ঘুম না হওয়ার সাথে কি অকাল মৃত্যুর সম্পর্ক আছে?

যদি আপনি অনিদ্রা রোগে ভুগে থাকেন তাহলে সুসংবাদটা আপনার জন্যে। সাম্প্রতিক এক গবেষণা জানাচ্ছে, ঘুম না হওয়ার সাথে মানুষের দ্রুত মৃত্যুর কোনো সম্পর্ক নেই।

নতুন প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জার্নাল সায়েন্স স্পষ্টভাবে বলেছে, ইনসমনিয়া বা ঘুম না হওয়া জনিত রোগের সাথে দ্রুত মৃত্যুবরণের কোনো সম্পর্ক নেই।

ঘুমের আশায় ভোর ৪টা অব্দি যিনি বিছানায় এপাশ-ওপাশ করেন, গড়াগড়ি খান – তার জন্যে জার্নাল সায়েন্সের এই তথ্য হয়তো কিছুটা প্রশমন বা স্বস্তি বয়ে আনলেও আনতে পারে।

কারণ, ঘুমহীনতার সাথে দ্রুত মৃত্যুর সম্পর্ক না থাকা বিষয়ক সিদ্ধান্তে পৌঁছুবার আগে গবেষকেরা কয়েক কোটি মানুষের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছেন।

মোট ১৭টি গবেষণায় প্রায় ৩৭ মিলিয়ন বা ৩ কোটি ৭০ লাখ মানুষের তথ্য পর্যালোচনা করা হয়েছে।

ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান এনএইচএস থেকে এর আগে যা বলা হতো – নতুন এই প্রতিবেদনের বক্তব্য তার পুরোপুরি বিপরীত।

এনএইচএস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ইনসমনিয়ার কারণে মানুষের ওবেসিটি বা স্থূলতা, হৃদরোগ ও টাইপ-টু ডায়বেটিসের ঝুঁকি বাড়ার পাশাপাশি মানুষের আয়ু্ও কমে যায়।

কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে ইনসমনিয়ায় ভুগছেন এমন মানুষেরা মূলত তাদের আয়ু নিয়ে চিন্তিত নন, বরং ঘুম না হওয়া ক্লান্ত দেহে কী করে দিনটা শেষ করবেন সেটি নিয়েই তারা বেশি চিন্তিত।

নিজের ইনসমনিয়া নিয়ে সেকেন্ডারি স্কুলের শিক্ষক নাভিদ খান বলছেন, তিনি রাতে চার ঘন্টার বেশি ঘুমাতে পারেন না। অবসাদগ্রস্ত দেহে দিনটা ভালোয় ভালোয় পার করতে পারবেন কিনা সেটি নিয়েই তার যত ভাবনা।

আর এই ক্ষেত্রে তিনি একটি টেকনিক বা কৌশল অবলম্বন করেন। সেটি হচ্ছে, নিজের পুরো দিনটিকে তিনি কয়েকটি খন্ডে ভাগ করে নেন।

ধরা যাক, তিনি একটা ক্লাস নেন, কোন মতে একটা ঘন্টা পর করে দেন, তারপরই একটা বিরতে, তার পর আরেকটা, তারপর দুপুরের খাবার বিরতি। এভাবেই দিনের একেকটি অংশ পার করার লক্ষ্য নিয়ে এগোন তিনি।

যুক্তরাজ্যে ইনসমনিয়া বা অনিদ্রা রোগে ভোগা মানুষের সংখ্যা প্রচুর। সাম্প্রতিক তথ্য মতে, দেশটিতে শতকরা ৩০ ভাগ লোক ইনসমনিয়ায় আক্রান্ত।

ইনসমনিয়াকে পরাস্ত করা সহজ নয়। কিন্তু ভালো ঘুম হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ানোর বেশ কিছু উপায় আছে।

অনিদ্রা রোগের প্রভাব কাটাতে এনএইচএস কয়েকটি তরিকা অনুসরণ করতে পরামর্শ দিয়েছিল। যেমন নিজের দেহটিকে ক্লান্ত করে তোলার জন্য প্রতিদিন কিছুটা ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করা, খাদ্য তালিকা থেকে চা-কফি জাতীয় পানীয় বা ক্যাফেইন কমিয়ে দেয়া।

পাশাপাশি বলা হয়েছে, ধূমপান, অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ বা বেশি রাত পর্যন্ত অ্যালকোহল পান করলে ঘুম ব্যাহত হতে পারে।

আর ২৯ বছর বয়সী লেখক এলমারা এবগেরিয়েন বলেছেন, নির্ঘুম রাত কাটানোর পর তিনি ক্লান্তিতে হয়রান ও বিরক্ত থাকেন। এমনকি তার এই বিরক্তির বহি:প্রকাশ-ও ঘটে তার চারপাশের লোকজনের ওপর।

এলমারা হয়তো কোন কোন রাতে ৬ ঘন্টা পর্যন্ত ঘুমোতে পারেন, কিন্তু প্রায় রাতেই তার কিছুক্ষণ পরপর ঘুম ভেঙে যায়।

আর এর প্রভাব পড়ে তার জীবনযাপনের ওপর। তার অবসন্ন লাগে, বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে ইচ্ছে করে না।

ইনসমনিয়ার কারণে এলমিরার স্বাস্থ্যের উপরে দীর্ঘস্থায়ী কোনো খারাপ প্রভাব পড়ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আশা করি এই অবস্থাটা দীর্ঘস্থায়ী হবে না”।

২৩ বছর বয়সী মিউজিশিয়ান র‍্যায়ান এ্যাশলি বলেন, ঘুম না হওয়ার বাস্তবতার সাথে তিনি যেনো নিজেকে অনেকটাই খাপ খাইয়ে নিয়েছেন।

মি. এ্যাশলি বলছিলেন যে, নিশ্চয়ই রাতভর ঘুমানোর অভিজ্ঞতাটা একটা দারুণ ব্যাপার। কিন্তু তিনি এটির সাথে নিজেকে মেলাতে পারেন না কারণ কখনোই রাতভর একটানা ঘুমের অভিজ্ঞতা তার নেই।

হাঙ্গামাপূর্ণ একটি শৈশবের ভেতর দিয়ে যাওয়ার কারণে মি. এ্যাশলির ঘুমের সমস্যার সূত্রপাত। তারও এলমারার মতনই বার বার রাতে ঘুম ভেঙে যায়।

ঘুমের সমস্যার কারণে এ্যাশলির আয়ু কমে যাচ্ছে কিনা এটি নিয়ে তিনি মোটেও চিন্তিত নন।

তবে হ্যাঁ, জার্নাল সায়েন্সের নতুন এই প্রতিবেদন যদিও বলছে, ইনসমনিয়ার সাথে দ্রুত মৃত্যুর কোনো সম্পর্ক নেই – কিন্তু অন্যান্য অসুখ যেমন ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশতা এবং ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতার সাথে ইনসমনিয়ার ঠিকই যোগসূত্র পাওয়া গেছে।

-বিবিসি বাংলা