গ্রেফতার হতে পারেন ফরহাদ মজহার!

‘অপহরণ নাটক’, ‘মিথ্যাচার’, ‘সাজানো গল্প’। বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হকের সংবাদ সম্মেলন এবং সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ দেখার পর সম্প্রতি কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহারের নিখোঁজের বিষয়ে এভাবেই মন্তব্য ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে।

সংবাদ সম্মেলনে আইজিপি ‘ফরহাদ মজহার স্বেচ্ছায় ঘর ছেড়েছেন’ বলে দাবি করেন। ‘সরকারকে বিব্রত করার জন্য তিনি এ ধরনের রটনা রটিয়েছেন’ বলে জানাচ্ছে পুলিশ।

তবে ‘সাজানো অপহরণ’- এর পেছনে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটকে দায়ী করেন ফরহাদ মজহারের পরিবারসহ সমাজের বিশিষ্টজনেরা। একটি বাহিনীকে হেয়প্রতিপন্ন, সরকারকে বিব্রত ও জনগণকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ আনা হতে পারে ফরহাদ মজহারের বিরুদ্ধে। এমনকি যেকোনো সময় গ্রেফতারও হতে পারেন তিনি!

ফরহাদ মজহারকে অপহরণ করা হয়েছে- এমন দাবি করে তার স্ত্রী ফরিদা আখতার বাদী হয়ে আদাবর থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। উদ্ধারের পর ফরহাদ মজহার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ‘সরকারকে বিব্রত করতে আমাকে চোখ বেঁধে অপহরণ করা হয়েছিল। কে বা কারা অপহরণ করেছিল, আমি তাদের চিনি না।’

অপহরণ মামলার তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ফরহাদ মজহার উদ্ধারের পর ডিবি কার্যালয়, আদালত এবং এরপর বারডেম হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে সুস্থ হয়ে গত বুধবার তিনি বাড়ি ফেরেন।

বারডেমে থাকা অবস্থায় কিংবা বাড়িতে ফিরে তিনি তদন্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। বেশ কয়েকবার বাড়িতে গেলেও তিনি নিজেকে ‘অসুস্থ’ এবং কথা বলার জন্য ‘অপ্রস্তুত’ বলে দাবি করেন।

গ্রেফতার আতঙ্কে তিনি মিডিয়া ও পুলিশ থেকে এমন করছেন কি না- জানতে শনিবার সন্ধ্যায় তার স্ত্রী ফরিদা আখতারের ব্যক্তিগত মোবাইলে বেশ কয়েকবার কল দেয়া হয়। কিন্তু তিনি রিসিভ করেননি।

ফরহাদ মজহার যদি মিথ্যাচার করে থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি শহীদুল হক বলেন, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায় কি না, দেখা হচ্ছে।

পুলিশ ও মিডিয়াকে এড়িয়ে চললেও সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান’কে সাক্ষাৎকার দেন তিনি। সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, তাকে অপহরণ করা হয়েছিল। তার সঙ্গে যা ঘটেছে তা প্রকাশ করতে তিনি ভীত নন। ঘটনার সময় তিনি পকেট থেকে মোবাইল ফোনটি বের করার সুযোগ পান এবং তার স্ত্রীকে ফোন দেন। এরপর অপহরণকারীরা তার চোখ বেঁধে ফেলে এবং মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। তিনি অপহরণকারীদের মুক্তিপণ দেয়ার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন, যেন তাকে তার স্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে দেয়া হয়।

তবে পুলিশের তদন্ত অনুযায়ী, স্ত্রীর সঙ্গে ফরহাদ মজহারের কথাবার্তা ছিল স্বাভাবিক। বিকেলের দিকে স্ত্রীকে ফোন দিয়ে অপহরণের বিষয়ে মিডিয়াতে আর কোনো কথা বলতে নিষেধ করেন।

যে কারণে ‘সাজানো’ বলছে পুলিশ

ফরহাদ মজহারের পরিবারের দাবি, একটি মাইক্রোবাসে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকেই দেশের মহাসড়কগুলোতে মাইক্রোবাস তল্লাশি করে পুলিশ। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। হয়তো অন্য কোনো মাধ্যমে তিনি ঢাকা থেকে খুলনা যান।

ফরহাদ মজহারের ফোন রেকর্ড অনুযায়ী, গত ৩ জুলাই ‘নিখোঁজের’ দিন ভোর ৫টা ২৯ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তার একটি সিম থেকে স্ত্রীর সঙ্গে ১০ বার কথা হয়। তার মোবাইলের আরেকটি সিম থেকে অন্যজনের সঙ্গে ছয়বার কথা হয়। সেই নম্বর থেকে একটি এসএমএসও আসে। নম্বরটি ছিল একজন নারীর। সেদিন দুপুরে ওই নারীর নম্বরে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং রকেটের মাধ্যমে তিনি প্রথমে ১৩ হাজার এবং পরবর্তীতে দুই হাজার টাকা পাঠান।

৩ জুলাই বিকেলে যখন ফেসবুকসহ দেশের গণমাধ্যমগুলোতে তার অপহরণের বিষয়টি ভাইরাল হয় এবং তার পরিবার যখন গণমাধ্যমে কথা বলেন তখন কিছুটা বিব্রত বোধ করেন ফরহাদ মজহার। সে সময় তিনি তার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে বলেন, এগুলো নিয়ে কথা বলা বন্ধ কর। ওরা বলেছে ছেড়ে দেবে। এটা নিয়ে আর কথা বলো না। ফোনের এ রেকর্ড পুলিশের কাছে রয়েছে।

৩ জুলাই বিকেল ৪টা ২১ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৬টা ২৮ মিনিট পর্যন্ত তিনি খুলনার নিউমার্কেটে ছিলেন। পুলিশের কাছে তার উপস্থিতির সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ রয়েছে। তবে পুলিশের কাছে দেয়া জবানবন্দিতে ফরহাদ মজহার দাবি করেন, তিনি সন্ধ্যায় মুক্ত হন।

প্রসঙ্গত, গত ৩ জুলাই ভোর সাড়ে ৫টায় নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন ফরহাদ মজহার। নিখোঁজের পর তাকে অপহরণের অভিযোগ করেন তার পরিবার। তার সহকর্মীরা প্রতিবেশী দেশের গোয়েন্দা সংস্থাকে এ অপহরণের জন্য দায়ী করেন। ওই দিন সন্ধ্যায় ফরহাদ মজহারকে খুলনার হানিফ পরিবহনের ঢাকাগামী একটি বাস থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। দীর্ঘ ১০ দিন তদন্তের পর পুলিশের দাবি, তিনি স্বেচ্ছায় ঘর ছেড়েছিলেন।খরব জাগো নিউজের।