চামড়া সিন্ডিকেটের হোতা সরকারি দলের এক বড় নেতা : রিজভী

সরকারি দলের সিন্ডিকেটের কারসাজিতে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম কমিয়ে পাশের দেশে পাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এই সিন্ডিকেটের মূলহোতা ক্ষমতাসীন দলের এক বড় নেতা বলে তিনি দায়ী করেন।

ঈদুল আজহার পরেরদিন মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, কুরবানির পশুর চামড়ার টাকা গরিব, মিসকিন, ইয়াতিমদের হক। এই চামড়া বিক্রির টাকা তাদের মাঝেই বিতরণ করার নিয়ম। এটা তাদের ঈদের আনন্দের একটা উৎস।

‘বিএনপি সরকারের সময়ে এদেশে যে চামড়া কয়েক হাজার টাকায় বিক্রি হতো; এখন তা বিক্রি হচ্ছে ২/৩ শ’ টাকায়। ৮০ হাজার টাকা দামের গরুর চামড়ার দাম এখন ২২০ টাকা!!এক লাখ টাকার গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ২২৫ টাকায়।’

এই বিএনপি নেতা বলেন, সব জিনিসের দাম হু হু করে বাড়লেও দফায় দফায় কমতে কমতে দশ ভাগের এক ভাগে নেমেছে গরিব-মিসকিনের হক এই কাঁচা চামড়ার দাম। এমন করুণ অবস্থা দেখে নিরব প্রতিবাদ হিসাবে সিন্ডিকেটের কাছে বিক্রি না করে কোরবানির চামড়া মাটির নিচে পুঁতে রাখছেন অনেকে।

‘আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার অজুহাতে অনির্বাচিত আওয়ামীলীগের সিন্ডিকেট চামড়া নিয়ে এ কারসাজি করছে বেশ কয়েক বছর ধরে। এই চক্রের স্বার্থ রক্ষা করছে সরকার।’

রিজভী বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চামড়ার বর্গফুট প্রতি একটা হাস্যকর দাম বেধে দিয়ে তাদেরকে সহায়তা করছে। এই অল্প দামের কারণে চামড়া ব্যাপকভাবে পাচার হচ্ছে পার্শবর্তী দেশে। সিন্ডিকেট করে এতিমের হক মারার এ কান্ডকারখানা যারা চালাচ্ছে বছরের পর বছর ধরে, তারাও নিজেদের ধার্মিক বলে প্রচার করে।

‘এদের হোতা সরকারি দলের এক বড় নেতা। যেভাবে পাট শিল্প ধ্বংস করা হয়েছে, ঠিক সেই পথেই ধ্বংস করা হচ্ছে বাংলাদেশের ট্যনারি শিল্প। প্রশ্ন করার কেউ নেই। জবাব দেয়ার কেউ নেই।’

তিনি বলেন, সুইস ব্যাংকে আর কত টাকা পাঠানো সম্পন্ন হলে বাংলাদেশের জনগণ মুক্তি পাবে! আজ সুষ্ঠু নির্বাচনকে দূরে ঠেলে জনগনের সরকার নেই বলেই এভাবে জনগনের সর্বনাশ করা হচ্ছে।

‘সরকারের দায়বদ্ধহীনতার কারণে দেশের মানুষের ঈদ কেটেছে নিরানন্দে। একদিকে ঈদযাত্রায় সীমাহীন পথের দুর্ভোগ, সারাদেশে ডেঙ্গু মহামারি এবং দেশের বৃহৎ অঞ্চলজুড়ে ত্রাণবঞ্চিত বন্যার্ত মানুষের হাহাকার, অন্যদিকে গ্রামীণ জনপদে সরকারি দলের কর্মীদের অত্যাচার সব আনন্দ ম্লান করে দিয়েছে।’

রিজভী বলেন, সড়ক এবং রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ার কারণে বহু মানুষকে পথে ঘাটে ঈদ করতে হয়েছে। স্বস্তি ছিলনা ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রায়। আর এদিকে সরকারের কতিপয় মন্ত্রী এই ঈদযাত্রায় মানুষের চরম কষ্ট ক্লান্তি -মহাদুর্ভোগ নিয়ে রীতিমত কদর্য উপহাস করেছে।

তিনি বলেন, কতটা স্বাভাবিক বোধ-বুদ্ধি শূন্য হলে মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী উপহাসমূলক অবান্তর কথা বলতে পারেন! তারা মানুষকে মানুষ মনে করেন না, মনে করেন তাদের কেনা ক্রীতদাস । কারণ জনগণের ভোটে তো আর তারা নির্বাচিত হননি!

‘যখন দেশে রোজ অপঘাতে মারা পরছেন মানুষ। মানুষের জন্য নিরাপদ নয় খাদ্য, ঔষধ, সড়ক, নিরাপদ নয় কর্মস্থলও। অকাল মৃত্যুর বিভীষিকা নিয়ে হাজির হয় বিভিন্ন দুর্ঘটনা। দম বন্ধ করা এক দুঃসহ পরিস্থিতিতে মানুষ দিন যাপন করছে। তারপরেও সব স্বস্তিদায়ক বলে ক্ষমতাসীনরা আহ্লাদে আটখানা।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, সরকারের চরম ব্যর্থতার কারনে সড়ক- রেলপথ বিপর্যয়ের জন্য বিএনপির ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে হাসির উদ্রেককারী মন্তব্য করেছেন এক এমপি। সড়ক ব্যবস্থা নির্বিঘ্নতায় ব্যর্থ ওবায়দুল কাদেরের পদত্যাগের দাবি ওঠার পর সামঞ্জস্যহীন কথা বলার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। তার জীবন এখন সংকটময় অবস্থায়। কারাগারে নেয়ার সময় সম্পূর্ণ সুস্থ নেত্রী এখন হুইল চেয়ার ছেড়ে উঠতে পারছেন না। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে গেছে।

‘দেশনেত্রীর উপর ইনস্যুলিনের কার্যকারিতা অনেক কমে গেছে। দেশবাসী তার প্রাণ বাঁচাতে দ্রুত তার মুক্তি চায়। মুক্তি না দিলে জনগণ আর বসে থাকবে না। সরকারি ষড়যন্ত্র তছনছ করে দেবে।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, আমিনুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী উপস্থিত ছিলেন।