গুলশানে জঙ্গি হামলা : সোহেল মাহফুজের সাত দিনের রিমান্ড

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার হওয়া হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

রোববার শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম এ এইচ এম তোয়াহা রিমান্ডের আদেশ দেন।

রোববার দুপুরে সোহেল মাহফুজকে আদালতে হাজির করে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, গুলশানে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনাকারীদের একজন সোহেল মাহফুজ। সে নব্য জেএমবির শুরা সদস্য। দীর্ঘদিন ধরে সে নব্য জেএমবির সদস্য সংগ্রহ ও তাদের মোটিভেট করে আসছিল। এই আসামি তামিম চৌধুরী, মারজান, বাসারুজ্জামান চকলেটসহ অন্যদের সঙ্গে মিলে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া সে হামলার জন্য অস্ত্র ও গ্রেনেড সরবরাহ করাসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে আসছিল বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পাওয়া গেছে।

মামলার সুষ্ঠু তদন্ত, অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার এবং ওই ঘটনায় অস্ত্র, বিস্ফোরক ও অর্থদাতাদের চিহ্নিত এবং গ্রেপ্তারের জন্য এই আসামির ১০ দিন রিমান্ড মঞ্জুরের আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। তবে এ সময় আসামির পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। শুনানি শেষে আদালত তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গতকাল শনিবার ভোর রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের চাওলা রোড পুস্করনির পাড়ের ফজলুর আমবাগান এলাকা থেকে সোহেল মাহফুজকে গ্রেপ্তার করে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) ও জেলা পুলিশ।

কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের দাবি, সোহেল মাহফুজ নব্য জেএমবির উত্তরাঞ্চলীয় কমান্ডার। তিনি জেএমবির ভারত শাখার প্রথম আমির ছিলেন। সোহেল মাহফুজ গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার জন্য গ্রেনেড সরবরাহ করেছিলেন। তিন বছর আগে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় তাকে গ্রেপ্তারে ১০ লাখ রুপি পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। তখন তার নাম ছিল নসরুল্লাহ।

সোহেল মাহফুজ কুষ্টিয়ার কুমারখালীর সাদিপুর কাবলিপাড়ার রেজাউল করিমের ছেলে। তিনি শাহাদাত, নসরুল্লাহ, রিমনসহ একাধিক নামে পরিচিত। এক হাত না থাকায় তিনি ‘হাতকাটা সোহেল’ নামেও পরিচিত।

প্রসঙ্গত, গত বছর ১ জুলাই রাত পৌনে ৯টার দিকে কূটনৈতিক এলাকা গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে অস্ত্রধারী জঙ্গিরা হামলা করে এবং দেশি-বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করে। এ সময় অভিযান চালাতে গিয়ে জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাউদ্দিন খান নিহত হন। রাতের বিভিন্ন সময় তিন বাংলাদেশিসহ ২০ জন জিম্মিকে হত্যা করে জঙ্গিরা।

পরের দিন সকালে যৌথ বাহিনী কমান্ডো অভিযান চালায়। এতে পাঁচ হামলাকারীসহ ছয়জন নিহত হয়। জীবিত উদ্ধার করা হয় ১৩ জিম্মিকে।

গত বছরের ৪ জুলাই নিহত ৫ জঙ্গিসহ অজ্ঞাতদের আসামি করে গুলশান থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশের ঢাকা মহানগর কাউন্টার টেররিজম ইউনিট।