গাড়িতে ওঠানোর পরপরই চোখ-মুখ বেঁধে ফেলা হয়!

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের তিন যুগ্ম আহ্বায়ককে সোমবার দুপুরে আটক করেছিল পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তবে এক ঘণ্টা পর তাঁদের ছেড়ে দেয়। এরপর তিন নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এসে সংবাদ সম্মেলন করেন।

যাঁদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তাঁরা হলেন নূরুল হক, রাশেদ খান ও ফারুক হোসেন।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন করতে গিয়ে আহতদের দেখতে তাঁরা তিনজন রিকশায় করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। দুপুর দেড়টার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে যাওয়া মাত্র সাদা পোশাকের ডিবি পুলিশের কয়েকজন সদস্য অস্ত্র দেখিয়ে তাঁদের তিনজনকে মাইক্রোবাসে ওঠায়। এরপর একজনের চোখ-মুখ বেঁধে ফেলে। এ অবস্থায় ডিবি পুলিশের সদস্যরা তাঁদের বলেন, তাঁদের কাছ থেকে কিছু তথ্য নেবেন এবং ভিডিও দেখাবেন। এরপর তাঁদের গুলিস্তানে নিয়ে যান। সেখানে ডিবি পুলিশের সদস্যরা কয়েকটি গামছা কেনেন। এরপর গামছা দিয়ে তাঁদের বাকি দুজনের চোখ-মুখ বেঁধে ফেলেন। রমনায় ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে তাঁদের চোখ-মুখ খোলা হয়। দুপুর আড়াইটার দিকে তাঁদের ছেড়ে দেয় ডিবি পুলিশ। এরপর তাঁরা ক্যাম্পাসে চলে আসেন।

আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, ‘ডিবি পুলিশের সদস্যরা আমাদের গাড়িতে ওঠানোর সময় আরো বলেন, আমাদের ওপর নাকি বিপক্ষ গ্রুপ হামলা চালাবে। এ জন্য আমাদের নিরাপত্তার জন্য ধরে নিয়ে যাচ্ছেন।’

রাশেদ খান অভিযোগ করেন, তাঁর গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ পৌরসভায়। আজ সকালে ঝিনাইদহ থানার পুলিশ তাঁদের বাড়িতে হানা দেয়। দুপুরে তাঁর বাবা নবাই বিশ্বাসকে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে তাঁকে বিভিন্ন ধরনের গালিগালাজ করা হয়েছে। তাঁর বাবা ও তিনি জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন। তবু পুলিশ জোর করে তাঁদের পরিবারকে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে যুক্ত করার প্রমাণ করতে চাইছে।

সংবাদ সম্মেলন শেষে ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ মিছিল বের করে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। তাঁরা কোনো কর্মসূচির ঘোষণা দেননি।

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের তিন নেতাকে আটকের ব্যাপারে ডিবি পুলিশের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে আমাদের ঝিনাইদহের স্টাফ করেসপনডেন্ট মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করা রাশেদ খানের বাড়ি ঝিনাইদহ পৌরসভার মুরারিদহ গ্রামের মিয়াপাড়ায়। তাঁর বাবা নবাই বিশ্বাস রাজমিস্ত্রির কাজ করেন।

ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক জানান, নবাই বিশ্বাসের ছেলে রাশেদ খান ও পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়স্বজনদের সম্পর্কে তথ্য জানতে আজ সকালে পুলিশ তাদের বাড়িতে যায়। এরপর বিকেল পৌনে ৩টায় নবাই বিশ্বাসকে ফোন করে থানায় ডেকে আনা হয়। কিছুক্ষণ কথা বলার পর স্থানীয় কাউন্সিলর বশির আহমেদের জিম্মায় বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নবাই বিশ্বাসকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়নি, হয়রানিও করা হয়নি।

জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে নবাই বিশ্বাস ও তাঁর ছেলে রাশেদ খানের কোনো সংশ্লিষ্টতা পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে ওসি বলেন, এ ব্যাপারে পরে জানাবেন।