গ্রেনেড হামলার স্থান পরিদর্শন করেননি বাবর

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে বর্বরোচিত ও নৃশংস গ্রেনেড হামলার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাননি তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর।

মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান আসামি লুৎফুজ্জামান বাবরের আইনজীবীর যুক্তিতর্ক পেশের সময় এ কথা বলেন।

যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই তথ্য জানান তিনি।

সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, ঘটনাস্থলের খুব কাছেই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর অফিস হওয়া সত্ত্বেও এই বর্বরোচিত ও নৃশংস গ্রেনেড হামলার পর ঘটনাস্থল একবারের জন্যও পরিদর্শনে যাননি লুৎফুজ্জামান বাবর।

মঙ্গলবার রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে ২১ আগস্টের ঘটনার পৃথক মামলায় একই সঙ্গে বিচার চলছে। মামলায় এ পর্যন্ত ৪৪ আসামির পক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ শেষ হয়েছে। আজ ছিল এ মামলার যুক্তিতর্ক পেশ করার ১১১তম দিন। বাবরের পক্ষে এদিন সপ্তম দিনের মতো যুক্তিতর্ক পেশ করেন তার আইনজীবী নজরুল ইসলাম। এই যুক্তিতর্ক পেশ শেষ হলে আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি সমাপ্ত হবে। আগামীকাল (২৯ আগস্ট) মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য রয়েছে।

মঙ্গলবার আসামি বাবরের পক্ষে তার আইনজীবী নজরুল ইসলাম মামলার আইও আবদুল কাহ্হার আখন্দের (পিডব্লিও-২২৫) সাক্ষ্য থেকে যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন। যুক্তিতর্ক অসমাপ্ত থাকায় মামলার কার্যক্রম বুধবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।

আইনজীবী নজরুল ইসলাম যুক্তিতর্কে দাবি করেন তার মক্কেল ২১ আগস্টের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।

অপরদিকে প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দাবি করেন, ‘আসামি বাবর এ ঘটনার সঙ্গে যে সম্পৃক্ত রাষ্ট্রপক্ষ তা সাক্ষ্য ও তথ্য দিয়ে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে।’

আদালত আজও আসামি বাবরের আইনজীবীকে সাক্ষ্য ও জবানবন্দি থেকে প্রাসঙ্গিক যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে তাগিদ দিয়েছেন। আইনজীবী নজরুল ইসলাম আদালতে বলেন, বুধবার বাবরের পক্ষে যুক্তিতর্ক তিনি শেষ করবেন। তারপর ল’পয়েন্টে বাবরের পক্ষে পরবর্তী ধার্য তারিখে অন্য একজন আইনজীবী যুক্তি পেশ করবেন।

রাষ্ট্রপক্ষের অপর আইনজীবী মোশররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের বলেন, ২১ আগস্ট বর্বরোচিত ও নৃশংস গ্রেনেড হামলার ঘটনায় আনা পৃথক মামলার বিচার এখন একবারেরই শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান, বিশেষ পিপি মো.আবু আব্দুল্লাহ্ ভূঁইয়া, আকরাম উদ্দিন শ্যামল. অ্যাডভোকেট ফারহানা রেজা, অ্যাডভোকেট আমিনুর রহমান, আশরাফ হোসেন তিতাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অ্যাডভোকেট আমিনুর রহমান জানান, ২১ আগস্টের ঘটনায় পৃথক মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৫২ জন। এর মধ্যে অন্য মামলায় ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তাদেরকে মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এরা হলেন- জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান ও শরীফ সাহেদুল আলম বিপুল। এখন ৪৯ আসামির বিচার চলছে। এর মধ্যে এখনও তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরীসহ ১৮ জন পলাতক। বাবর, সালাম পিন্টুসহ ২৩ আসামি কারাগারে ও ৮ জন জামিনে রয়েছেন।

এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ২২৫ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামিপক্ষ সাক্ষিদের জেরা করেছে। গত বছরের ৩০ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দের জেরা শেষের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।

বিচারের মুখোমুখী থাকা ৪৯ আসামির মধ্যে জামিনে রয়েছেন- বেগম খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী এবং মামলার সাবেক তিন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান ও আব্দুর রশীদ এবং সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম।

অপরদিকে এ মামলায় কারাগারে আছেন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, সেনা কর্মকর্তা রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীসহ ২৩ জন।

উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ওই ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগের ২৪ নেতাকর্মী নিহত এবং আইনজীবী, সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন মহিলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান।

ওই ঘটনায় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের প্রথম সারির বেশ কয়েকজন নেতা অল্পের জন্য বেঁচে যান। তবে প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে শেখ হাসিনার শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।