙ্গে’-বলছিলেন আইরিন আক্তান নীপা।

জুডো আর কুস্তি প্রশিক্ষণ দিয়ে জেলার হয়ে জাতীয় জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে অভিষেক আসরেই সাফল্য দেখান তিন বোন। প্রায় একই ধরণের খেলা। তাই তো নীপা ও রুনা এখন সব বাদ দিয়ে লেগে আছেন কুস্তিতে। তাদের বড় বোন শিখা ধ্যান-জ্ঞ্যান তায়কোয়ানদো। ২০১২ জাতীয় কুস্তিতে অংশ নিয়ে স্বর্ণ জেতেন রুনা, নীলা পান ব্রোঞ্জ।

কুস্তি কোর্টে নৈপূণ্য দেখিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্মকর্তাদের নজর। ২০১৪ সালে তাদের চাকুরি হয়ে যায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সিপাহী হিসেবে। এখন চাকুরি, লেখা-পড়া ও খেলা এক সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছেন শিখা, নীপা, রুনারা।

এক সময় যে বাবা-মা খেলার কথা শুনলেই দাঁত কড়মড় করতেন সেই তারাই এখন মেয়েদের সাফল্যে গর্বিত। কেবল চাকরি করে অর্থ উপার্জনের জন্যই নয়, বাবা-মায়ের গর্বের জায়গাটা যখন মেয়েদের ছবি দেখেন পত্রিকার পাতায় কিংবা টিভি পর্দায়।

‘এখন বাবা-মা সব সময়ই বলেন ‘ভালো করে খেলবা’। আমাদেরও প্রতিজ্ঞা যেন দেশের গন্ডি পেড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকেও সাফল্য আনতে পারি। তাহলে বাবা-মাকে আরো খুশি করতে পারবো’- বলছিলেন দুই কুস্তিকন্যা নীপা ও রুনা।