চিকিৎসা পেশা কিছু দুর্বৃত্তের কাছে বন্দী : হাইকোর্ট

কিছু দুর্বৃত্তের কাছে বন্দী হয়ে পড়েছে চিকিৎসা পেশা এমন মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, বিপদে পড়লে মানুষ তিন জনের কাছে যায়। পুলিশ, আইনজীবী ও ডাক্তার। এই তিনটা পেশা যদি ধ্বংস হয় তাহলে মানুষে কোথায় যাবে? ডাক্তারি একটি মহান পেশা। এই পেশাটি কতিপয় দুর্বৃত্তের কাছে বন্দী। কতিপয় দুর্বৃত্তের কারণে ডাক্তারির মতো মহান পেশা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

সোমবার চুয়াডাঙ্গার ইম্প্যাক্ট মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে চক্ষু শিবিরে চিকিৎসা নিতে আসা চোখ হারানো ২০ জনের ক্ষতিপূরণের রুল শুনানিতে ডাক্তারদের বিষয়ে এমন মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোর পাবলিক পারসেপশন ভালো না এবং ডাক্তারদের ব্যবহারও ভালো না বলে মন্তব্য করেন আদালত।

আদালত অবমাননা সংক্রান্ত এক মামলার শুনানিকালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের উপস্থিতিতে হাইকোর্টের বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট অমিত দাস গুপ্ত, সুভাষ চন্দ্র দাস ও মো. শাহিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। ইম্প্যাক্ট মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এম আমির উল ইসলাম।

এ সময় আদালত স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘ডাক্তারদের অবহেলা থাকলে তার যথাযথ শাস্তি হওয়া উচিত। কতিপয় দুর্বৃত্তের জন্য এই মহান পেশা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিছু দুর্বৃত্তের কাছে বন্দী হয়ে পড়েছে চিকিৎসা পেশা।’ চট্টগ্রামে ধর্মঘট ডাকা প্রসঙ্গে আদালত বলেন, ‘নিজেদের ভুল ঢাকার ধর্মঘটের ডাক দেওয়া আরো অন্যায়।’

আদালত বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর থাকতে র‌্যাবকে কেন অভিযান চালাতে হবে। তাহলে অধিদফতরের কাজ কী বলেও প্রশ্ন রাখেন আদালত।

এর আগে গত ৩ জুলাই চুয়াডাঙ্গা শহরের ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে চক্ষু শিবিরে চিকিৎসা নিতে এসে চোখ হারানো ২০ জনের প্রত্যেককে ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের রুলের জবাব না দেয়ায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ও চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জনকে ব্যাখ্যা দিতে তলব করেন হাইকোর্ট।

গত ২৯ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে ‘চক্ষু শিবিরে গিয়ে চোখ হারালেন ২০ জন!’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘চুয়াডাঙ্গার ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমুনিটি হেল্থ সেন্টারে তিনদিনের চক্ষু শিবিরের দ্বিতীয়দিন (৫ মার্চ) ২৪ জন নারী-পুরুষের চোখের ছানি অপারেশন করা হয়। অপারেশনের দায়িত্বে ছিলেন চিকিৎসক মোহাম্মদ শাহীন। এদের মধ্যে চারজন রোগী নিজেদের উদ্যোগে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত স্বজনদের নিয়ে ঢাকায় আসেন। পরে ইম্প্যাক্টের পক্ষ থেকে ১২ মার্চ একসঙ্গে ১৬ জন রোগীকে ঢাকায় নেয়া হয়। ততদিনে অনেক দেরি হয়ে যায়। ওই অপারেশনের ফলে এদের চোখের এত ভয়াবহ ক্ষতি হয় যে, ১৯ জনের একটি করে চোখ তুলে ফেলতে হয়।

পরে আইনজীবী অমিত দাসগুপ্ত প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনটি সংযুক্ত করে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় গত ১ এপ্রিল রিট দায়ের করেন। রিটের শুনানি নিয়ে চুয়াডাঙ্গা শহরের ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে চক্ষু শিবিরে চিকিৎসা নিতে এসে চোখ হারানো ২০ জনের প্রত্যেককে এক কোটি টাকা করে কেন ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

চার সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন, চুয়াডাঙ্গার ডিসি ও এসপি, ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টার, ডা. মোহাম্মদ শাহীনসহ মোট ১০ জন বিবাদীকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

আদালত পৃথক এক রুলে চুয়াডাঙ্গার ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে তিনদিনের চক্ষু শিবিরে চক্ষু চিকিৎসায় ২০ জনের চোখ অস্ত্রোপচারে কার্যকর, যথাযথ ও পর্যাপ্ত নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রহণে নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তাও জানতে চান। একইসঙ্গে ওই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং ডাক্তারের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা কেন গ্রহণ করা হবে না, তাও জানতে চেয়েছিলেন আদালত।