গার্মেন্টস খাতে মজুরি সমস্যার সমাধান হচ্ছে না কেন?

বাংলাদেশে গার্মেন্টস শ্রমিকদের নতুন মজুরি কাঠামোর সমস্যা চিহ্নিত করা হলেও তা সমাধানের ব্যাপারে সরকার সময় চেয়েছে।

শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতারা বলেছেন, বাড়ি ভাড়া ভাতা বাড়ানোর নামে শুভঙ্করের ফাঁকি দিয়ে যে মজুরি কাঠামো করা হয়েছে, তাতে গার্মেন্টসের তিনটি পদের বা গ্রেডের শ্রমিকদের মূল বেতন কমে গেছে।

এ নিয়েই অসন্তোষ থেকে শ্রমিকরা গত কয়েকদিন ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ করেছে।

শ্রমিক নেতারা বলছেন, মালিকদের ওপরই সমাধান নির্ভর করছে। মালিক পক্ষও দাবি করছেন, তারা সমাধান চান।

তাহলে সমাধান হচ্ছে না কেন?

সরকার বলছে, সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন রোববার ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে সমাধানের প্রশ্নে আলোচনা হবে।

গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা করা হয় গত নভেম্বরে। তা বাস্তবায়ন করা হয়েছে ডিসেম্বর থেকে।

কিন্তু বেতন হাতে পাওয়ার পর শ্রমিকরা বুঝতে পারেন যে, তাদের অনেকের ৮হাজার টাকার মূল মজুরি কমে গেছে।

এই খাতে সাত ধরনের পদে বা গ্রেডে শ্রমিকরা কাজ করে থাকেন।

এরমধ্যে মেশিন বা যন্ত্রপাতি যারা অপারেট করেন, তাদেরই তিনটি গ্রেডের শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

গার্মেন্টস শ্রমিকদের একটি সংগঠনের নেত্রী নাজমা আকতার বলছিলেন, মজুরি কাঠামোতে একটা শুভঙ্করের ফাঁকি রাখা হয়েছিল।

“শ্রমিকদের যারা মূল শ্রম দেন বা মেশিনে কাজ করেন, তাদের মূল মজুরি কমে গেছে। সেকারণেই তাদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল।”

অনেক শ্রমিক সংগঠনও অভিযোগ তুলেছে, নতুন মজুরি কাঠামোর মধ্যে একটা লুকোচুরি ছিল।

সে বিষয়টিই শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ বাড়িয়েছে। গত কয়েকদিনে ঢাকা এবং এর আশে পাশে গার্মেন্টস অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ হয়েছে। কোন কোন জায়গায় বিক্ষোভ সহিংস রূপ নিয়েছে।

মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র প্রেসিডেন্ট সিদ্দিকুর রহমান মজুরি কাঠামোতে লুকোচুরির অভিযোগ অস্বীকার করেন।

“আমরা বাড়ি ভাড়ার ভাতা বাড়িয়েছিলাম। এখন তারা বলছে, তাদের মূল মজুরি কমে গেছে। পৃথিবীতে সব জায়গায় বেতন যখন বাড়তে থাকে, তখন উপরের গ্রেডগুলোতে কমতে থাকে। সেটা বিভিন্নভাবে এডজাস্ট করা হয়।”

“ঢাকায় তিন হাজার কারখানা চলে। সেখানে কয়টা কারখানায় সমস্যা হচ্ছে? সমস্যা হচ্ছে দু’একটা কারখানায়। তারা বের হয়ে অন্য কারখানায় গিয়ে তারা আঘাত করছে, বা লোক নামানোর চেষ্টা করছে। এর পিছনে রাজনৈতিক কোন কিছু থাকতে পারে। কোন ইন্ধন-দাতা থাকতে পারে। আমাদের গত ছয় মাসে গ্রোথ অনেক ভাল। এটা কারও কারও ভাল নাও লাগতে পারে। সেটা সরকারকে খুঁজে বের করতে হবে।”

আওয়ামী লীগের টানা তৃতীয়বারের সরকার যখন শপথ নিয়েছে সেই সময়টাতে এই বিক্ষোভগুলো হয়েছে। সেই বিষয়টাকে তুলে ধরে সরকারও এর পিছনে রাজনীতি খুঁজছে।

অবশ্য শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে গত বৃহস্পতিবার শ্রম মন্ত্রণালয়ে সরকার, মালিক পক্ষ এবং শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতাদের বৈঠক হয়েছে। কিন্তু সমাধান আসেনি। সরকার সমাধানের প্রশ্নে সময় চাইছে।

শ্রমিক নেতারা মনে করেন, মালিকপক্ষের উপরই সমাধান নির্ভর করছে।

শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব আফরোজা খান বলেছেন, সমস্যা চিহ্নিত হওয়ায় এখন সমাধান সম্ভব হবে।

“আমরা এই সমস্যাটা চিহ্নিত করেছি। এখন এই সমস্যা নিয়ে বসবো, তারপরই তো সমাধান আসবে। আমরা তো মালিকদের নিয়ে বসবো। আগে দেখি সমাধান করতে গেলে মালিকদের কাছ থেকে কী ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন হবে। মালিকরা তো সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত। তারাও আশ্বাস দিয়েছেন যে, কারও বেতন কমবে না।”

মালিকপক্ষ বলছে, কারও মূল বেতন যাতে না কমে, সেটা বিবেচনায় রেখে একটি উপায় তারা চিন্তা করেছেন।

সিদ্দিকুর রহমান বলছিলেন, “আমাদের একটাই উপায় আছে, বাড়ি ভাতা কমিয়ে আগের মতো ৪০ শতাংশে নিয়ে যদি মূল মজুরিতে বেড়ে যায়। এটা নিয়ে আমরা আলোচনা করবো। কিভাবে সমাধান করা যায়, সেই চেষ্টা আমরা করবো।”

এখন রোববার শ্রম মন্ত্রণালয়ে আবারও সরকার, মালিক পক্ষ এবং শ্রমিক নেতাদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেই বৈঠকে সমাধানের উপায় বের করার চেষ্টা করা হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।