গ্যাস উন্নয়ন তহবিলে ১০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ

জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের অনুরোধে গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের অর্থ পুনর্ভরণের জন্য শর্তসাপেক্ষে ১০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট অনুবিভাগের সারসংক্ষেপে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অনুমোদন দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

অর্থ বিভাগের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, গ্যাস উন্নয়ন তহবিল নীতিমালা, ২০১২ অনুযায়ী ভোক্তা পর্যায়ে ২০০৯ সালে ৩০ জুলাই গ্যাসের দাম ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়ানো হয়। এর ফলে ওই দামের ওপর প্রযোজ্য সম্পূরক শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর বাবদ ৫৫ শতাংশ হারে আদায়কৃত অতিরিক্ত অর্থ থেকে পূর্ববর্তী পঞ্জিকা বর্ষে (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) সমপরিমাণ অর্থ গ্যাস উন্নয়ন তহবিলে অর্থ বিভাগের বাজেট থেকে বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ সিদ্ধান্ত অনুসারে অর্থ বিভাগের ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার যেতে পারে।

অর্থ বিভাগ থেকে শর্ত দেওয়া হয়েছে, তহবিলের অর্থ দিয়ে প্রকল্প গ্রহণ, অনুমোদন ও বাস্তবায়ন এবং অন্যান্য কার্যক্রম গ্রহণে সরকারের আর্থিক বিধি-বিধান ও নিয়মাবলী যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। একই সঙ্গে আর্থিকভাবে গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য তহবিলে অর্থের স্থিতি এবং এর অর্থ দিয়ে বাস্তবায়িত প্রকল্পসমূহের বিষয় সরকারি নীতিমালা অনুসারে নিয়মিত পরিবীক্ষণ এবং অডিট কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

সূত্র জানায়, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ গত ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ১ হাজার ৩৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা গ্যাস উন্নয়ন তহবিলে প্রত্যার্পণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অর্থ বিভাগকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেয়। এতে বলা হয় যে, ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অতিরিক্ত অর্জিত অর্থ থেকে সম্পূরক শুল্ক ও মূসক খাতে ইতিমধ্যে মোট ৪৩৪ কোটি ৩১ লাখ ৯ হাজার ৭২৮ টাকা চালানের মাধ্যমে সরকরি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে। ২০১৬ সালের অবশিষ্ট পরিশোধ্য প্রাক্কলিত ২২০ কোটি ৪০ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়।

সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত চার বছরে উক্ত খাতে ৫৩৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা প্রত্যাপর্তণের মাধ্যমে জমা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২০১২ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চার বছরে ১ হাজার ৩৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা প্রত্যার্পণের জন্য অপেক্ষমান।

সূত্র জানায়, মূলত দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রধান জ্বালানি প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা অব্যাহতভাবে বৃদ্ধির ফলে গ্যাসের মজুদ ক্রমান্বয়ে কমে গেছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ভিন্ন কৌশল নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের জন্য অর্থ বিভাগের নীতিগত অনুমোদন এবং গ্যাস উন্নয়ন তহবিল নীতিমালা, ২০১২ অনুযায়ী ভোক্তা পর্যায়ে ২০০৯ সালের ৩০ জুলাই গ্যাসের দাম ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ বৃদ্ধির ফলে বর্ধিত দামের ওপর প্রযোজ্য সম্পূরক শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর বাবদ ৫৫ শতাংশ হারে আদায়কৃত অতিরিক্ত অর্থ থেকে পূর্ববর্তী পঞ্জিকা বর্ষে (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) সমপরিমাণ অর্থ গ্যাস উন্নয়ন তহবিলে অর্থ বিভাগের বাজেট থেকে প্রত্যার্পণ করা হয়।

সূত্র জানায়, গত বছর ১৪ জানুয়ারি অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিবের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে বেশকিছু সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তীতে ওই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের (বাজেট ও ব্যয় নিয়ন্ত্রণ) সভাপতিত্বে দুটি বৈঠক হয়। বৈঠকে পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে অবহিত করা হয় যে, ২০১৭ সালের ১৪ মে পর্যন্ত তহবিলে ৭ হাজার ৫৭৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা জমা হয়েছে। উক্ত অর্থ থেকে মোট ২৯টি গৃহীত প্রকল্পের বিপরীতে ৩ হাজার ৩৬৫ কোটি ৯ লাখ টাকা অবমুক্ত করা হয়েছে। ২৯টি প্রকল্পের মধ্যে ১১টি প্রকল্প শেষ হয়েছে এবং বাকি ১৮টি প্রকল্প চলমান। বর্তমানে উক্ত তহবিলে ৪ হাজার ২০৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা স্থিতি আছে। জিডিএফভূক্ত প্রকল্পসমূহের অগ্রাধিকার তালিকায় পাঁচটি নতুন প্রকল্পের জন্য মোট ১ হাজার ২৮০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। যার ডিপিপি এখনো অনুমোদিত হয়নি। এতে মোট অর্থের প্রয়োজন হবে ৪ হাজার ২৮৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। বিস্তারিত আলোচনা শেষে বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে ১০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। সে সুপারিশের ভিত্তিতে গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের অর্থ পুনর্ভরণের জন্য ১০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।