গাছে বেঁধে অন্তঃসত্ত্বাকে নির্যাতন : ফেঁসে যাচ্ছেন দুই পুলিশ কর্মকর্তা

শেরপুরের নকলায় গাছে বেঁধে অন্তঃসত্ত্বাকে নির্যাতন ও গর্ভের সন্তান নষ্ট করার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ ওঠায় নকলা থানার ওসি কাজী শাহনেওয়াজ ও এসআই ওমর ফারুককে শোকজ করা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্তে জেলা পুলিশের গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য নালিতাবাড়ী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

শেরপুরের নকলায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ডলি খানম (২২) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে গাছে বেঁধে বর্বরোচিত নির্যাতন করা হয়। ওই নির্যাতনে গৃহবধূর গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যায়। ডলি পৌর শহরের কায়দা এলাকার দরিদ্র কৃষক শফিউল্লাহর স্ত্রী ও স্থানীয় চন্দ্রকোনা কলেজের ডিগ্রি শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী।

একমাস আগে এই ঘটনা ঘটলেও ওই গৃহবধূর স্বামী গত ৩ জুন শেরপুরের আমলি আদালতে তার ভাই আবু সালেহসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৫-৭ জনকে আসামি করে একটি নালিশি মামলা করেন। এ মামলায় নাসিমা আক্তার নামে এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আদালতের বিচারিক হাকিম শরীফুল ইসলাম খান ভিকটিমের এমসি তলব (ডাক্তারি পরীক্ষার সনদ) সাপেক্ষে ঘটনার বিষয়ে তদন্ত পূর্বক ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য জামালপুর পিবিআইয়ের ওসি’র প্রতি নির্দেশ প্রদান করেছেন।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, গত ১০ মে সকালে স্থানীয় গোরস্থান সংলগ্ন শফিউল্লাহর দখলে থাকা জমির ইরি-বোরো ধান আবু সালেহ ও তার লোকজন কাটতে গেলে শফিউল্লাহ বাধা দেন। এতে তিনি প্রতিপক্ষের ধাওয়ার মুখে পিছু হটে নকলা থানায় ছুটে যান। তখন আবু সালেহর নেতৃত্বে একদল লোক ধান কাটতে শুরু করলে শফিউল্লাহর তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বাধা দেন। এ সময় আবু সালেহর নির্দেশে তার ছোটভাই সলিমউল্লাহ, ভাইয়ের স্ত্রী লাখী আক্তারসহ কয়েকজন জমির পাশের একটি গাছের সঙ্গে তাকে বেঁধে ফেলেন। অন্য গাছের সঙ্গে বাঁধেন তার দুই পা। এরপর ওই নারীর গোপনাঙ্গসহ পেট, বুক ও পিঠে উপর্যপুরি কিল-ঘুষি-লাথি মারতে থাকেন। সেই সঙ্গে ওই নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করেন লাকি আক্তার।

পরে খবর পেয়ে পুলিশ গুরুতর অবস্থায় ওই নারীকে উদ্ধার এবং আবু সালেহ ও তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী লাখী আক্তারকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। কিন্তু চিকিৎসার কথা বলে ডলি খানমকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানোর পর প্রভাবশালীদের তদবিরে ছাড়া পেয়ে যান আটক দুজন।

এদিকে, নির্যাতনে ডলি খানমের রক্তক্ষরণ শুরু হয় এবং তাকে ১৬ মে পর্যন্ত সাতদিন স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়ার পরও তার অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় জেলা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে ২২ মে পর্যন্ত সাতদিন চলে তার চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা যায়, নির্যাতনের কারণে ডলি খানমের অকাল গর্ভপাত হয়েছে।