‘চলতি বছরই ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় দৃশ্যমান পরিবর্তন আসবে’

চলতি বছরের মধ্যেই রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় দৃশ্যমান পরিবর্তন আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া।

ঢাকা মহানগরীতে ট্রাফিক সচেতনতা কর্মসূচি পালনের শেষ দিনে রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সোনারগাঁও ক্রসিংয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পরিদর্শন করতে গিয়ে তিনি এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, সেপ্টেম্বর মাসব্যাপী ট্রাফিক সচেতনতা কর্মসূচিতে আমরা অনেক সাফল্য পেয়েছি। তবে শতভাগ সফলতা অর্জন সম্ভব হয়নি। তাই ধারাবাহিক এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। সকলকেই আইন মানতে হবে, না মানলে তাদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করা হবে।

শত বছরের অভ্যাস দুই-এক মাসেই পরিবর্তন হয়ে যাবে, আমরা সেটা প্রত্যাশাও করি না। তবে আশা করছি সব প্রক্রিয়ায় ২০১৮ সালের মধ্যেই ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় দৃশ্যমান পরিবর্তন আসবে।

তিনি বলেন, সেপ্টেম্বর মাসে ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করার কারণে মামলার মাধ্যমে জরিমানা আদায় করা হয়েছে সাত কোটি টাকার ওপরে। অভিযানে পর্যাপ্ত গাড়ি ডাম্পিং করা হয়েছে, রেকারিং করা হয়েছে, মামলা দেওয়া হয়েছে।

আছাদুজ্জামান মিয়া আরো বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে আমরা কতটুকু অগ্রগতি অর্জন করতে পেরেছি সেটা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। ঢাকা শহরে কোনো ধরণের বাস স্টপেজের কোনো চিহ্ন ছিলনা। আমরা প্রায় ১৩০টার মতো বাস স্টপেজ তৈরি করেছি, সেসব জায়গায় বাস স্টপেজ শুরু ও শেষ লিখে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়া হয়েছে।

ট্রাফিক সচেতনতা কর্মসূচির আরো কিছু সফলতা তুলে ধরে কমিশনার বলেন, হেলমেট ছাড়া কেউ যাতে মোটরসাইকেল না চালাতে পারে, মোটরসাইকেলে যাতে একজনের বেশি যাত্রী না নেয়া হয় এবং প্রত্যেক যাত্রী যাতে হেলমেট পরিহিত অবস্থায় থাকে সেই উদ্যোগ নিয়েছি। এই উদ্যোগ অনেকটাই সফল হয়েছে, জনগণ এর প্রশংসা করেছেন।

পথচারীদের ফুটওভারব্রিজ ব্যবহারেও সফলতা এসেছে, কিন্তু কাঙ্খিত মাত্রায় নয়।

আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, আমি বিনীতভাবে বলতে চাই, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা আইন না মানার মানসিকতা। পথচারীরা আইন মানছেন না। আমরা জোর করেও ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করাতে পারছি না, জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করাতে পারছি না। চলন্ত গাড়ির সামনে দিয়ে যেখানে সেখানে রাস্তা পার হচ্ছেন পথচারীরা।

বাস চালকদের নিয়ে বারবার মিটিং করা হচ্ছে, সমন্বয় মিটিং, সচেতনতামূলক মিটিং করা হচ্ছে। তারপরও যেখানে সেখানে গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী তোলার অভ্যাসটা বন্ধ করা যাচ্ছে না।

রাজধানীবাসীকে অনুরোধ জানিয়ে ঢাকার পুলিশ কমিশনার বলেন, আপনারা যদি আইন না মানেন তাহলে শুধু পুলিশ নয় সরকারের কোনো বাহিনী দিয়েই এই ট্রাফিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।

ট্রাফিক পুলিশকে সহায়তা করতে হবে, ট্রাফিক আইন মানতে হবে। অন্যকে আইন মানতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

ফুটপাত দখলমুক্ত করতে হকারদের কর্মসংস্থানের বিষয় রয়েছে, লেগুনা কোনো পথে চলবে, কোন পথে চলবে না আমরা সেসব ভাবছি। সাফল্যের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি, কিন্তু আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সুশৃঙ্খল নগরী গড়ে তোলার প্রত্যাশা করেন কমিশনার।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় রাস্তাঘাটে যে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে এটা একটা প্রক্রিয়া। তবে বড় বিষয় অবকাঠামোগত পরিবর্তন করা। সরকারের পক্ষ থেকে এজন্য স্বল্প-মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুলিশ সদস্যদের চাঁদা আদায়ের অভিযোগের বিষয়ে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ব্যক্তিগতভাবে যদি কোনো ব্যক্তি অনিয়ম করে তাহলে সেই দায় একান্তই তার।

কোনো ব্যক্তির দায় তার প্রতিষ্ঠান নেবে না, যদি কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।