গায়িকাও ছিলেন নায়িকা অঞ্জু ঘোষ

ঢাকাই সিনেমায় ইতিহাস সৃষ্টি করা নায়িকা অঞ্জু ঘোষ। ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ দিয়ে বাজিমাত করেছিলেন দুই বাংলাতে। অনেকদিন ধরেই তিনি চলচ্চিত্র থেকে দূরে৷

বর্তমানে থাকছেন কলকাতায়। দীর্ঘ ২২ বছর পর সম্প্রতি এসেছিলেন মাতৃভূমি বাংলাদেশে। তাকে কাছে পেয়ে আনন্দে উদ্বেলিত ছিল চলচ্চিত্রের মানুষরা৷

এদিকে গানের নন্দিত মানুষ হাসান মতিউর রহমান জানালেন, নায়িকা অঞ্জু গায়িকাও ছিলেন। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশও হয়েছিল তার গানের একক এলবাম।

১৯৯০ সালে ক্যারিয়ারের সুবর্ণ সময়ে প্রকাশ হয়েছিল তার কণ্ঠের ১২ গানের এলবাম ‘মালিক ছাড়া চিঠি’। বেশ জনপ্রিয় সেই গানগুলো। এমনই তথ্য দিলেন জনপ্রিয় গীতিকার হাসান মতিউর রহমান।

মঙ্গলবার ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে তিনি সেই এলবামের বিস্তারিত জানালেন। তিনি লেখেন, ‘এই সেই অঞ্জু ঘোষ। সবার প্রিয় নায়িকা এবং গায়িকা। জন্ম ফরিদপুরে। বড় হয়েছেন চট্টগ্রামে। প্রথমে যাত্রাপালায়। পরে বড় পর্দায়। ২২ বছর পর আবার এসেছেন নিজের দেশে। ম্যাডামের সাথে আমার কাজের অনেক স্মৃতি।

‘বেদের মেয়ে জোসনা’ সুপারহিট হবার পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ৯০ সালের কথা। বাসার টিঅ্যান্ডটি নম্বরে ফোন। ধরতেই অপর প্রান্ত থেকে বললেন ‘অঞ্জু কথাচিত্র’ থেকে বলছি। আমাদের ম্যাডাম আপনার সাথে একটু কথা বলবেন। সব শুনে বললাম কাল কাকরাইলের অফিসে ১১টায় আসবো। পরদিন সময় মতোই গেলাম। দেখি ম্যাডাম টেবিলে হরেক রকম খাবার সাজিয়ে অপেক্ষা করছেন। ঢুকলাম। ভয়ে ভয়ে। সামনাসামনি এই প্রথম দেখা। দেখেই বললেন, আমাকে কিছু গান লিখে দিতে হবে। আমি গাইবো। শুটিং থেকে ফেরার সময় সেদিন আরিচা ঘাটে শুনি এক মুদি দোকানে একটা গান বাজছে। খবর নিয়ে জানলাম শিল্পী আশরাফ উদাসের ‘হারানো প্রেম’- গান লিখেছেন আপনি । অনেক ভালো লেগেছে আমার। এই রকম কিছু গান লিখে দিন। লিখবেন আমার উত্তরার বাসায় বসে। দুইটা গাড়ি। একটা আপনার জন্য। যতদিন গান লেখা-রেকর্ডিং শেষ না হয় ততদিন ড্রাইভার আপনার পিছে আঠার মতো লেগে থাকবে। রাজি হলাম। সুর করার জন্য সাথে নিলাম আশরাফ উদাসকে। ছুটির দিনে আশরাফ প্র্যাকটিস করায়। ভালো সম্মানী দেয়। মাঝেমধ্যে যাই। গান লিখি চলে আসি। তার বাসায় যখন তখন ফিল্মের পার্টি আসে। উনাদেরও সময় দেন। আমাকে ম্যাডামের বেডরুমে বিশ্রাম নিতে বলে যান। ওই এক রুমেই শুধু এসি বেডরুমের দেয়ালে খাজা বাবার দরবারের বিরাট ছবি। ম্যাডাম আজমির শরিফের ভক্ত। যতবার রুমে ঢোকেন ততবার মুখে এবং কপালে হাত ছুঁইয়ে বাবাকে সম্মান দেখান। গান লেখা শেষ। মিউজিক করার দায়িত্ব দিলেন ফরিদ আহমেদ ভাইকে। স্টুডিও নিলাম বেইলি রোডের পান্না ভাইয়ের অডিও আর্টে। বাজালেন মানাম ভাই, লিটন ডি কস্টা, মরহুম বারি সিদ্দিকী, মনিরুজ্জামান ভাই। গিটার সেলিম হায়দার ভাই। তবলায় মিলনদা।’

তিনি আরও লেখেন, রাত ৩টায় শুরু করতাম ভয়েস নেয়া। দিনে ম্যাডাম শুটিং করতেন। একে একে হয়ে গেল ১২ গান। অনেক কাজের মাঝেও কী করে যে গাইলেন! দম ছোট তাই প্রতিটি শব্দ আলাদা করে গাইতে হলো। আমি অবাক হয়ে গেলাম। একদিন আসাদ গেটের মিডনাইট সান রেস্টুরেন্টে মহাআড়ম্বরে হলো ক্যাসেটের মোড়ক উম্মোচন। বসেছিল চলচ্চিত্র অঙ্গনের মিলনমেলা। কে আসেনি ম্যাডামের দাওয়াতে! পরদিন বাজারে এলো আমার ‘চেনাসুর’ থেকে অঞ্জু ঘোষের নিজ কণ্ঠে গাওয়া একটি পূর্ণাঙ্গ গানের এলবাম ‘মালিক ছাড়া চিঠি’৷ এলবামের একটা গান ছিল ‘এইটে আমি ফার্স্ট হইয়া নাইনে উঠছি মাত্র/বইয়ের ভাঁজে হঠাৎ একদিন পাইলাম প্রেমপত্র।’