‘গুপ্তচর’ পরিবারকে ফিরিয়ে নিয়ে মিয়ানমার বলছে প্রত্যাবাসন

মিয়ানমার সরকারের দাবি করা প্রথম রোহিঙ্গা পরিবারের মিয়ানমারে ফেরত যাওয়া প্রত্যাবাসনের আওতায় পড়ে না জানিয়ে মন্তব্য করেছেন শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম। আর এটাকে মিয়ানমারের ‘কূটচাল’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটি, এমনকি ফিরে যাওয়া ওই পরিবার মিয়ানমারের গুপ্তচর হিসেবে কাজ করত বলেও অভিযোগ করেন এক মাঝি।

শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম বলেন: আকতার নামে এক রোহিঙ্গা নাগরিক তার পরিবার নিয়ে মিয়ানমার ফেরত গেছেন বলে আমি শুনেছি। এটা প্রত্যাবাসনের আওতায় পড়ে না।

‘‘তমব্রু সীমান্তের নোম্যানস ল্যান্ডে প্রায় ৬ হাজার রোহিঙ্গা পরিবার রয়েছে। ওই পরিবারগুলো প্রত্যবাসনের আওতায় পড়ে না। মিয়ানমার সরকারকে আগে থেকেই বলা হচ্ছে ওই পরিবারগুলো ফেরত নিতে। কিন্তু তারা সবাইকে ফেরত না নিয়ে শুধু একটি পরিবারকে নিয়ে গেছে।’’

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক গফুর উদ্দিন বলেন: এটি মিয়ানমারের একটি ‘কূটচাল’। তারা বিশ্ববাসীর চাপ থেকে বাঁচতে নিজেদের লোককে এভাবে নিয়ে গিয়ে বিশ্ববাসীর সামনে একটি নাটকের মহড়া করার চেষ্টা করছে। আমরা চাই দিনের বেলায় সবার সামনে প্রত্যাবাসন হোক।

মিয়ানমারের রাখাইন থেকে সেদেশের সেনা বাহিনীর নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা এক রোহিঙ্গা পরিবার স্বেচ্ছায় রাতের অন্ধকারে শুন্য রেখা থেকে মিয়ানমারে ফেরত গেছে। ফেরত যাওয়া পরিবারের গৃহকর্তার নাম মোহাম্মদ আকতার আলম। সে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের তুমব্রু এলাকার বাসিন্দা এবং ঐ এলাকার স্থানীয় চেয়ারম্যান।

১৪ এপ্রিল শনিবার দিবাগত গভীর রাতে মিয়ানমার সীমান্তের ঢেকিবনিয়া সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারের ফেরত যায় তারা। আর একাজে সহযোগিতা করেছে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড (বিজিপি)। তারা সেখানে গিয়ে ‘এমবিসি’ কার্ড সংগ্রহ করেছেন বলে জানিয়েছেন তুমব্রু নো-ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা।

তুমব্রু নোম্যানস ল্যান্ডে বসবাসরত রোহিঙ্গা মো: এরফান জানিয়েছেন: আকতার আলম গত বছরের ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইনে সহিংস ঘটনার পর অন্যান্য রোহিঙ্গাদের সাথে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু এলাকায় একটি ইউপি মহিলা সদস্যের বাড়িতে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন।

খালেদ হোসেন নামের এক রোহিঙ্গা নেতা জানান: মিয়ানমারের ফেরত যাওয়া মো: আকতার আলমের ২ ছেলে, ২ মেয়েসহ পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৬ জন। এর মধ্যে এক মেয়েকে রেখে ৫ জনকে নিয়ে মিয়ানমারে ফেরত গেছে। তবে এ তথ্য অন্যান্য রোহিঙ্গারা কেউ জানত না। তবে ওই পাড়ে গিয়ে ‘এমবিসি’ কার্ড সংগ্রহ করে তার নিজ গ্রামে ফেরত গেছে বলে জানা গেছে।

মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংস ঘটনার পর থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নে তুমব্রু সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে প্রায় ৬ হাজার পরিবার বসবাস করে আসছিল। নো-ম্যানস ল্যান্ডে অন্যান্য রোহিঙ্গাদের সাথে থাকার জন্য মো: আকতার আলমের ঝুঁপড়ি ঘর থাকলেও সে স্থানীয় বাংলাদেশী এক ইউপি সদস্যের বাড়িতে ভাড়া বাসায় থাকত বলে জানান রোহিঙ্গারা।

আরেক রোহিঙ্গা মাঝি দিল মোহাম্মদ জানান: মিয়ানমারে যাওয়া আকতার একজন মিয়ানমারের গুপ্তচর। সে এখানে এসে মিয়ানমারের হয়ে কাজ করতো।